ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন এমপি

ভিক্ষুক মায়ের তিন পুলিশ পুত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ভিক্ষুক মায়ের তিন পুলিশ পুত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত তিন পুত্র ও শিক্ষিকা মেয়ের অবহেলায় ভিক্ষার পথ বেছে নেয়া সত্তরোর্ধ্ব অসুস্থ মা মনোয়ারা বেগমকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বরিশাল-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতানের উদ্যোগে সোমবার সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাংসদ অসহায় ওই মায়ের চিকিৎসাসহ যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন। বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপক কুমার রায় জানান, সংসদ সদস্যর নির্দেশনা পেয়ে তিনি অসুস্থ মনোয়ারা বেগমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। পাশাপাশি বৃদ্ধা মায়ের প্রতি অবহেলার কারণে তার দুইজন পুলিশ অফিসার ও একজন পুলিশ সদস্য পুত্র এবং শিক্ষিকা মেয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বরিশাল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের সঙ্গে মঙ্গলবার সকালে যোগাযোগ করেছেন সংসদ সদস্য টিপু সুলতান। ইতোমধ্যে ভিক্ষুক মনোয়ারা বেগমের মেয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ভূতেরদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মরিয়ম সুলতানাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোকজ করা হয়েছে। সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান বলেন, দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে সোমবার এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর মুহূর্তের মধ্যে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর আমি খুবই ব্যথিত হয়েছি। তাই তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে অসুস্থ মনোয়ারা বেগমকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছি। তার উন্নত চিকিৎসাসহ সমস্ত ব্যয়ভার আমি বহন করব। তিনি আরও বলেন, বৃদ্ধা মায়ের প্রতি অবহেলার কারণে পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত তিন পুত্র এবং শিক্ষিকা মেয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বরিশাল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলেছি। শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক এসএম সিরাজুল ইসলাম জানান, অসুস্থ মনোয়ারা বেগম পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। এছাড়া তার এক পায়ে ফ্যাকচার রয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। মনোয়ারা বেগমের পুত্র ইজিবাইক চালক গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি সামান্য আয়ের মানুষ। টাকার অভাবে মায়ের ভাল চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমার তিন ভাই পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করছেন। তারা তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অন্যত্র থাকেন। তাদের বলেছি মায়ের ভরণপোষণের জন্য। তবে তারা মায়ের দিকে ফিরেও তাকায়নি। বিষয়টি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল। তাতেও কোন কাজ হয়নি। বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের মৃত আইউব আলী সরদারের সত্তরোর্ধ্ব স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। তার ছয় সন্তানের মধ্যে পুত্র ফারুক হোসেন ও নেছার উদ্দিন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), একপুত্র জসিম উদ্দিন পুলিশ সদস্য। অন্য দুই পুত্র শাহাবউদ্দিন ব্যবসা এবং গিয়াস উদ্দিন ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। মনোয়ারা বেগমের একমাত্র মেয়ে মরিয়ম সুলতানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে মনোয়ারা বেগমের আরাম-আয়েশে দিন কাটানোর কথা থাকলেও ছেলেমেয়েদের অবহেলার কারণে দুইমুঠো অন্য যোগাতে ভিক্ষা করতে হয় বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমকে। একদিন ভিক্ষা না করলে তার ভাগ্যে খাবার জোটে না।
×