ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণের আড়ালে জঙ্গী মদদ অনুসন্ধান অব্যাহত

নিবন্ধন ছাড়া কোন রোহিঙ্গা শরণার্থী সুযোগ সুবিধা পাবে না ॥ আইজিপি

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নিবন্ধন ছাড়া কোন রোহিঙ্গা শরণার্থী সুযোগ সুবিধা পাবে না ॥ আইজিপি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তাদের নিবন্ধিত করার কাজ চলছে। পরিচয়পত্রধারীরা এদেশের ও বিদেশের ত্রাণসহ অন্যান্য সহযোগিতা পাবেন। পরিচয়পত্র ছাড়া রোহিঙ্গারা কোন প্রকার সহযোগিতা পাবেন না। তারা এদেশের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বিদেশী নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। মানবিক কারণে এখন তাদের ছাড় দেয়া হলেও পরবর্তীতে দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ত্রাণ দেয়ার আড়ালে কোন গোষ্ঠী এদেশে সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদের জন্ম বা মদদ যোগাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। আর ত্রাণসামগ্রীর আড়ালে দেশে কি প্রবেশ করছে তা নিশ্চিত হতে ত্রাণসামগ্রীতে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক এসব বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। সরকার তাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং করছেন। সরকার কক্সবাজারে ২ হাজার একর জমির ওপর তাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করে যাচ্ছেন। সেখানেই তাদের থাকার ব্যবস্থা হবে। আগ থেকেই দেশে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। হালে এ সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ প্রধান বলছেন, পালিয়ে এসে এদেশে আশ্রয় পাওয়া অনেক রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের ভাষা ব্যতীত সবই প্রায় বাঙালীর মতো। এজন্য তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই অনেক রোহিঙ্গা কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় শনাক্ত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আবার কক্সবাজারে থাকার জন্য নির্মিত নির্দিষ্ট শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠিয়েছে। এমন রোহিঙ্গার সংখ্যা দুই শতাধিক। তারা যাতে দেশে ছড়িয়ে পড়ে আত্মগোপন বা বাঙালীর সঙ্গে মিশে যেতে না পারে এজন্য পুলিশ কড়া মনিটরিং করছে। দেশের প্রতিটি জেলায় পুলিশকে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শরণার্থী শিবির ব্যতীত রোহিঙ্গারা কোথাও বসবাস করতে পারবেন না। এখন মানবিক কারণে তাদের বিষয়ে কোন শক্ত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা নির্দেশ অমান্য করে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। কোন প্রতারক চক্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা যাতে দেশের ভেতরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এজন্য নজরদারি ও জোরাল মনিটরিং অব্যাহত। সীমান্তে বিজিবিও শক্ত অবস্থান নিয়েছে। পুলিশ প্রধান বলেন, ত্রাণ দেয়ার নামে কোন দেশী বা বিদেশী গোষ্ঠী যাতে নতুন করে দেশে জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিতে না পারে সেদিকে নজরদারি করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আসা ত্রাণসামগ্রীর আড়ালে অন্য কোন কিছু আসছে কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে ত্রাণসামগ্রীতে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে ত্রাণসামগ্রী ইচ্ছেমতো বিতরণ। প্রত্যেককে ত্রাণসামগ্রী জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে জমা করতে হবে। এরপর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণদাতাদের উপস্থিতি বা সহযোগিতায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে। বিতরণের সময় জনপ্রতিনিধি, ত্রাণদাতা সংগঠন বা ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষে তাদের লোকজন উপস্থিত থাকতে পারবেন। জামায়াতের লোকজনের ত্রাণ দেয়ার নেপথ্যে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা তাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। গত শনিবার পুলিশ সদর দফতরের তরফ থেকে এক গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, এদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত নির্দিষ্ট ক্যাম্পে অবস্থান করতে হবে। অনেক রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। রোহিঙ্গাদের অবস্থান এবং যাতায়াত শুধু কক্সবাজারের নির্দিষ্ট ক্যাম্পগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকবে। তারা ক্যাম্পের বাইরে তাদের আত্মীয়-স্বজন অথবা পরিচিত ব্যক্তিদের বাড়িতে অবস্থান বা আশ্রয় নিতে পারবেন না। রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া দেয়া যাবে না। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গাদের তাদের হেফাজতে বা তাদের বাসস্থানে থাকার ব্যবস্থা করতে পারবেন না। তারা সড়ক বা রেলপথ বা নৌপথে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে পারবেন না। রোহিঙ্গাদের কোন পরিবহনে বহন করা যাবে না। অন্যত্র যেতে সহায়তা করা যাবে না। পুলিশ সদর দফতরের ইন্টেলিজেন্স এ্যান্ড স্পেশাল এ্যাফেয়ার্স শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, ইতোমধ্যেই অন্তত পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গাকেহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, মানিকগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শনাক্ত করে শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হয়েছে। আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তাদের সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষণ করার কাজ চলছে। রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই পাসপোর্ট অফিস, নির্বাচন কমিশন অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে; যাতে কোন রোহিঙ্গা বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে না পারে। গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাঘাঁটিতে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার অভিযোগ আনা হয় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) বিরুদ্ধে। এরপর থেকেই সেখানে সেনাবাহিনী ব্যাপক মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে আসছে। নিপীড়নের মাত্রা এতটাই মারাত্মক যে, রোহিঙ্গারা নিজ দেশ ছেড়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। জাতিগত দাঙ্গাসহ নানা নির্যাতনের কারণে সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৮ সাল থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে বসবাস করছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এবার পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিল ও সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমী একই দিনে হচ্ছে। এজন্য রাজধানীজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে। তাজিয়া মিছিলে ছুরি, কাঁচি বা অন্যান্য ধারালো জিনিসপত্র বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া তাজিয়া মিছিলে নিশানে লাগানো লাঠি লম্বায় ১২ ফুটের বেশি হতে পারবে না। যে কেউ বা কোন সংগঠন বা দল মিছিল নিয়ে পুরনো ঢাকার ঐতিহাসিক হোসনি দালানে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ ২০১৫ সালে এখানে জঙ্গী হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তির আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এজন্য এবার আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
×