ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চালের দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে ॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চালের দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে ॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দফায় দফায় বাড়ার কারণে দেশের চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, চালের দাম বর্তমানে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। চলতি সপ্তাহে এক লাফে সব চালের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। চালের দাম দেশের ইতিহাসের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় দিশেহারা সাধারণ মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষ অনাহার-অর্ধাহারে থেকে তাদের আসন্ন দিনগুলো নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ৭৪-এর ন্যায় ভয়াল দুর্ভিক্ষ চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে। আর এজন্য সরকারই দায়ী। রিজভী বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৫৫ টাকা, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। অথচ বিএনপির শাসনকালের শেষ দিনেও মোটা চালের দাম ছিল ষোল টাকা। বর্তমানে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন মধ্যবিত্ত, দিনমজুর, শ্রমিক তথা খেটে খাওয়া মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সরকারের তরফে মজুদদারি ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণার পর গত দু’দিনে আরও বেড়েছে চালের দাম। বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর দেশের বিভিন্নস্থানে যে অভিযান চলছে তা নিষ্ফল অভিযানে পরিণত হয়েছে। কোথাও তারা অবৈধ চালের সন্ধান পায়নি। বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে সরকারী গোডাউন খালি, বেসরকারীভাবেও চালের তেমন মজুদ নেই। তারপরও প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন কোটি কোটি টন চালের মজুদ আছে। তাহলে চালের বাজারের অস্থিরতা কমছে না কেন? সরকার মিথ্যাচার করে দেশবাসীর ক্ষুধা ও ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশে যে খাদ্য সঙ্কট চলছে তা আড়াল করা যাবে না। রিজভী বলেন, চালের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। সংস্থাটি বলেছে, গত তিন মাসে দেশে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এই সময়ে দেশে খাদ্যের দাম, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও খাদ্যের মান, এই তিন ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অবিলম্বে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং চালের সরবরাহ বৃদ্ধির জোর দাবি জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের মানুষসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত হলেও বর্তমান সরকার নির্বিকার। তারা শুধুমাত্র বিরোধী দল নিধনেই সদাতৎপর। তাদের ভাবখানা এরকম যেন না খেয়ে মানুষ মারা গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, বেপরোয়া লুটপাট, দখল ও চাঁদাবাজিতে রাষ্ট্র ও সমাজে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। তাদের বিশৃঙ্খল অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আজ চরম ঝুঁকিতে। চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই বলেই মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। রিজভী বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও বর্বর নির্যাতনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়লেও সরকার এখনও কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে খাদ্য নেই, খাবার পানি নেই, আহত-গুলিবিদ্ধ ও অসুস্থ নারী-পুরুষ-শিশুরা খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গাদের শরীর পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা খাবার ও পানির সঙ্কটে ছটফট করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে শুরু থেকেই সরকারের বাধা উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। দুর্গাপূজার প্রাক্কালে দেশব্যাপী বিভিন্ন পূজা মন্ডপে প্রতিমা ভাঙ্গার ঘটনা ঘটছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, মানিকগঞ্জে ১৫টি, নাটোরে ১৮টি এবং সাতক্ষীরা ও নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজাম-পে ভাংচুর করা হয়েছে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর আগে দুপুরে জজকোর্ট প্রাঙ্গণে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতি আয়োজিত মানববন্ধনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন চাল কিনে ঘাতকদের উৎসাহিত করছে সরকার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বরতা চলছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। সেখানে বিচিত্র রকমের হত্যাযজ্ঞ চলছে। রিজভী বলেন, নাফ নদীর পানিতে আজ পানির রং নেই। নাফের পানি আজ রোহিঙ্গাদের রক্তের রং। আর সেই রক্তের ওপর দিয়ে লজ্জাজনকভাবে মিয়ানমার থেকে ১ লাখ টন চাল আমদানি করছে সরকার। সরকারের এ আচরণে ঘাতকরা উৎসাহ পাচ্ছে ও আরও নৃশংস হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতেই হবে। তাদের জানমালের নিরাপত্তা দিয়েই ফিরিয়ে নিতে হবে। দেশে চালের সঙ্কট চলছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, সরকারের গোডাউনে চাল যেখানে মজুদ থাকার কথা সাত থেকে আট লাখ টন সেখানে গোডাউন ফাঁকা। চালের বদলে ইঁদুর ঘোরাঘুরি করছে। যা থাকার কথা তা নেই। সরকারী স্টেটমেন্টই বলেছে আড়াই থেকে তিন লাখ টন মজুদ আছে। চালের এই সঙ্কটকালে সরকারের প্রাণের বন্ধু ভারত কোথায়? রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনীতি হবেই- খসরু রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনীতি হবেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু একটি বড় রাজনৈতিক বিষয়। এটা নিয়ে রাজনীতি হবেই। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরাম’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। আমির খসরু বলেন, সরকার মানবতা বা নৈতিক কারণে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ায়নি, রাজনৈতিক কারণে সরকার রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখনই প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের দেখতে গিয়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট নয়। মিয়ানমার সরকার যখন রোহিঙ্গাদের গণহত্যা শুরু করে তখন তারা সীমান্ত পেয়িয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাংলাদেশ সরকার বাধা দেয়। এর ফলে নৌকা ডুবে অনেক রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটে। এরপর বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার যৌথ অভিযানের কথা বলল। এই যৌথ অভিযান কার বিরুদ্ধে ছিল? সরকারকে উদ্দেশ করে খসরু বলেন, বিএনপিকে ত্রাণ দিতে বাধা, মিটিং, মিছিল, সমাবেশে বাধা দিতে পারবেন জনগণকে ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখতে পারবেন না।
×