বুড়ো বয়সে ভেলকি! চলতি বছরেই একত্রিশে পা দিয়েছেন রাফায়েল নাদাল। অন্যদিকে গত মাসেই ছত্রিশতম জন্মদিনের কেক কেটেছেন রজার ফেদেরার। তবে বয়সকে দুজনেই বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে টেনিস কোর্টে রাজত্ব করছেন তারা। চলতি মৌসুমে তাদের পারফরমেন্সই তার বড় প্রমাণ। বছরের চার গ্র্যান্ডসøামের সবকটিই ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তারা।
দুজনেই টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি। অসাধারণ সব পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে নিজেদের নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। তবে টেনিস কোর্টে গত কয়েকটা বছর খুব বাজেভাবে কেটেছে তাদের। ইনজুরি আর ফর্মহীনতায় ভুগেছেন দুজনেই। কিন্তু কাকতালীয়ভাবেই দোর্দ-প্রতাপে টেনিস কোর্টে ফেরেন নাদাল-ফেদেরার। শুরুটা করেন মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন দিয়ে। দু’জনেই মৌসুমের প্রথম মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নেন। তবে শেষের হাসিটা ফুটে রজার ফেদেরারের মুখেই। প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হওয়া রাফায়েল নাদাল স্বরূপে ফিরেন দ্বিতীয়টিতেই। সুইজারল্যান্ডের স্টানিসøাস ওয়ারিঙ্কাকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন স্পেনের এই টেনিস তারকা। সেই সঙ্গে টেনিসের ওপেন যুগে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ফ্রেঞ্চ ওপেনের দশম শিরোপা জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন নাদাল। এরপরেই উইম্বলডন। এখানে আবার বাজিমাত করেন ফেদেরার। মারিন চিলিচকে পরাজিত করে ক্যারিয়ারের ১৯তম গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পান তিনি। গ্রেটরা ফুরিয়ে যায় না কখনও, তার উদাহরণই রচনা করলেন টেনিস সম্রাট সুইজারল্যান্ডের ফেদেরার। উইম্বলডন ওপেনের অষ্টম শিরোপা উঁচিয়ে ধরার দিনে পাত্তাই পাননি ক্রোয়েশিয়ার মারিন চিলিচ টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই অপ্রতিরোধ্য কিং ফেদেরার ফাইনালে জিতেছেন দাপটের সঙ্গে। সরাসরি সেটে ৬-৩ ৬-১ ও ৬-৪ গেমে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে জিতলেন ৮ম উইম্বলডন ওপেন ও ১৯তম গ্র্যান্ডসøাম। আর বুঝিয়ে দিলেন কেন তাকে উইম্বলডন বস বলা হয়।
এরপর মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনের গল্প। টেনিসের দুই মহারথী ফেদেরার আর নাদাল কোর্টে মুখোমুখি হয়েছেন ৩৭ বার। বিশ্ব টেনিসে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে অন্যতম সেরা এক দ্বৈরথ: ম্যাচের সংখ্যাটা কিন্তু সেটাই বলে। অথচ দু’জনের দ্বৈরথে একবারের জন্যও সাক্ষী হতে পারেনি ফ্ল্যাশিং মিডো। গ্র্যান্ডসøামে যে ১২ বার মুখোমুখি হয়েছেন ফেদেরার-নাদাল, এর একটিও মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডসøাম ইউএস ওপেনে নয়। এবার অপূর্ণতা ঘোচানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল আসরটি। কিন্তু একেবারে শেষ ধাপে এসে ফেদেরার ছিটকে যাওয়ায় সেটা আর হয়নি। ২০০৯ সালে ইউএস ওপেনের ফাইনালিস্ট দেল পোত্রো এবার অবিশ্বাস্যভাবে হারিয়ে দেন হট ফেভারিট ফেদেরারকে। ফেদেরারের বিদায়ে হৃদয় ভেঙেছে অনেক টেনিসপ্রেমীর। ভেঙেছে নাদালেরও। এ প্রসঙ্গে নাদাল বলেন, ‘আমরা এখানে মুখোমুখি হইনি, এটা বিস্ময়কর। আমরা বিশ্বের সব গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টেই লড়েছি। আমরা এটা মিস করছি।‘ তবে ফেদেরার ছিটকে গেলেও নাদাল শিরোপা জিতেই থেমেছেন। ফাইনালে ‘নবাগত’ কেভিন এ্যান্ডারসনকে হারিয়ে দিতে আড়াই ঘণ্টাও লাগেনি নাদালের। জিতেছেন, ৬-৩, ৬-৩, ৬-৪ গেমে। ফ্লাশিং মিডোয় এই জয়ে নাদালের গ্র্যান্ডসøাম শিরোপা হলো ১৬টি। ১৯টি শিরোপা নিয়ে তাঁর সামনে এখন শুধুই রজার ফেদেরার। শিরোপা জয়ের পর নাদাল বলেন, ‘খেলার ফল বিচার করলে এটি অবশ্যই আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মৌসুম। শিরোপা জয়ের ধারায় ফিরেছি। তিনটি গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনাল খেলেছি। এটা অনেক কিছু। আরেকটি গ্র্যান্ডসøাম যেখানে ফাইনাল খেলা হয়নি, হেরে গিয়েছিলাম চতুর্থ রাউন্ডেই।