ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্মৃতিতে অতীত পাওয়া হারানো বন্ধুকে দেখে চমকে ওঠা...

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

স্মৃতিতে অতীত পাওয়া হারানো বন্ধুকে দেখে চমকে ওঠা...

সমুদ্র হক স্মৃতিতে অতীতকে ফিরে পাওয়া যায়। হারানো কাউকে দেখে চমকে উঠতে হয়। মনে মনে কিছু ভাবার ছন্দও চলে আসে। কান পাতলে ভালবেসে ভালবাসার ধ্রুপদ সুর পাওয়া যায়। এমনই নানাভাবে সময়ের চলার মৃদু শব্দের ঢেউ কখন যে বয়ে যায়....। তেরো বছর আগে বিশ্বের মানুষের ভাবনাতেও আসেনি এমনই কোনদিন আসবে, যেদিন হারানো মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাবে। জীবনের শেষ অধ্যায়ের বয়সে সাগর একচল্লিশ বছর পর স্ক্রিনে লিরাকে দেখে চমকে ওঠে। কোথায় ছিল লিরা এতটা বছর! সেই সময়ে লিরার সাদাকালো ছবির ওপর ফিনিশিং টাচ দিয়ে সাজিয়ে তুলত সাগর। লিরার তারুণ্যের সেই মুখ, ঘন কেশ আজও তেমনই আছে। ইনবক্সে লিখে ওরা একে অপরকে জানতে পারল। অনেকদিন আগে ভারতীয় এক শিল্পী ড. রোমী দাশগুপ্তার সঙ্গে পরিচয় হয় সুমনের। কোন এক রাতে অবসরে স্মার্টফোনে নেটে গিয়ে ড. রোমীর ছবি দেখে সুমন জানতে পারে সেও আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তারপর ফ্রেন্ডস রিকোয়েস্টে সেই পরিচয় নবায়ন করে নেয়া। এমনই ভাবে বিশ্বের দেশে দেশে প্রায় দুইশ’ কোটি মানুষের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হয়েছে ফেসবুক। প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের কল্পনাতেও আসেনি বিশ্বের মানুষের মনের কোনের সুপ্ত জায়গাটিতে এভাবে ঘূর্ণিঝড় তুলবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন নোট নেয়ার সুবিধার জন্য উদ্ভাবন করেন ফেসম্যাস নামের একটি সাইট। ২ হাজার ৩ সালের ২৮ অক্টোবর এই ওয়েবসাইট উদ্বোধনের পর শিক্ষার্থীদের মতামত চাওয়া হয়। শতভাগ পজিটিভ মতামতের পর ২ হাজার ৪ সালের জানুয়ারিতে এর নাম হয় ‘দ্য ফেসবুক ডট কম’। বিস্ময়ের সঙ্গে এক বছরেই ব্যবহারকারীর সংখ্যা দশ লাখে পৌঁছালে নাম রাখা হয় শুধু ফেসবুক। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ফেসবুক ২০০৬ সালে আই ফোন ও এ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে মোবাইল সংস্করণ চালু করে। তারপর গোটা বিশ্বের জন্য ফেসবুক উন্মুক্ত করা হয়। তখন ব্যবহারকারী ছিল দেড় কোটি। ২ হাজার ৯ সালে ফেসবুকে যুক্ত হয় লাইক বোতাম। ২ হাজার ১০ সালে ওপেনগ্রাফ পদ্ধতি চালু হয়। ২০১২ সালে ওয়েবসাইট ইনস্টাগ্রাম কিনে নেয় ফেসবুক। ২০১৫ সালে জিআইএফ এ্যানিমেশন পোস্ট করার সুবিধা দেয় ফেসবুক। গত বছর ২০১৬ সালে ফেসবুক স্মার্টফোন ক্যামেরা থেকে সরাসরি ভিডিও সম্প্রচারের লাইভ সুবিধা চালু করে। বিশ্বে বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২শ’ কোটিতে ঠেকেছে। এদের মধ্যে ১২৫ কোটি ব্যবহারকারী প্রতিদিন ফেসবুকে ঢুঁ মারেন। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ কোটিরও বেশি। এর সঙ্গে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। স্মার্টফোন ও ট্যাবেই ফেসবুক ব্যবহার হয় বেশি। ফেসবুকে যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃষ্টিশীল চর্চা হচ্ছে তেমনই উল্টোদিকও আছে। স্মার্ট ফোনে সেল্ফি ছবি তুলে পোস্ট করার পর লাইক কমেন্ট শেয়ারেরও প্রতিযোগিতা চলে। আবার কে যে কি স্টেটাস দিচ্ছে তার হেড টেল খুঁজে পাওয়া যায় না। কে কোথায় যাচ্ছে, কার মাথা ব্যথা, সকালে কি নাস্তা করেছে, কেন মন খারাপ হয়েছে.....হেন বিষয় নেই যা লিখছে না। এতে অবশ্য নির্মল আনন্দ পাওয়া যায়। যেমন মধ্য বয়সী একজন পুরুষ স্টেটাস দিল, তার তল পেটের ডান দিকে ব্যথা করছে। এখন কি করবে! হাসবে না কাঁদবে! তারপরও যে কমেন্টসগুলো এলো তা পড়েও বিনোদন পাওয়া যায়। একজন লিখলেন, মনে হয় গাইনকোলজিস্ট অথবা ম্যাটারনিটি সেন্টারে যেতে হবে। সামাজিক এই যোগাযোগ মাধ্যমে সৃষ্টিশীলতা মেধার বিকাশ একাকিত্ব কাটিয়ে ওঠার মতো আয়োজন আছে। বিশ্বের কোথায় কি ঘটছে তার চলমান ও স্থিরচিত্র মেলে। ক্রিয়েটিভদের নানা ধরনের কর্মকা-, সাহিত্য ও কাব্য চর্চা, রূপাতীত ধারার সংস্কৃতিচর্চা, মিনি ডকুমেন্টারিসহ অনেক কিছুই ফেসবুকে পোস্ট করা যায়। সৃষ্টিশীলরা নিজেদের প্রকাশ করার পাতা খুঁজে পেয়েছেন। অনেকে অতীতকে তুলে ধরছেন। অনেকে বহু বছরের পুরনো বন্ধু সহপাঠী ও পরিচিতজনকে খুঁজে পেয়েছেন। পুনঃযোগাযোগে মধুময়তা ফুটে উঠছে। প্রতিটি দেশের ছেলে বুড়ো সকলে আজ ফেসবুকের প্রতি আসক্ত। ষাট সত্তর দশকে পেন ফ্রেন্ডের (কলম বন্ধু- চিঠিতে অপরিচিতের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন) মাধ্যমে বন্ধুত্ব করে সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়া হতো। পত্রিকার পাতায় পত্র মিতালী নামের কলাম থাকত। ফেসবুকে সেদিনের পেন ফ্রেন্ডসকে (পেনপলও বলা হতো) প্রযুক্তির মোড়কে এনে বহু দূর এগিয়ে এক অপরকে চেনা জানার কতই না পথ দেখিয়ে দিয়েছে। দূরকে কত কাছে এনেছে। একে অপরের সহমর্মিতা ও সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে ফেসবুক। বিশ্বের শত কোটি মানুষ ফেসবুক থেকে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন পরিবার পরিজনের সঙ্গে সকল বিষয়ে যোগাযোগ রাখতে পারছেন। তেমনই একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা মুক্ত রাখতেও ফেসবুক ব্যবহার করছেন। এত সুন্দরের মধ্যে কখনও ঘুনপোকা এসে ঢুকেছে। সুধীজনেরা বলছেন এই বিষয়ে সতর্কতা নেয়া দরকার। সুধীজনদের আরও কথা- শিশু ও কিশোররা যাতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে ফেসবুকে আসক্ত না হয়। পারিবারিকভাবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। তবে তা যেন হিতে বিপরীত না হয় সেই দিকটিও ভেবে দেখতে হবে। প্রযুক্তিকে অস্বীকার করে নয় প্রযুক্তির ভাল দিক ব্যবহার করে মন্দ দিক পরিহারের সময় এসেছে।
×