ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জোহানেসবার্গে ফুরফুরে মেজাজে মুশফিকরা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জোহানেসবার্গে ফুরফুরে মেজাজে মুশফিকরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার আগে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম লিখেছেন, ‘মিশন দক্ষিণ আফ্রিকা।’ দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে নাস্তা করতে থেকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ লিখেছেন, ‘কিংবদন্তির সঙ্গে সকালে নাস্তা। ঠিকমতো পৌঁছেছি। আলহামদুলিল্লাহ।’ দুইজনই ফেসবুকে নিজের ভ্যারিফাইড পেজে লিখেছেন। তাতেই বোঝা হয়ে গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে গেছেন মুশফিকরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট, তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এজন্য শনিবার সকালে একদল এবং সন্ধ্যায় আরেকদল দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে রওনা দেয়। যে দলটি সকাল ১০টায় রওনা দেয়, সেই দলে ছিলেন দলের ম্যানেজার হিসেবে থাকা প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ ও তিন খেলোয়াড় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তাইজুল ইসলাম ও লিটন কুমার দাস। আর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মুশফিকসহ বাকিরা রওনা হয়েছেন। তবে ওয়ালশ বাদে কোচিং স্টাফের অন্যরা ছুটিতে থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকায় সরাসরি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহেসহ কোচিং স্টাফের বাকিরা সেই দলে আছেন। আর তামিম ইকবাল আজ দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। যে দলটি সকালে রওনা দিয়েছে প্রায় ১৫ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে রাতেই দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছে গেছে। আর যে দলটি সন্ধ্যায় রওনা হয়েছে তারা রবিবার সকালে পৌঁছে গেছে। অনুশীলনও সেরে নেয়ার কথা রয়েছে। নয় বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছে বাংলাদেশ দল। ২০০৮ সালের পর পূর্ণাঙ্গ সফর করছে এবার। সফরের শুরুটা হবে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে তিনদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে। ৪৩ দিনের এই সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে শুরুতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম ও ৬ অক্টোবর দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজ শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৫, ১৮ ও ২২ অক্টোবর যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। ২৬ ও ২৯ অক্টোবর যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় টি২০ খেলবে। তবে আগে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হবে, তাই টেস্ট দলের ক্রিকেটাররাই দক্ষিণ আফ্রিকা গেছেন আগে। টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়ার আগেই ওয়ানডে দলে যারা ডাক পাবেন তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছাবেন। টেস্ট সিরিজে রয়েছেন মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান, মুমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাশ, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও শুভাশীষ রায়। টেস্ট সিরিজ থেকে যে ক্রিকেটাররা ওয়ানডে সিরিজে সুযোগ পাবেন তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকবেন। যারা বাদ পড়বেন তারা দেশে ফিরে আসবেন। দেশে থাকা মাশরাফিসহ যারা ওয়ানডে দলে থাকবেন তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় ৭ অক্টোবর উড়াল দিতে পারেন। আপাতত টেস্ট সিরিজ সামনে। তাই টেস্ট সিরিজ নিয়েই সব ভাবনা চলছে। সেই ভাবনায় জয়ের আশাই করা হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যদিও এরআগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে চার টেস্ট খেলে সবকটিতেই ইনিংস হার হয়েছে। তবে এবার জয়ের আশা করা হচ্ছে। কারণ, এবার যে বাংলাদেশ দলও অনেক শক্তিশালী। ২০০৮ সালে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশ দলতো এক নয়। অনেক ভিন্ন। সেই ভিন্নতার প্রমাণও গত তিনটি সিরিজে রেখেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডকে টেস্টে হারিয়েছে। এরপর শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়েছে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে হারানোর আশা দেখছে বাংলাদেশ। টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমই যেমন বলেছেন, ‘হারার জন্য কেউই কখনও খেলে না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে বা টি২০তে আমাদের কোন সুযোগই নেই, এমন কথাও নেই। ক্রিকেট এমন একটি খেলা যা আগে বলা যায় না। আপনি যদি বিশ্বাসই করতে না পারেন যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো সম্ভব না তাহলে মুশকিল। এটা তিন বছর আগে হলে হয়তো কথা ছিল। আমাদের বিশ্বাস ছিল বলেই ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে দেশের মাটিতে এবং শ্রীলঙ্কাকে তাদের মাটিতে হারাতে পেরেছি। তাই বিশ্বাসটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি তিন ফরমেটেই আমাদের সুযোগ আছে। আমরা ধারাবাহিক যে খেলাটা খেলছি সেটা ধরে রাখতে পারলে এই সিরিজেও ভাল কিছু করার অবশ্যই সুযোগ আছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘অনেকেই বলবেন, আমাদের কোন সুযোগই নেই। কিন্তু আমি তাদের সঙ্গে একমত নই। এটাকে উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন বলতে পারেন, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমরা হারাতে পারি, এই বিশ্বাসটা আমাদের থাকতেই হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আমাদের ভাল রেকর্ড নেই। আমাদের খুব কম খেলোয়াড়ই আছে যারা দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে খেলেছে। ওটা এমনই একটা জায়গা, যেখানে অনেক দলই খারাপ খেলে। আমাদের জন্যও ওখানে খেলাটা কঠিন হতে পারে, তবে আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব। বাংলাদেশ যে কয়বার দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছে, সে তুলনায় বাংলাদেশ অবশ্যই এবার অনেক ভাল করবে। যেহেতু বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত দল; আমরা যদি আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি, তাহলে মনে করি, একটা দল হিসেবে আমাদের ভাল করার সুযোগ আছে। নিউজিল্যান্ডে রেকর্ডও আমাদের ভাল ছিল না। লাস্ট যে দুইটা টেস্ট খেলেছি হয়তোবা হেরেছি। কিন্তু আগের চেয়ে অনেক ইম্প্রুভ হয়েছে। অনেক ভাল ভাল পারফর্মেন্সও ছিল।’ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ ভাল করুক, সবারই আশা এটা।
×