ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফড়িয়ারা ধান মজুদ করায় চালের দাম বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ফড়িয়ারা ধান মজুদ করায় চালের দাম বৃদ্ধি

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে ॥ মাত্র এক সপ্তাহে সারাদেশের মতো কুড়িগ্রামেও চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এমনিতে গত একমাসের বন্যাতে সর্বশান্ত হওয়া মানুষগুলো চালের অস্থিতিশীল বাজার নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছে। রবিবার জেলা খাদ্য বিভাগ কুড়িগ্রাম শহরের পাঁচটি পয়েন্টে ও এম এস ডিলারের মাধ্যমে এক মেঃটঃ করে ন্যায্যমূল্যে চাল বিতরণ শুরু করেছে। স্থানীয় চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন যতদিন বাজারে চালের সর্ববরাহ বেশি হবে না ততদিন চালের বাজার কমে যাবার সম্ভাবনা অনেক কম। এদিকে গত বৃহস্পতিবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরী মিটিং করেছেন। তিনি চাল ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছেন কোন অবস্থায় যেন চালের বাজার যেন বৃদ্ধি করা না হয়। কিন্তু বাজারে চালের সরবরাহ কমে যাওয়ায় চালের বাজার বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে জানা গেছে হঠাৎ করে চালের বাজার কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বাজারে ধান প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছে। কৃষক আর গৃহস্থরা তাদের আবাদের ধান বিক্রি বন্ধ করেছে। গত ইরি বোর মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বিভিন্ন রোগ বালাই এ এমনিতেই ধানের ফলন তুলনামূলক কম আবাদ হয়েছে। তার উপর এবারের বন্যায় জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আমন ধানের আবাদ নষ্ট হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে কৃষক আর গৃহস্থরা। তাই তাদের কাছে যে ধান মজুদ আছে তা এক প্রকার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। তবে কিছু মধ্যস্বত্ব ভোগী এবং ফরিয়া তাদের কাছে যে ধান মজুদ আছে তা বিক্রি করছে চড়া দামে। চলতি সময়ে প্রতি বছর এ সময়ে কুড়িগ্রাম অঞ্চল থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ ট্রাক ধান দেশের বিভিন্ন এলাকায় গেলেও এবার একদম শূন্যের কোঠায়। বর্তমানে কুড়িগ্রাম শহরের বিভিন্ন চালের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা চাল প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, স্বর্ণা চিকন চাল প্রতি কেজি ৪৮ টাকা, রতœা প্রতি কেজি চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা আর ২৮ জাতের চিকন চাল প্রতিকেজি ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা দরে বেচা কেনা হচ্ছে। অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগে এসব চাল প্রতিকেজি ৭ থেকে ৮ টাকা কম দরে বিক্রি হয়েছিল। কুড়িগ্রামের বিশিষ্ট চাল ব্যবসায়ী আহমদ আলী জানান, কুড়িগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে ধান এবং চালের মজুদ একেবারে শূন্যের কোঠায়। তবে জেলায় যে দুটি অটো রাইস মিল রয়েছে এখানে কিছু ধান মজুদ থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, চালের বাজার দ্রুত স্থিতিশীল করতে হলে বাজারের চালের সরবরাহের পাশাপাশি এ মুহূর্তে টি আর, জি আর, কাবিখার বিভিন্ন প্রকল্পগুলোতে টাকা না দিয়ে চাল সরবরাহ করলে বাজার এমনিতেই স্থিতিশীল হয়ে যাবে। চাল ব্যবসায়ী মোঃ সহিদুল ইসলাম জানান, হিলি স্থল বন্দরে ভারত থেকে যে চাল আসছে সেখানেই চিকন চালের কেজি ৪৬ টাকা। কেরিং করে কুড়িগ্রামে নিয়ে আসতে বস্তা প্রতি প্রায় দু’টাকা খরচ পড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা মাত্র এক থেকে দু’টাকা কেজি দরে লাভ করে বিক্রি করে। স্বল্প আয়ের মানুষরা বলছেন বাজারে চালের সংকট নেই। কিন্তু চালের বাজার প্রতিদিন বাড়ছে এতে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ছি। জানি না কবে চালের দাম কমবে। তারা সরকারের কাছে অনুরোধ করেন দ্রত যেন চালের দাম কমানোর পদক্ষেপ নেয়। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার খাদ্য বিভাগের ভারপ্রান্ত কর্মকর্তা নুর মোহম্মদ জানান, জেলার খাদ্যগুদামগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য মজুদ আছে। যদি গৃহস্থ ও কৃষকরা ধান বিক্রি করে মিল চাতালগুলো চালু হলেই চালের বাজার নিম্নমুখী হবে।
×