ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ফেরাতে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব তথ্যমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা ফেরাতে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব তথ্যমন্ত্রীর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের যাচাই সাপেক্ষে ফেরত নেয়ার প্রতিশ্রুতি মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি দেয়ার পর এই প্রস্তাব দেন ইনু। তিনি বুধবার সচিবালয়ে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, মিয়ানমার সরকার এবং সুচি, উনি কিন্তু বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় পথে বিষয়টাকে রাখতে চাচ্ছেন। বাংলাদেশের জন্য এটা মঙ্গলজনক নয়। এদিকে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাসদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থান মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর (কার্যত সরকার প্রধান) আউং সান সুচি স্বীকার করেছেন। এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সফলতা। এতে আমাদের রোহিঙ্গা ইস্যুকেন্দ্রিক সমস্যা সমাধানে অগ্রসর হওয়া সহজ হবে। দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমারের কয়েক লাখ শরণার্থীর ভার বহন করে আসছে বাংলাদেশ। এবার রাখাইনে সহিংসতার পর নতুন করে আরও ৪ লাখ যোগ হয়েছে। ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির পর মিয়ানমার সোয়া দুই লাখের মতো রোহিঙ্গাকে ফেরত নিয়েছিল। এরপর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আর আগে বাড়েনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সম্প্রতি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান বাংলাদেশ সবসময় দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সারতে চেয়েছিল, কিন্তু মিয়ানমারের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে, যারা মিয়ানমারে দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে গেছেন। রোহিঙ্গা সঙ্কটকে ‘আন্তর্জাতিক সমস্যা’ আখ্যায়িত করে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, যেহেতু আন্তর্জাতিক সমস্যা, সুতরাং দ্বিপক্ষীয় কোন সমাধান নয়। এই যে যাচাই-বাছাই করবেন। এখানে যাচাই-বাছাই কে করবেন? এখানে প্রত্যাবর্তন সমস্যাটা ত্রিপক্ষীয়ভাবে করতে হবে- বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও জাতিসংঘ। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ। ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় প্রত্যাবর্তন হবে, এই ব্যবস্থাপনায়ই তালিকা হবে, নাগরিকত্ব দেবে, ক্ষতিপূরণ দেবে ও পুনর্বাসন করবে। এ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (এটকো) এর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে কোন ধরনের উস্কানি না দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী। এ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (এটকো) এর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আরও বলেন, যারা সামরিক যুদ্ধের উস্কানি দিচ্ছে, তারা রোহিঙ্গাদেরও ক্ষতি করছে, বাংলাদেশেরও ক্ষতি করছে এবং অঞ্চলেরও ক্ষতি করছে। প্রতিবেশীর ভেতরেই সমস্যা হয়। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামেও সমস্যা হয়েছিল। বাংলাদেশের উদ্বাস্তু ভারতে গিয়েছিল। ভারত কিন্তু বাংলাদেশে আক্রমণ করেনি বা বাংলাদেশ ভারতকে আক্রমণ করেনি। কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে সমাধানে জোর দিয়ে তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বে আমি আরেকটি রাষ্ট্র দখল করে রাখতে পারব না। যুদ্ধ করে কিছু এলাকায় ঢুকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বসাইয়া দিয়ে আসি। আমার সেনাবাহিনী যখন চলে আসবে তখন আবার ওদের (রোহিঙ্গা) বের করে দেবে। এই জায়গাটা আমি কীভাবে হ্যান্ডেল করব- সেই মুনশিয়ানাটা, সেই কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করতে হবে। মিয়ানমারের ভেতরে যেমন, তেমনি বাংলাদেশের মধ্যেও উস্কানি রয়েছে দাবি করে ইনু বলেন, মাথা ঠা-া রাখতে হবে। সেজন্য বারবার আমরা বলছি, সামরিক সমাধান নয়। কূটনৈতিক তৎপরতা, গণমাধ্যমের ভূমিকা ও শেখ হাসিনার শান্তির উদ্যোগ ত্রিমুখী উদ্যোগ। এদিকে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লবে জাসদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থান মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর (কার্যত সরকারপ্রধান) আউং সান সুচি স্বীকার করেছেন। এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সফলতা। এতে আমাদের রোহিঙ্গা ইস্যুকেন্দ্রিক সমস্যা সমাধানে অগ্রসর হওয়া সহজ হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাকেন্দ্রিক সমস্যা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এই সমস্যা সমাধান করতেই হবে। কোন অযুহাত চলবে না। আন্তর্জাতিক মহলও এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে। সুচির বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় মনে করলেও ইনু বলেন, এতে অন্তত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার স্বীকৃতি মিলেছে। এটা একটা বিশাল অগ্রগতি। তার মানে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ ত্রিমুখী ভূমিকার কারণে সুচি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে নিয়েছে। এই জায়গাটাকে আমি প্রাথমিক অর্জন হয়েছে বলব। রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার প্রেক্ষাপটে এবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে না গিয়ে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর সুচি। ভাষণে তিনি রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেননি, রোহিঙ্গা শব্দটিই এড়িয়ে গেছেন তিনি। রাখাইনে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানালেও সেনাবাহিনীর অপরাধ নিয়ে কিছু বলেননি।
×