ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আলোকচিত্রে পাহাড়ী জীবন ও সংস্কৃতির জয়গান

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আলোকচিত্রে পাহাড়ী জীবন ও সংস্কৃতির জয়গান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকৃতির অজস্র রং ছড়িয়ে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামজুড়ে। নিসর্গের নান্দনিকতার সঙ্গে ঘটেছে জীবনের অপরূপ মিতালী। অপরূপ প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়েছে পাহাড়ী জীবন ও সংস্কৃতি। আদিবাসী জীবনের সেই বিচিত্র রূপময়তা ক্যামেরাবন্দী করেছেন আলোকচিত্রী এম এ তাহের। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এই আলোকচিত্রী চষে বেরিয়েছেন পাহাড়ী জনপদে। মিশেছেন রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির ১২টি পৃথক নৃ-গোষ্ঠীর সঙ্গে। তুলেছেন প্রকৃতির মেলবন্ধনে গড়া তাদের যাপিত জীবনের ছবি। সেই সঙ্গে ফ্রেমবন্দী করেছেন এসব জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন কর্মকা- ও বৈভবময় সংস্কৃতিকে। পাহাড়ী জীবনের গল্প বলা সেসব ছবি এখন শোভা পাচ্ছে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে। সোমবার থেকে এই গ্যালারিতে শুরু হলো ‘বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। সোমবার বিকেলে জাদুঘর আয়োজিত এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, রোমাঞ্চপ্রিয় এক আলোকচিত্রী এম এ তাহের। সেই রোমাঞ্চই তাকে টেনে নিয়ে গেছে পাহাড়ী জনপদে। সেখানকার মায়া ছড়ানো প্রকৃতির সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনকে তুলে এনেছেন ক্যামেরার আশ্রয়ে। তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে মেলে ধরেছেন সবার জন্য। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সব সময়ই শিল্পীদের কাছে রহস্যময় এক ভূখন্ড। কারণ, সমতলের অধিকাংশ মানুষই তাদের জীবন সম্পর্কে জানে না। ভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর সেই অচেনা জীবনকে সবার সামনে উপস্থাপন করেছেন এই আলোকচিত্রী। আর এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে এক ধরনের নৃতাত্ত্বিক জরিপের কাজটিও করেছেন তিনি। আলোকচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ১২টি জনগোষ্ঠীর জীবনধারা। এখন থেকে ৫০ বছর পরে যখন এসব জনগোষ্ঠীর ওপর কোন গবেষণা হবে তখন এসব আলোকচিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। হাশেম খান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের জনগোষ্ঠীর সহাবস্থানের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে এ প্রদর্শনী। ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, প্রত্যেকটি ক্ষুত্র নৃ-গোষ্ঠীর রয়েছে আলাদা আলাদা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে সেসব বৈশিষ্ট্য যেন হারিয়ে না যা, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশাল প্রদর্শনালয়জুড়ে ৮০টি আলোকচিত্রের মাধ্যমে মেলে ধরা হয়েছে ১২টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনধারা ও সংস্কৃতিকে। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে তিন পার্বত্য অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতির সৌন্দর্য। একটি ছবিতে ধরা দিয়েছে সহজ জীবনের অধিকারী এক ত্রিপুরা নারীর নির্মল হাসি। চাক নারীর ছবিতে দেখা মেলে তাদের বিশেষ ধরনের গহনা ও অঙ্গসজ্জা। একইভাবে তঞ্চঙ্গ্যা নারীকেও ভিন্ন রূপের সাজসজ্জায় দেখা যায় ছবিতে। একটি আলোকচিত্রে রাজ পুণ্যাহ অনুষ্ঠানে সূত্রের হাজির বোমাং রাজা প্রয়াত অংশৈ প্রু চৌধুরী। কোমরে কলস নিয়ে জলের সন্ধানে ছুটে চলা একঝাঁক চাকমা নারীর ছবিটি যেন বলে প্রকৃতিসংলগ্ন অন্য এক জীবনের কথা। এছাড়াও আলোকচিত্রের মাধ্যমে উঠে এসেছে মুরং, পাংখোয়া, খুমি, লুসাই, খেয়াং, উসাঁই ও মারমা জনগোষ্ঠীর জীবনচিত্র। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। শনি থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনী। সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে বৃহস্পতিবার। সাধনার সুফি ধারার নৃত্য পরিবেশনা নাচের মুদ্রায় প্রকাশিত হলো প্রেমের সাতটি স্তর। নর-নারীর প্রেমের বাইরেও সেখানে বর্ণিত হয় মানুষের প্রতি মানুষের প্রেম। সেই প্রেম আবার মানবিক সম্পর্কের গ-ি পেরিয়ে ঈশ^রের সাধনার বাতা দেয়। সুফি ধারার এমন নৃত্যে সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময়তার দেখা পেল দর্শক। কানাডার নৃত্যশিক্ষক ইরানি বংশোদ্ভূত সুফি শিল্পী সাশার জারিফের প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের শিল্পীরা পরিবেশন করলো সুফি নৃত্য। নৃত্য সংগঠন সাধনার ‘নূপুর বেজে যায়’ ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এতে অংশ নেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১১ জন শিল্পী অংশ নেন। পরিবেশনাটি প্রসঙ্গে সাধনার শিল্প নির্দেশক লুবনা মারিয়াম বলেন, আমার নানি ছিলেন উর্দু লেখক। তার লেখা গল্প ‘দিলনেওয়াজ’ অবলম্বনে এই নৃত্য প্রযোজনাটি সাজানো হয়েছে। সুফি ধারার গানের সঙ্গে আমরা পরিচিত। ইরানের সুফি ধারার নাচের সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের পরিচয় কম। এ অনুষ্ঠানে সুফি নৃত্যের সেই রূপটি দেখতে পাবেন দর্শকরা। নৃত্যশিক্ষক সাশার জারিফ বলেন, প্রেমের সাতটি স্তর। এগুলো হলো- আকর্ষণ, মায়া, প্রেম, বিশ্বাস, আরাধনা, তীব্র আকাক্সক্ষা ও বিলীন হয়ে যাওয়া। শিল্পীদের সেই বোধটি উপলব্ধি করতে হবে। এই সুফি দর্শন যখন কোন শিল্পী আত্মস্থ করবেন তখন তার নৃত্যে সেটা ফুটে উঠতে বাধ্য। শিল্পীরা নৃত্রে প্রেমের সেই সাতটি স্তরকে ফুটিয়ে তোলেন। এছাড়াও একক নৃত্য পরিবেশন করেন সাবিনা হোসেন প্রিমা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রান্তিক ও সিলেটের দুর্জয়।
×