ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের প্রাক্কালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আহ্বান

রোহিঙ্গা নিধন ঠেকাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর ॥ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা চাই

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা নিধন ঠেকাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর ॥ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা চাই

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দমনপীড়ন ও নির্যাতন ঠেকাতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। দেশটির ওপর চাপ বাড়াতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগ মুহূর্তে সোমবার সংস্থাটি এমন আহ্বান জানায়। এক বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উচিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পণ্য ও অস্ত্র ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। খবর এএফপির। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া এ্যাডভোকেসি পরিচালক জন শিফটন বলেন, ‘যদি মিয়ানমার বাস্তবিকভাবে অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে, তবেই দেশটির সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ডাকে সাড়া দেবে। কারণ তারা বিশ্বনেতাদের নিন্দার কোন তোয়াক্কা করছে না।’ রাখাইন প্রদেশে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা দমনাভিযানকে জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে অভিহিত করেছে। এইচআরডব্লিউ বলেছে, বিশ্বনেতাদের সমালোচনা উপেক্ষা করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই মুসলিম। ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের কয়েক চেকপোস্ট ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় ১২ জন পুলিশ নিহত হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের শুরু হয়েছে নির্মম দমনাভিযান। ওই হামলার জন্য রোহিঙ্গাদের একটি বিদ্রোহী গ্রুপকে দায়ী করা হয়েছে। নির্বিচার হত্যা ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল নেমেছে। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা এরই মধ্যে ৪ লাখে ছাড়িয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে। এইচআরডব্লিউর পর্যবেক্ষক এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাখাইন বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করার জন্য নির্বিচার গণহত্যা ও নির্যাতন চালিয়েছে। তারা তাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীগুলো কেবল আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) বিরুদ্ধে নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে। ২৫ আগস্টের হামলা এবং গত বছর অক্টোবরে আরেকটি হামলার দায় তারা স্বীকার করেছে। এইচআরডব্লিউ হত্যা ও নির্যাতনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সম্পত্তি জব্দ এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া দেশটির ওপর আরোপিত বিদ্যমান অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আওতা সম্প্রসারিত করে সামরিক অস্ত্র ও আর্থিক সহযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ রাখার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এদিকে নজিরবিহীনভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের সমালোচনা করে নৃশংসতা বন্ধের আহ্বান জাানিয়েছেন দেশটির আরেকটি সংখ্যালঘু কারেন জাতিগোষ্ঠীর লোকজন। কারেন উইমেন অর্গানাইজেশন বলেছে, ‘আমরা এই অপরাধী সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। তারা এখন যা করছে সেগুলো সুস্পষ্টভাবে যুদ্ধাপরাধ।’ কারেন বিদ্রোহীরা সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা করেছে। স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াইরত কারেনদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দশকের পর দশক ধরে অভিযান চালিয়েছে। এক লাখের বেশি কারেন বর্তমানে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে। এইচআরডব্লিউ মনে করে, মিয়ানমারে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী তার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। দেশটিতে জাতিগত নির্মূল অভিযান বন্ধের লক্ষ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উচিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, গ্রুপটি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছে। সহিংসতা শুরুর আগ পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছিল। রাখাইনে তারা এক রকম বন্দী জীবন জীবন কাটিয়েছে। তাদের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। এছাড়া তারা মিয়ানমারে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত নয়। বেশিরভাগ বৌদ্ধরা তাদের বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী মনে করে। মিয়ানমারের নোবেল বিজয়ী নেত্রী আউং সান সুচি এই সঙ্কটে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা না নিয়ে তিনি বরং সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়েছেন। এ কারণে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছেন। পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়ায় তিনি জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ পরিষদের অধিবেশন যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার নোবেল পদকও প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি উঠেছে। দেশটি গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করলেও এখন নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বহু কিছুর নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর হাতে রয়ে গেছে। সেনাপ্রধান মিন আউং হলাইং রবিবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে পুরো দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাট্রিক মারফির মিয়ানমার সফরের কথা রয়েছে। তিনি রাখাইনের রাজধানী সিটওয়ে যাবেন। সেখানে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন কমিউনিটির লোকজনের সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা থাকলেও তিনি সংঘাত বিক্ষুব্ধ উত্তর রাখাইনে যাবেন না।
×