ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ৪-৩ ভারত

ভারতকে হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ভারতকে হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু বাংলাদেশের

রুমেল খান ॥ অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়, অনিন্দ্য সুন্দর, অসাধারণ... নাহ্, কোন বিশ্লেষণই যেন যথেষ্ট বলে মনে হচ্ছে না বাদশাবাহিনীর জন্য। যেখানে পুরুষ ফুটবলে শুধু নিদারুণ ব্যর্থতা, একরাশ লজ্জা আর হতাশার ধারাবাহিক চিত্রই দেখা যাচ্ছে, সেখানে সোমবার ভুটানের থিম্পু থেকে হঠাৎই এলো অপ্রত্যাশিত জয় ও দারুণ একটি সুখবর। সাফ অনুর্ধ-১৮ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের প্রথম খেলাতেই দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে গত আসরের রানার্সআপ শক্তিশালী ভারতকে (২০১৫ সালে এই আসরটিই হয়েছিল সাফ অনুর্ধ-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ নামে)। ৪-৩ গোলে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। অথচ ম্যাচের প্রথমার্ধেই কি না বাংলাদেশ দল পিছিয়ে ছিল ০-৩ গোলে। দলের কোচ মাহবুব হোসেন রক্সির থিম্পু যাওয়ার আগে বলেছিলেন, ‘আমরা ভাল খেলার লক্ষ্য নিয়েই ভুটান যাচ্ছি।’ কথা রেখেছেন তিনি। এমন একটা ম্যাচ জিতেছেন, যে ম্যাচে তার ছেলেরা প্রথমার্ধেই পিছিয়ে পড়ে ০-৩ গোলে। সেই অবস্থাটা যেন খাদের কিনারায় চলে যাওয়ার মতো। তা থেকে দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ ফুটবল খেলে বীর বিক্রমে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। একে একে তিন গোল তো শোধ করেই, ইনজুরি সময়ে আরেকটি গোল করে ছিনিয়ে নেয় অসাধারণ এক জয়। এমন জয় বাংলাদেশের যেকোন পর্যায়ের ফুটবলেই বোধ করি খুব একটা নেই। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের কোচ রক্সি বলেন, ‘আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনেও কোনদিন দেখিনি বাংলাদেশ দল দুই গোলে পিছিয়ে থেকে সমতায় ফিরতে পেরেছে বা ম্যাচে জিতেছে। এক কথায় বলব, ছেলেরা ব্রিলিয়ান্ট কাজ করেছে। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা গেম প্ল্যান বদলে ফেলি। আক্রমণাত্মক খেলি এবং গোল আদায়ে সফল হই। পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলে সফল হয়েছি। এর কৃতিত্ব সম্পূর্ণ খেলোয়াড়দের। এমন ঐতিহাসিক জয়ের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’ ম্যাচের শুরুর দিকে ৩ মিনিটে একটি কর্নার এবং ১১ মিনিটে একটি ফ্রি কিকও পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে তা থেকে গোল করতে পারেনি তারা। উল্টো ১৯ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় ভারত। মাঠের অন্যপ্রান্ত থেকে সতীর্থর বাড়িয়ে দেয়া লম্বা দূরপাল্লার পাস বক্সে পেয়ে বাঁকানো শটে গোল করে ভারতের লালাউম পুইয়া (১-০)। ৩২ মিনিটে বক্সের ভেতর ফাউল হওয়ায় পেনাল্টি পায় ভারত। পেনাল্টি থেকে খুব সহজেই বাংলাদেশের গোলরক্ষক প্রীতমকে পরাস্ত করে ইদমান লালরিন্দকা (২-০)। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে (৪৫+৩ মিনিট) বক্সের প্রায় পাঁচ গজ দূরে ফ্রি-কিক পায় ভারতীয়রা। আর সেই সুযোগটাও কাজে লাগায় তারা। আবারও পরাস্ত হয় বাংলাদেশের গোলরক্ষক (৩-০)। তিন গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। অনেকেই ভেবেছিল এখানেই বুঝি ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে, তাদের জন্য বোধ করি মুচকি হেসেছিলেন ভাগ্যদেবী। দ্বিতীয়ার্ধে জেগে ওঠে অন্য এক বাংলাদেশ। একের পর এক আক্রমণ করে গোল শোধ করতে শুরু করে তারা। ৫৫ মিনিটে কর্নার থেকে বক্সে জটলায় বল পেয়ে জোরালো হেডে ভারতের জাল কাঁপান জাফর ইকবাল (১-৩)। ৬০ মিনিটে ভারতের একটি ফাউল থেকে ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। তবে এ ধরনের ফ্রি-কিক সচরাচর বাংলাদেশের ম্যাচগুলোতে দেখা যায় না। ছোট বক্সের লাইনে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। আর ভারতের ফুটবলাররা গোলরক্ষকসহ জড়ো হন গোললাইনে। এমন অবস্থায় গোল পাওয়া সত্যিই কঠিন কাজ। তবে সেই কঠিন কাজটাই করে দেখান বাংলাদেশের মোঃ রহমত। প্রথমে ডানপ্রান্ত থেকে ডামি নেন বাংলাদেশের এক ফুটবলার। আর বাঁকানো শটে বারে বল লাগিয়ে জালে ঢুকিয়ে দেন রহমত (২-৩)। ৭৪ মিনিটে বাঁপ্রান্ত দিয়ে ঢুকে দারুণ একটা বল বাড়িয়ে দেন বাংলাদেশের এক ফুটবলার। বাঁপ্রান্ত দিয়ে দৌড়ে এসে হেডে গোল করেন বাংলাদেশের মাহবুবুর রহমান (৩-৩)। ৯১ মিনিটে নাটকীয়ভাবে গোল করে বাংলাদেশ। কর্নার থেকে বক্সে বল পেয়ে লাফিয়ে উঠে হেডে ভারতের জালে বল পাঠান আবার সেই জাফর ইকবাল (৪-৩)। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানে জিতে উল্লাসে ফেটে পড়ে লাল-সবুজরা। প্রথম আসরের (২০১৫) সেমিফাইনালে গোলশূন্য ড্রর পর টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হেরেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেই হারের শোধটা ভালমতোই নিল বাদশা-ইকবাল-রহমতরা। আর সেই ম্যাচে কুড়িয়ে নিল অসাধারণ, স্মরণীয় এবং ঐতিহাসিক এক জয়।
×