ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৩৬ পৌরসভার উন্নয়নে এডিবি দিচ্ছে ২০ কোটি ডলার

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

৩৬ পৌরসভার উন্নয়নে এডিবি দিচ্ছে ২০ কোটি ডলার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের ৩৬টি পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন, নাগরিক সেবার মান বাড়ানো ও সুশাসন জোরদারে ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশী মুদ্রায় পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসেবে)। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি ঋণচুক্তি সই হয়েছে। সরকারের পক্ষে ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম এবং এডিবির পক্ষে সংস্থাটির বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজুহিকো হিগুচি ঋণচুক্তিতে সই করেন। এ সময় সরকার ও এডিবির সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় তৃতীয় নগর সুশাসন ও অবকাঠামো উন্নয়ন (সেক্টর) প্রকল্পের আওতায় এই ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এডিবি। ৩১টি পৌরসভায় এ প্রকল্পের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- মুক্তাগাছা, শেরপুর, রাজবাড়ী, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, কোটালীপাড়া, টুঙ্গীপাড়া, বেনাপোল, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, মেহেরপুর, চারঘাট, বেড়া, ঈশ্বরদী, শাহজাদপুর, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, লাকসাম, নবীনগর, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, লক্ষ্মীপুর, রাঙ্গামাটি, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ছাতক, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড়। এসব পৌরসভার সঙ্গে নতুন করে ৫টি পৌরসভা- কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও কুষ্টিয়া প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হবে। অনুষ্ঠানে ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, এর আগে প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের বাস্তবায়ন এখনও পর্যন্ত সন্তোষজনক। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি আদায়ের আশা করছি। এছাড়া বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্য ছাড়ের মাইলফলক অর্জনের ক্ষেত্রেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখন প্রকল্প সাহায্য সময়মতো ও যথাযথভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ ২০২৪ সালে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে উন্নয়ন সহযোগীদের, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের তরফে সহজ শর্তের ঋণ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজুহিকো হিগুচি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। কিন্তু দ্রুত নগরায়ণ সরকারের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৌরসভার অবকাঠামো ও নাগরিক সেবার মানোন্নয়নের মাধ্যমে প্রকল্পটি সরকারের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। জানা গেছে, তৃতীয় পর্যায়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর মধ্যে এডিবির মোট সহায়তার পরিামাণ ৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৪ সালে প্রথম কিস্তিতে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ দেয় সংস্থাটি। এবার দ্বিতীয় কিস্তিতে অবশিষ্ট ২০ কোটি ডলার দিচ্ছে। এছাড়া চলমান প্রকল্পের জন্য ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট দিচ্ছে ৪ কোটি ডলার। প্রকল্পের অবশিষ্ট ব্যয় সরকারের নিজস্ব তহবিল হতে দেয়া হবে। জানা গেছে, এডিবির দেয়া ২০ কোটি ডলারের ঋণ ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরে পরিশোধযোগ্য। এর মধ্যে ১০ কোটি ডলার সহজ শর্তের ওসিআর লোন। এই ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ। অবশিষ্ট ১০ কোটি ডলার অরডিনারি ক্যাপিটাল রিসোর্স (ওসিআর) ঋণের সুদের হার লাইবর ভিত্তিক হবে। এছাড়া শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ হারে ম্যাচুরিটি প্রিমিয়াম ও অব্যয়িত অর্থের ওপর শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট চার্জ প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ্য, এর আগে এডিবি প্রথম পর্বে (২০০৩-২০০৭) সালে ২৭টি পৌরসভায় ৬৫ মিলিয়ন ডলার ও দ্বিতীয় পর্বে (২০০৮-২০১৬) সালে ৫১ পৌরসভায় ৮৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। জানা গেছে, এডিবির এই সহায়তার ফলে চলমান প্রকল্পের আওতায় ৬০০ কিলোমিটার সড়ক ও ৩০০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ বা সংস্কার করা এবং পানি সরবরাহের জন্য ১৮০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। এছাড়া পৌরসভাগুলোতে করের হার বাড়ানো ও বিলিং সিস্টেমের কম্পিউটারাইজেশনে সম্পূর্ণতা আনা হবে। এতে করে দারিদ্র্য বিমোচন, লিঙ্গ বৈষম্য কমানো, কমিউনিটি অংশগ্রহণ এবং পৌর আর্থিক ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য সহায়ক হবে। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত।
×