ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ডায়েট ও ব্যায়ামের বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ডায়েট ও ব্যায়ামের বিকল্প নেই

বিস্ময়কর ওষুধ কানাকিনুমাব। এটি প্রদাহ বা ব্যথানাশক ওষুধ। তথাপি একই সঙ্গে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে দারুণ কার্যকর হতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে। ওষুধটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল সংবাদপত্রে এমন ইতিবাচকভাবে পরিবেশিত হয়েছে যে, পাঠকরা উদগ্রীব হয়ে আছে কবে এই ওষুধটি চিকিৎসার জন্য হাতে পাওয়া যাবে। তবে কানাকিনুমাবের সুফলের কথা দারুণ বাড়িয়ে বলা হয়েছে যদিও পরীক্ষার ফলাফলটি কোনক্রমেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ ওই পরীক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে যা সন্দেহ করা হচ্ছিল সেটাই সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর তাহলো ব্যথা বা প্রদাহ হৃদরোগের একটা বড় কারণ। কয়েক দশক ধরে একটা সাধারণ ধারণা প্রচলিত যে কারোর হার্ট এ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কমানোর উপায় হলো তার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখা তবে কোলেস্টেরল হচ্ছে হৃদরোগ সমস্যাটির একটি দিক মাত্র। কারণ, দেখা গেছে প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রে হার্ট এ্যাটাক তাদেরই হয় যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে যাদের রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নেই তারাও কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ স্ট্যাটিন থেকে লাভবান হতে পারে। কারণ এসব ওষুধের আরেকটা কাজ হলো প্রদাহ হ্রাস করা। প্রদাহ হ্রাসের এই গুণটি থাকায় এখান থেকেই হৃদরোগের সুরক্ষা পাওয়া যায় এমন একটা সন্দেহ বিজ্ঞানীদের ছিল। কিন্তু স্ট্যাটিন ওষুধের কোলেস্টেরল কমানোর ধর্মটাই এমন যে এর ব্যথানাশক ধর্মকে আলাদা করা অসম্ভব। আমেরিকার চিকিৎসাবিজ্ঞানী পল রিদকারের নেতৃত্বে পরিচালিত এক নতুন গবেষণায় এই প্রদাহের দিকটা বিশেষভাবে দেখা হচ্ছে। কারণ, কানাকিনুমাব ওষুধটি শুধু প্রদাহই কমায় কোলেস্টেরল নয়। ড. রিদকার ও তার দল হৃদরোগ হয়েছে এবং উচ্চমাত্রায় স্ট্যাটিন গ্রহণ করছে এমন ১০ হাজর রোগীর ওপর পরীক্ষা চালান। তারা এসব রোগীর একাংশকে তাদের গৃহীত ওষুধ ছাড়াও তিন মাস পর পর কানাকিনুমাব ইঞ্জেকশন দেন। চার বছর ধরে এই পরীক্ষা চলে। দেখা যায় যে যারা ১৫০ মিলিগ্রাম ডোজ গ্রহণ করেছে তাদের আরও হার্ট এ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা যারা এই ওষুধটি নেয়নি তাদের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম প্রমাণিত হয়েছে। কানাকিনুমাব গ্রহণ করা রোগীদের নানা ধরনের ক্যান্সারে মৃত্যুবরণের হারও গ্রাস পেতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যান্সার হলে। প্রদাহ হৃদরোগের ক্ষেত্রে যেমন প্রকোপ বাড়িয়ে দেয় তেমনি ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও বাড়ায়। গবেষণার নেতিবাচক তথা নৈরাশ্যজনক দিকটা হলো যারা কানাকিনুমাব গ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে সংক্রমণে মৃত্যু উল্লেখযোগ্য রকমের বেশি হতে দেখা গেছে। হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব থাকলেও শুধু এই বৈশিষ্ট্যটির কারণে কানাকিনুমাব ওষুধটির সমস্ত ঔজ্জল্য ম্লান হয়ে যায়। তবে এই পরীক্ষা ঘিরে যত চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা সেগুলো যত না ক্লিনিক্যাল তার চেয়ে বেশি বিজ্ঞানগত। কারণ, এ থেকে প্রমাণ পাওয়া গেল যে প্রদাহ নিরোধের উপায় উদ্ভাবন করে করনারি হৃদরোগের চিকিৎসা করার নতুন পথের সম্ভবত সন্ধান মিলবে। কানাকিনুমাব নিজেই এক ধরনের ওষুধ যাকে বলে মনোক্লোনাল এ্যান্টিবডি। এটি ক্রাইও পাইরিন এ্যাসোসিয়েটেড পিরিওডিক সিনড্রোমস (ক্যাপস)- এর চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত। এটি আসলে বিশেষ কয়েক ধরনের প্রদাহ নিরোধ ওষুধ। এ ধরনের আরও অনেক ওষুধ বেশ ব্যয়বহুল। বছরে এমন ওষুধ সেবনের ব্যয় কয়েক শ’ এমনকি কয়েক হাজার ডলারও হতে পারে। পরে এটি সত্যিই হৃদরোগ ও ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে কিনা সেটা ভবিষ্যতের কথা। এ নিয়ে অত মাথা না ঘামালেও চলবে। বহু বছর ধরে মহামারীতত্ত্বে¡ দেখা গেছে যে, তৈলাক্ত মাছ খাওয়ার সঙ্গে করোনারি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যাওয়ার একটা সম্পর্ক আছে। সম্ভবত এর জন্য দায়ী হলো মাছের তেলের প্রদাহ নাশক বৈশিষ্ট্য। মূলত সেটা ওমেগা-৩ নামে পরিচিত। ২০০২ সালে ইতালির এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন এক গ্রাম করে সম্পূরক ওমেগা-৩ তেল খেলে সাম্প্রতিককালে হৃদরোগে বেঁচে যাওয়া রোগীদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমে যায়। তবে এসব কিছুর চাইতে বড় পরামর্শ হচ্ছে কম করে খান এবং বেশি করে ব্যায়াম করুন। বেশি ওজনও প্রদাহের কারণ ঘটায়। ব্যায়াম শরীরের ওজনকে প্রভাবিত করা ছাড়াও প্রদাহ নাশক হিসেবেও ভূমিকা রাখে। অসংখ্য গবেষণায় এটা দেখা গেছে। তাছাড়া ব্যায়াম হৃদরোগের হাত থেকেও শরীরকে সরাসরি রক্ষা করে। যাদের হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত তাদের ডায়েট ও ব্যায়ামের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। তবে বেশিরভাগ মানুষের জন্য এর চেয়ে ভাল ওষুধ আর হতে পারে না। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×