ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধ্রুব হাসান

বিশ্বাস রাখ স্বপ্ন সফল হবেই

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বিশ্বাস রাখ স্বপ্ন সফল হবেই

তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী নারী। যার জন্ম ১৯৫৪ সালের ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ রাজ্য মিসিসিপির এক কুমারী মায়ের ঘরে। বাবা ছিলেন নরসুন্দর এবং মা গৃহপরিচারিকা । প্রথম থেকেই তার মা-বাবা আলাদা ছিলেন। এর ফলে তার শৈশব জীবন ছিল খুবই দারিদ্র্য ও যন্ত্রণাদায়ক। মাত্র ৯ বছর বয়সেই নিকটাত্মীয়র মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের শিকার হন তিনি এবং এ নির্যাতন সইতে না পেরে একপর্যায়ে বস্তি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। চৌদ্দ বছর বয়সে এক পুত্রসস্তানের জন্ম দেন তিনি। জন্মের কিছুদিন পর সে শিশুটি মারা যায়। স্কুলে পড়াকালে সান্ধ্যকালীন খবরের উপস্থাপিকা হিসেবে টেনিসি রাজ্যের স্থানীয় একটি রেডিও স্টেশনে চাকরি পান। পরে তার উপস্থিত বক্তব্যে পারদর্শিতা দেখে দিবাকালীন টক শো এ এম শিকাগো উপস্থাপন করতে দেয়া হয়। বন্ধুরা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কার কথা বলছি! বলছি অপরাহ উইনফ্রে কথা। তার অনেকগুলো পরিচয়। সবগুলোতেই তিনি প্রায় সমান সফল। উপস্থাপক, অভিনেত্রী, প্রযোজক ও সমাজসেবী। তবে সবগুলো পরিচয় ছাপিয়ে তাঁর আসল পরিচয় তুমুল জনপ্রিয় টকশো ‘অপরাহ উইনফ্রে শো’র উপস্থাপক। নিজের নামে এই অনুষ্ঠানটি দিয়ে অপরাহ উইনফ্রে সবাইকে ছাড়িয়ে উঠে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। গত ১৫ মে ২০১৬ অপরাহ উইনফ্রেন্ড- জনসন সি স্মিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তিনি জনসন সি স্মিথ বিশ্ববিদ্যালযয়ের থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রীও অর্জন করেন। তিনি তার সমাবর্তন বক্তব্যে ৩০০ গ্র্যাজুয়েটদের বলেনÑ তোমাদের জীবনে আজকের এই দিনটা একটা বিশেষ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি আর নতুন অধ্যায় শুরুর সময়। আমি খুবই কৃতজ্ঞ জনসন সি স্মিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনক ডক্টরেট অর্জন করতে পেরে। আমার টেলিভিশনের ক্যারিয়ার বেশ অপ্রত্যাশিতভাবেই শুরু“হয়েছিল। আমি মিস ফায়ার প্রিভেনশন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। তখন আমার বয়স ছিল ১৬ বছর। তিনি আরও বলেন, তোমাদের মাঝে সে বিদ্যমান থাকবে যে কিনা যা করতে চায় তাই করতে পারবে। সে পারে নিজের ধারায় গোটা বিশ্বকে পরিবর্তন করতে । তিনি বলেন, বার্থতার মাঝে সাফল্য নিহিত। আমি যা করব ভালভাবে করব। আমি ভুল করব কিন্তু সেই ভুল থেকেই আমাকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাকে সফলতার স্বর্ণ শিখরে পৌঁছাতে হবে। জীবনের কোন না কোন সময় তোমাকে হোঁচট খেতে হবে। তুমি যদি সারাক্ষণ নিজেকে ঠেলতে থাক ওপরে তোলার জন্য, তুমি কোন একটা সময় নিচে পড়ে যাবে। তবে যখনই এ রকম একটা অবস্থার মুখোমুখি হবে তখন মনে রেখ, ব্যর্থতার মতো আর কিছু নেই। জীবন যখন আমাদের অন্যদিকে চালানোর চেষ্টা করে, সেটাই ব্যর্থতা। আমরা যখন গর্তে পড়ে যাই, তখন সেটা আমাদের কাছে ব্যর্থতার মতো মনে হয়। তিনি বলেন, জীবনে স্বপ্ন দেখার কোন সীমা নেই। তোমার লক্ষ্যকে ও স্বপ্নকে আকাশ ছাড়িয়ে যেতে দাও। কারণ, তুমি যা বিশ্বাস করবে, তুমি তা-ই হবে। আমি যখন মিসিসিপির এক অতি সাধারণ ছোট্ট মেয়ে, আমি দেখতাম, আমার দাদি বড় এক ডেকচিতে কাপড় সিদ্ধ করে পরিষ্কার করছেন। আমাদের কোন ওয়াশিং মেশিন ছিল না। জানি না, কেন তখন দাদিকে দেখতে দেখতে আমার মনে হতো যদিও আমি খুব সাধারণ এক কালো মেয়ে, তাও আমি চোখের সামনে যা দেখছি সেটাই আমার জীবনের পরিণতি হবে না। আমি বড় হব, অনেক বড় কিছু হব। চার-পাঁচ বছরের আমি সেই গভীর অনুভূতিকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারতাম না। কিন্তু আমি সমস্ত মন দিয়ে তা অনুভব করতাম এবং সেই উপলব্ধিকে বিশ্বাস করে পথ চলতাম। আমি যেখানে জন্মছি, যেভাবে বড় হয়েছি আজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি, যতদূর আসতে পেরেছি, এ থেকেই বোঝা যায় অসম্ভব বলতে কিছুই নেই। আমার মধ্যে অসাধারণ কিছুই ছিল না; তবু আমি পেরেছি। স্বপ্ন দেখ। নিজের বর্তমান অবস্থার কথা ভেবে পিছিয়ে যেওনা। নিজের কল্পনার চেয়ে বড় স্বপ্ন নিজের ওপর বিশ্বাস রাখ, স্বপ্ন সফল হবেই।
×