ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন হচ্ছে

জঙ্গীরা পরিবার ও স্বজনদের কাছেও ঘৃণিত

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জঙ্গীরা পরিবার ও স্বজনদের কাছেও ঘৃণিত

শংকর কুমার দে ॥ ছি: ছি: সন্তান জঙ্গী! লোকলজ্জা, ঘৃণা, বিদ্বেষ, নিন্দা, ধিক্কার, ভয়ে জঙ্গীর লাশ গ্রহণ করছে না তাদের পরিবার ও স্বজনরা। গত দুই দিনে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে জঙ্গী, স্ত্রী, সন্তানসহ ৯ জনের লাশ। এক দিকে পরিবার ও স্বজনরা তাদের লাশ নিচ্ছে না। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে তাদের লাশ রাখতে চাচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষের জন্য উভয় সঙ্কট। শেষ পর্যন্ত আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করাই হচ্ছে শেষ গন্তব্য ও ঠিকানা। গত দুই বছরে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নিহত জঙ্গী, জঙ্গীর স্ত্রী, সন্তানসহ ৮০ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেওয়ারিশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে মিরপুরের মাজার রোডে নিহত আবদুল্লাহসহ ৭ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। এর আগের দিন সোমবারও দুই জঙ্গীর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে জুরাইন কবরস্থানে। র‌্যাব ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর মিরপুর মাজার রোডে ‘জঙ্গী আস্তানায়’ অভিযানের সময় আত্মঘাতী হয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জঙ্গী আবদুল্লাহসহ নিহত ৭ জনের লাশ মঙ্গলবার আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বেওয়ারিশ হিসেবে তাদের লাশ দাফন করা হয় জুরাইন কবরস্থানে। আত্মঘাতী হয়ে নিহতরা হচ্ছেনÑ আবদুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান ওসামা ও ওমর। এই ৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও অপর দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। অপর নিহত দুইজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। র‌্যাব সূত্র জানান, নিহত আবদুল্লাহ ও তার পরিবারের লাশ নিতে রাজি হননি তার ভাই ও স্বজনরা। মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে র‌্যাব ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গ থেকে লাশগুলো আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় নিহত সন্দেহভাজন দুই জঙ্গীর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের জন্য সোমবার আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবার ও স্বজনরা গ্রহণ না করায় অজ্ঞাতনামা লাশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দফান করা হয়েছে। বিমানবন্দরে নিহত অজ্ঞাতনামা বাইশ বছরের যুবকের লাশটি পরিবার ও স্বজনের কাছে হস্তান্তরের জন্য হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয় প্রায় সাত মাস। কিন্তু লাশটির শনাক্ত করার জন্যই পরিবার বা স্বজনদের কেউই আসল না। আর সাইফুল ইসলামের পরিচয় পেয়ে যোগাযোগ করা হলেও পরিবার ও স্বজনরা কেউই না গ্রহণ করায় প্রায় দেড় মাস পরে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হলো। ঢামেক হাসপাতালের মর্গে উপস্থিত পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার ও সোমবার এই দুই দিনে ৯ জঙ্গীর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের জন্য আঞ্জুমানে দিয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মর্গে থাকা লাশগুলো হস্তান্তর করা হয়। এরপর আঞ্জুমান জুরাইন কবরস্থানে দাফনের জন্য লাশ দুটি নিয়ে যায় জুরাইন কবরস্থানে দাফনের উদ্দেশে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, নিহত হওয়ার পরও তারা এতই ঘৃণিত যে, পরিবার পরিজন গ্রহণ করছেন না, বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তার অভিমত, এই তো জঙ্গী হওয়ার ভাগ্য, জঙ্গী জীবন!
×