ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

প্রোটিনের বাড়তি চাহিদা মেটাতে হলে

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রোটিনের বাড়তি চাহিদা মেটাতে হলে

এখন থেকে শুরু করে ২০৫০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা আজকের ৭৬০ কোটি থেকে এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৮০ কোটিতে দাঁড়াবে। এই বাড়তি মুখগুলোর জন্য খাবার দরকার। সেটা শুধু ভাত, গম, আলুর মতো প্রধান খাদ্য হলেই চলবে না। তাদের দরকার হবে প্রোটিন, বিশেষ করে মাংস ও মাছ। মানুষের হাতে যত পয়সা আসবে প্রোটিনের চাহিদাও ততই বাড়বে। দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা যায় যে শুধুমাত্র আগামী দশকে এশিয়ায় গরুর মাংস খাওয়া ৪৪ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খাওয়ার জন্য গবাদিপশু পালন ইতোমধ্যে বিশ্বের পরিবেশের ওপর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বিংশ শতকে খামারের পশুর সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। আজ এ মুহূর্তে বিশ্বে ২ হাজার কোটিরও বেশি মুরগি, ১৫০ কোটি গরু এবং এক শ’ কোটি ভেড়া জ্যান্ত আছে। এদের চারণের বা খাওয়ানোর কাজে বিশ্বের এক-চতুর্থাশ জমি ব্যবহৃত হচ্ছে। এরা বিশ্বে উৎপাদিত ফসলের ৩০ শতাংশ খেয়ে থাকে। এরা প্রচুর পানিও খাচ্ছে। এক কিলো গরুর মাংস উৎপাদনের জন্য প্রায় ১৫ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন হয়। অথচ এক কিলো গম বা ভুট্টা উৎপাদনের জন্য দরকার হয় মাত্র দেড় হাজার লিটার পানি। এদের মলমূত্র পরিবেশের ভাল তো কিছুই করে না বরং ক্ষতিই করে। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) হিসাব অনুযায়ী যাবতীয় প্রাণিজ গ্রীনহাউস গ্যাসের সাড়ে ১৪ শতাংশের জন্য দায়ী গবাদিপশু। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে এই পৃথিবী তথা এর পরিবেশকে টেকসই করে রাখা কিভাবে সম্ভব? এই সমস্যার একটা সমাধান হচ্ছে মানুষকে এ কথা বোঝানো যে তারা যেন খাবার প্লেটে শুধু প্রোটিন না নিয়ে রকমারি জিনিস রাখে। নিরামিষভোজী হতে পারলে এর চেয়ে ভাল ও সহজতম সমাধান আর হতে পারে না। আর প্রোটিন যদি খেতেই হয় তাহলে মাংসের বদলে মাছ খাওয়াই সর্বোত্তম। লোকে আজ যে পরিমাণ মাছ খাচ্ছে তা গোমাংস খাওয়াকে ছাড়িয়ে গেছে। লোকে যত মাছ খাচ্ছে তার অর্ধেকই হলো চাষের মাছ। মুক্ত জলাশয়ের মাছ তো প্রায় সাবাড় হওয়ার পথে। তদুপরি কিছু কিছু চাষের মাছ যেমন স্যামনকে সাগরে ধৃত অন্যান্য ছোট ছোট মাছও খাওয়ানো হয়। এভাবে মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য সম্পদ উজাড় করে ফেলা হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রোটিনের বিকল্প উৎস হিসেবে কীটপতঙ্গ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে কোন কোন মহল। এগুলোতে প্রোটিনের পরিমাণ গোমাংসের তুলনায় তিনগুণ বেশি। ইতোমধ্যে বিশ্বের ২ কোটি মানুষের ডায়েটের অভিভাজ্য বা সম্পূরক অংশে পরিণত হয়েছে এই কীটপতঙ্গ। এই তথ্য ফাওয়ের দেয়া। আরেক সমাধান হতে পারে কৃত্রিম প্রোটিন তৈরির জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার। বিল গেটস ও রিচার্ড ব্রানসনের মতো বিনিয়োগকারীরা কৃত্রিম মাংস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন যারা প্রাণিজ কোষ থেকে গোমাংস ও মুরগির মাংস তৈরি করতে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা প্রাণীদেহের জিনগত রূপান্তরের উপায় খুঁজছেন যাতে করে গবাদিপশুর মাংসপেশী বাড়ানো যায় বা চাষের মাছের রোগ সংক্রমণ কমানো যায়। এ ধরনের আবিষ্কার বিপুল সম্ভাবনাময় ফল বয়ে আনতে পারে। আর সেগুলোতে যদি শিল্পায়িত রূপ দেয়া যায় এবং ভোক্তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায় তাহলে তো কথাই নেই। তবে মানুষের খাদ্যভ্যাস কিংবা তাদের আহার্য বস্তুকে বদলানো ক্রমবধমান জনগোষ্ঠীকে আরও টেকসইভাবে খাওয়ানোর একমাত্র পথ নয়। আরও একটা উপায় আছে। সেটা হলো খোদ প্রাণীরা যা খাচ্ছে সেই খাদ্যবস্তুকে বদলে দেয়া। আর এখানেই প্রযুক্তি যথাশীঘ্র বৃহত্তম প্রভাব রাখতে পারে। পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত ফসল আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগানো সম্ভব। সয়াবিনের মতো পশুখাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে আরও নিবিড় চাষ পদ্ধতির আশ্রয় নেয়া যেতে পারে যেখানে পানিও সার লাগবে কম। তবে অধিকতর বৈপ্লবিক পথটা হলো পশুখাদ্যের পরিবর্তন সাধন। মাছ চাষে ব্যবহৃত ফিশমিল কমানোর জন্য যে উদ্যোগ চলছিল ইতোমধ্যে তার সুফল পাওয়া গেছে। ১৯৯০ সালে নরওয়েতে স্যামন মাছ চাষে ব্যবহৃত খাবারের ৯০ শতাংশই ছিল ফিশমিল। তবে উদ্ভিজ্জ বস্তু ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবহারের ফলে ২০১৩ সাল নাগাদ ফিশমিলের ব্যবহার ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। আরও অনেক কিছুই করা যেতে পারে। পশুদের খাওয়ানো শস্যের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ প্রোটিন ভোজ্য প্রোটিনে রূপান্তরিত হয়। বাকিটা বর্জ্যে পরিণত হয়। কারগিল নামে একটি বিশাল কৃষি প্রতিষ্ঠান ক্যালিস্টা নামে অপর এক ফার্মের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে এ বছর একটি বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে। তারা দেখিয়েছে যে মিথানোট্রফ নামক ব্যাকটেরিয়াকে মিথেন খাইয়ে সেগুলোকে মাছ ও গবাদিপশুর খাওয়ার উপযোগী প্রোটিন পিলেটে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। কীটপতঙ্গকেও এদের প্রোটিন হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গোবর ও জৈব বর্জ্যে মাছি ও শূককীট চাষ করে দানাদার শস্যের বদলে সেগুলো গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও মাছকে প্রোটিন হিসেবে খাওয়ানো যেতে পারে। ফাও সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে যে ২০৫০ সাল নাগাদ ২০০৯ সালের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি খাদ্য উৎপাদন করা প্রয়োজন হবে। তাই যদি হয় তাহলে এসব ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো এক উত্তম পদক্ষেপ হতে পারে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×