ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ -স্বদেশ রায়

সুচি এ মুহূর্তে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নিন্দিত। তার পরেও কোফি আনান কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার ইতিহাস যারা জানেন, যারা কোফি আনান কমিশনের রিপোর্টটি ভালভাবে পড়েছেন- তারা মনে হয় সুচির ওপর অতটা ক্রুদ্ধ হবেন না। সুচি মিয়ানমারে ডি ফ্যাক্টো নেতা বটে তবে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতার বাইরে সুচির হাতে ক্ষমতা খুব বেশি নেই। অন্যদিকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো মিয়ানমারের মানুষের মেন্টাল ডেমোগ্রাফি বদলে গেছে। যার একটা উদাহরণ নব্বইয়ের দশকে মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিল প্রগ্রেসিভ ছাত্ররা, আর জিরো দশকে যেটা হয় তার নেতৃত্বে বৌদ্ধভিক্ষুরা। এর থেকে বোঝা যায় রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে প্রগতিশীল মানুষের যে ক্ষমতা সুচির ছিল তা কতটা কমে গেছে। তবে তার পরেও কোফি আনান কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ও আনান কমিশনের রিপোর্ট বলে সীমাবদ্ধতার ভেতর থেকেও সুচি চেষ্টা করেছিলেন রাখাইন প্রদেশের জাতিগত সমস্যার সমাধান করতে। সুচির সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। সুচি এখন ব্যর্থ এবং নিন্দিত মানুষ। এর সব থেকে বড় কারণ সুচির দীর্র্র্ঘ নীরবতা। সুচির নীরবতা এত দীর্ঘ না হলে হয়ত এতটা নিন্দিত তাঁকে হতে হতো না। যাহোক, কোন কোন রাজনীতিবিদকে মাঝে মাঝে এ নিন্দা কুড়াতে হয়। সুচি সেটি কুড়িয়েছেন। আশাহত করেছেন পৃথিবীর কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় মানুষকে। সুচি তাঁর নীরবতা ভেঙ্গেছেন, কৌশলে কিছু কথা বলেছেন। তবে এর পরেও কি সুচি পারবেন শেষ অবধি তাঁর যতটুকু ক্ষমতা আছে তা ধরে রাখতে! ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে যাচ্ছে তাতে সুচির ক্ষমতা ধরে রাখা এখন বেশ অসম্ভব হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর যারা শান্তিপ্রিয় মানুষ, যারা হত্যা, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণের মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে দেশ ছাড়া করার রিরোধী, গৃহহীন মানুষের ব্যথায় যারা ব্যথিত হন, তারা এখনও চাইবে মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতায় সুচিই থাকুন এবং তিনি আরও শক্তিশালী হোন। কারণ, মিয়ানমারের জাতিগত সমস্যার সমাধান করার জন্য যতটুকু যা করার তা একমাত্র সুচির নেতৃত্ব ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে কি? আর এ মুহূর্তে তাঁর বিকল্প নেই। অনেকে আমার এ লেখায় আবেগের বশবর্তী হয়ে অখুশি হতে পারেন, তার পরেও বলছি কোফি আনান কমিশনের রিপোর্ট শুধু নয়, গত প্রায় চার দশক ধরে কম-বেশি অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি লক্ষ্য করে আসছি। তাদের অতীতের ও বর্তমানের সামাজিক পরিবর্তন বিভিন্ন মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করি। সেই ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে বলব, কোন সমস্যার সমাধান করতে হলে টেবিলের দুই পাশে দুটি দলকে বসতে হয়। তাই মিয়ানমারের পাশ থেকে যদি সুচি সরে যান তাহলে আলোচনা নিষ্ফল হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। এ সত্য সকলকে মানতে হবে। নিন্দা ও আবেগ শেষ নয়, শেষ হলো সমাধান ও সাফল্য। প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে। সাত লাখ মানুষ রিফিউজি হয়ে কোন দেশে পড়ে থাকবে চিরকালের জন্য, এ তো হতে পারে না। আর বাস্তবতা কি? বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ। সতেরো কোটি জনগোষ্ঠীর ভারে ভারাক্রান্ত। এ দেশের আর যাই হোক ৭ লাখ মানুষকে বছরের পর বছর খাওয়ানোর মতো শক্তি নেই। পৃথিবীর এক কোনায় চিকিৎসা বঞ্চিত, শিক্ষা বঞ্চিত, সাত লাখ মানুষ পড়ে থাকবে, এ কখনই মেনে নেয়া যায় না। তাই এই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ কারণে মিয়ানমারের পক্ষে যাতে কোন সামরিক জান্তা না থেকে সুচিই থাকেন, সেটা মন্দের ভাল। এই দিকটি এখন সবাইকে দেখতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কোন পথ নেই। এ কারণে আলোচনার অপর পক্ষ যাতে সামরিক জান্তা না হয়ে সুচি থাকেন, এ বিষয়টি এ মুহূর্তে গোটা বিশ্বকে নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মিয়ানমারের এই মানবতাবিরোধী অপারেশনের পেছনে শুধু জাতিগত সংঘাত নয়, বিশাল অর্থনীতি কাজ করছে। এই অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তি আমেরিকা। আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করে যে শক্তি মাথা উঁচু করছে সেই চীন আর এর সঙ্গে ভারত, রাশিয়া ও পাকিস্তান। এই বিশাল বিশ্ব পরাশক্তি ও আঞ্চলিক পরাশক্তি বিষয়ক আলোচনায় যাওয়ার আগে এটা পরিষ্কার হওয়া দরকার, মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো ছাড়া বিকল্প কি আছে? বিকল্প কী হতে পারে? বিকল্প কি নব্বইয়ের দশকে ভুটান যেভাবে তার দেশের নেপালী ভাষাভাষী হিন্দুদের নেপালে তাড়িয়ে দিয়েছিল আর নেপাল তাদের গ্রহণ করে; রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে কি তাই হবে? অর্থাৎ তারা মুসলিম, বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ বলে তাদের এখানে তাড়িয়ে দেয়া হবে। বাংলাদেশকে তা মেনে নিতে হবে? গত কয়েকদিনে এক মাত্র সরকারপ্রধান ছাড়া সরকারের অনেক বড় বড় অবস্থানের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তারা এ মুহূর্তে বুঝে উঠতে পারছেন না আসলে রোহিঙ্গা সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যেতে পারে। হতাশা থেকে এমনও অনেকে বলছেন, পনেরোটি মুসলিম দেশ আছে– সবাই পঞ্চাশ হাজার করে ভাগ করে নিলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এখানে স্বাভাবিক দুটি বিষয় সামনে আসে। এ ধরনের সমাধান পৃথিবীর জন্য একটি খারাপ উদাহরণ হবে। তখন যে কেউ যে কোন অজুহাতে কোন জনগোষ্ঠীকে তার দেশ থেকে বের করে দিতে পারবে। এ ধরনের কোন পথে যাওয়া যায় না। আরও একটি নির্মম সত্য বলতে হয়, মুসলিম দেশগুলোর অন্য দেশের নিপীড়িত মুসলিমদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা করার ঐতিহ্য খুবই কম। যেমন, রোহিঙ্গারা এখানে আছে প্রায় তিন সপ্তাহের বেশি। কোন মুসলিম দেশই বড় মাপের কোন সাহায্য পাঠায়নি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ইরাক সামান্য কিছু সাহায্য দিয়েছিল। এ ছাড়া কোন মুসলিম দেশ কোন সাহায্য দেয়নি। এই যে সৌদি আরবের এত অর্থ, ইউরোপের নানা দেশে এখন মুসলিম শরণার্থীরা ছড়িয়ে পড়েছে, তারা সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। একজন বালক বা বালিকাকেও কঠোর পরিশ্রম করে বাঁচতে হচ্ছে। সৌদি আরর তাদের জন্য কোন সাহায্য পাঠায়নি। অথচ ট্রাম্পের সৌদি সফরকালে সৌদি আরব আমেরিকা থেকে যে অস্ত্র কেনার চুক্তি করেছে, ওই অস্ত্রের মূল্যের এক শ’ ভাগের এক ভাগ অর্থ দিলে ইউরোপে পাড়ি দেয়া মুসলিম শরণার্থীরা অনেক ভাল থাকতে পারতেন। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, মুসলিম দেশগুলো রোহিঙ্গাদের ভাগ করে নেবে, এ চিন্তা অবাস্তব। আবার মুসলিম দেশগুলো রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার জন্য বড় কোন সাহায্য-সহযোগিতা করবে, এটাও আশা করা যায় না। ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। ভারত শুধুমাত্র বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বের স্বার্থে কিছু সহযোগিতা করবে। চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারকে সমর্থন করেছে। তাই তাদের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাওয়া যাবে না। এর থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে এক পর্যায়ে বাংলাদেশকে একাই বহন করতে হবে। এর বিপরীতে একমাত্র ভরসা শেখ হাসিনার কূটনীতি। যেমন, ভারত ও মিয়ানমারের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ভারতের দুটি হেভি ইন্ডাস্ট্রি মিয়ানমারে অস্ত্র তৈরি করে। মিয়ানমারে শুধু দুটি প্রকল্পেই ভারতের বিনিয়োগ আছে ৮ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া মিয়ানমার যখন ইরোপীয় নিষেধাজ্ঞার ভেতর ছিল ওই সময়ে চীনের পাশাপাশি ভারতও মিয়ানমারকে তাদের ব্যবসার একটি স্থান হিসেবে বেছে নেয়। ভারত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে চীনের ধারে কাছে যেতে পারে না মিয়ানমারে। তবে অস্ত্র বিক্রিতে মোটামুটি একটি অবস্থানে যায়। এ ছাড়া সিটওয়ে পোর্টকে ঘিরে তাদের কালাডান মাল্টি প্রকল্প আছে। অন্যদিকে চীন ও ভারতের ভেতর স্যান্ডউইচ এই রাষ্ট্রটিকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে চীন। তাদের হাজার হাজার বিলিয়ন ডলার ব্যবসা ও বিনিয়োগ সেখানে। রাখাইন প্রদেশে সিটওয়ে ঘিরে রয়েছে তাদের একাধিক সেফ ইকোনমি জোন। সিটওয়ে বন্দরের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে আধিপত্যর দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়াও তেল-গ্যাসে ওই বন্দরকে কাজে লাগানোও চীনের লক্ষ্য। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের তেল ও গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহের দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি হয়েছে। তার একটি অংশ ব্যবহার হবে মিয়ানমারে। সেখানে সিটওয়ে বন্দর অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। অন্যদিকে মিয়ানমারে গণতন্ত্র আসার পরেই সেখানে প্রথমে আসেন হিলারি। আমেরিকার বড় কোম্পানিগুলো আসছে সেখানে তেল-গ্যাসের কাজে। তাই আমেরিকাকেও পাশে পেয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। সকলের যেখানে এই ব্যবসায়িক স্বার্থ, আর পৃথিবীর বড় বড় দেশের অর্থনীতি যে মুহূর্তে ক্রোনি ক্যাপিটালিজমকে মেনে নিয়েছে- এই সময়ে মিয়ানমার স্বাভাবিকভাবেই এই দেশগুলোকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাশে পাবে। শুধু তাই নয়, কেউ যদি মনে করেন মিয়ানমারের এই অপারেশন মূলত চীনের প্রক্সি অপারেশন যা মিয়ানমারের মাধ্যমে করানো হচ্ছে, তাও খুব বেশি অসত্য নয়। অন্যদিকে চীন ও আমেরিকার হয়ে সিটওয়ে বন্দরকে মুসলিম জনগোষ্ঠী মুক্ত করতে সাহায্য করছে পাকিস্তান। রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মিকে অর্থ দিচ্ছে সৌদি ও পাকিস্তান। ট্রেনিং দিচ্ছে পাকিস্তান। তাই কোফি আনান কমিশনের রিপোর্ট জমা দেয়ার কয়েকদিনের ভেতর রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির মিয়ানমারের পুলিশ ও আর্মি চৌকিতে হামলার পেছনে চীন ও পাকিস্তানের কোন ষড়যন্ত্র আছে কিনা, সেটা ভেবে দেখা দরকার। কারণ, সুচি যদি সমস্যার সমাধান না চাইতেন তাহলে তিনি তার সরকারের মন্ত্রীদের সদস্য করে এবং কোফি আনানকে প্রধান করে ওই কমিশন করতেন না। কমিশনের রিপোর্ট খুবই সাবধানী রিপোর্ট। পাশাপাশি একটি জনগোষ্ঠীকে কীভাবে তাদের স্থায়ী সমস্যা থেকে বের করে আনা যায় ও স্থায়ীভাবে তাদের এগিয়ে নেয়া যায় তার পুঙ্খানুপুঙ্খ কারণ বের করে সমাধানও সেখানে বলা হয়েছে। রিপোর্টটির ডিটেইলস আলোচনা করতে গেলে এ লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে, তাই রিপোর্টের আলোচনায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যাহোক, সুচি এই রিপোর্ট করালেন, কোফি আনানও রিপোর্ট জমা দিলেনÑআর জমা দেয়ার কয়েক দিনের ভেতর কেনই বা সামরিক চৌকি ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা হলো? আর কেন এই মানবতাবিরোধী মিলিটারি অপারেশন? এখানে কি চীন ও পাকিস্তান একযোগে কাজ করেছে? তাই ঘটনার পেছনে যেখানে প্রায় গোটা পৃথিবীর অর্থনৈতিক সুবিধা জড়িত, সেখানে পথ চলা অনেক কঠিন। তার পরেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ দায় কাঁধে নিয়েছেন। কাঁধে নিয়ে তিনি একটি সমাধান ইতোমধ্যে বলেছেন, রাখাইনে সেফ জোন তৈরি করে অবিলম্বে ফেরত নিতে হবে রোহিঙ্গাদের। ফিলিস্তিনীর সেফ জোনের অভিজ্ঞতা খুব ভাল নয়। তার পরেও মন্দের ভাল তো! সেই পথেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে হাঁটতে হবে। এখানে তারও হাতে অস্ত্র আছে। চীন ও ভারতের মধ্যে স্যান্ডউইচ দেশ মিয়ানমার অর্থনৈতিকভাবে ওই দুই দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আবার ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড, সামুদ্রিক সিল্ক রুট সব কিছুতেই চীনের কাছে বাংলাদেশও গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি মিয়ানমারের থেকে বাংলাদেশ এক দিক থেকে চীনের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে। বাংলাদেশে দক্ষ জনশক্তি আছে। অন্যদিকে ভারত যাই বিনিয়োগ করুক মিয়ানমারে আর ব্যবসা করুকÑদুটি দিকে বাংলাদেশ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এক. কালাডান মাল্টি প্রকল্প কখনই ভারতের জন্য সুবিধাজনক নয়, বরং সিটওয়ের থেকে শতভাগ সুবিধাজনক চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর। এর ভেতর সেভেন সিস্টারের জন্য কালাডান প্রকল্পের থেকে চট্টগ্রাম অনেক বেশি সুবিধাজনক। বাস্তবে কালাডান প্রকল্প সফল হওয়া সম্ভব নয়। দুই, চীন যেমন নিত্যপণ্যের বাজার দখল করেছে মিয়ানমারে, তেমনি ভারত দখল করেছে বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের বাজার। এই দুই দেশের স্বার্থ তাই মিয়ানমারের থেকে বাংলাদেশেও কম নয়। শেখ হাসিনা অনেক বড় কূটনীতিক। তিনি তার তথাকথিত প্রফেশনাল কূটনীতিকদের ওপর ভরসা না করে নিজেই চীন ও ভারতকে কনভিন্স করার পথে এগুবেন, এটা বোঝা যাচ্ছে। সে পথে এগিয়ে প্রথমে নিজ ঘরে ফেরা না হোক, রোহিঙ্গাদের যদি রাখাইনে সেফ জোনে পাঠাতে পারেন শেখ হাসিনা, তাহলে সেটাই হবে তার সব থেকে বড় কূটনৈতিক সাফল্য। রোহিঙ্গাদের এই সেফ জোনে পাঠানোর পরেই বিশ্ব নেতৃত্বের দায়িত্ব ধীরে ধীরে কোফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করা। আপাতত এই পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত ও ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের যুগে এভাবে ধাপে ধাপে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান ছাড়া অন্য কোন পথ দেখা যাচ্ছে না। তবে এটা বাস্তবায়িত করতে হলে টেবিলের ওপাশে সুচিকেই প্রয়োজন, কোন সামরিক জেনারেলকে নয়। [email protected]
×