ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নয়, ভূখন্ড চাই, নীতি গ্রহণ বর্মী সেনার , রাখাইনে সেনা বর্বরতা অব্যাহত, সীমান্তের সব পয়েন্টে স্থলমাইন পোঁতা হচ্ছে প্রকাশ্যে . রাচিদং ও জেডিপিইন ‘বাঙালীমুক্ত’ ঘোষণা , রোহিঙ্গাদের জমিজমার মালিকানা চলে যাচ্ছে

বাংলাদেশ ফাঁদে পা দেবে না ॥ মিয়ানমারের উস্কানি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

 বাংলাদেশ ফাঁদে পা দেবে না ॥ মিয়ানমারের উস্কানি

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী চলমান গণহত্যা ও বর্বরোচিত ঘটনাবলীর পাশাপাশি সে দেশের সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকায় উস্কানিমূলক আচরণও চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ‘রোহিঙ্গা নয় ভূখ- চাই’ নীতি গ্রহণ করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। যে কারণে রাখাইনে সহিংস ও বর্বরোচিতভাবে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ চালানোর অমানবিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সঙ্কট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। সম্পূর্ণ অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তের বর্তমান সঙ্কট ও সমস্যা। এর অবসানে বাংলাদেশ যতই সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করে যাচ্ছে মিয়ানমারের পক্ষে ততই বিপরীতমুখী তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে। সঙ্গত কারণে ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মহলে প্রশ্ন উঠেছে, মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বড় ধরনের অনাকাক্সিক্ষত কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে কিনা। আন্তর্জাতিক সংস্থার আইনকানুন লঙ্ঘন করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে ফাঁদে ফেলার পথ বেছে নিয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। আর এ কারণে এ পর্যন্ত ১৮ দফায় মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে, পাঠিয়েছে ড্রোনও। দুই দেশের সীমান্তে চলাচলের সবকটি পয়েন্টে মানববিধ্বংসী মাইন পোঁতা প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সীমান্তের ওপারে নোম্যান্সল্যান্ডসংলগ্ন এলাকায় হাজার হাজার মাইন পোঁতার বিষয়টি রোহিঙ্গাদের জন্য ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। একটি শক্তিশালীসহ দুই দেশের ‘ওয়ান রোড, ওয়ান বেল্ট’ এবং ‘ইন্দো-মিয়ানমার ফ্রেন্ডশিপ’ সংহত রাখার জের হিসেবে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনী রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের সমূলে উৎখাতের হিংস্র ছোবল মারছে বার বার। ১৯৬২ সাল থেকে অভিবাসীবিরোধী নীতি গ্রহণ করার পর দফায় দফায় রোহিঙ্গাদের ওপর নেমে এসেছে নানামুখী বর্বরতা। এবার চলছে রক্তাক্ত অভিযান। এ অভিযান সরাসরি রোহিঙ্গা ক্লিন অপারেশনে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণের পথ বেছে নিলেও মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনী অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বার বার সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে চলেছে। সামরিক জান্তা বাহিনী এতটাই তৎপর যাতে যে, বাংলাদেশ পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমারের নাগরিক অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে, বাংলাদেশ সরকারের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গার লক্ষ্যেই মিয়ানমার সরকারের এ অপতৎপরতা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে এখনও অটল অবস্থানে রয়েছে। এরপরও মিয়ানমার সরকারের পক্ষে প্রতিনিয়ত গায়ে পড়ে সঙ্কট তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অপরদিকে, রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গা নিধন ও জ্বালাও-পোড়াও অব্যাহত রয়েছে। বিদেশী শক্তিশালী কয়েক দেশের শক্ত খুঁটির জোরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ক্রমাগত বেপরোয়া অবস্থান বেছে নিচ্ছে। ইতোমধ্যেই মংডুর রাচিদং শহর ও জেডিপিইন এলাকাকে রোহিঙ্গা তথা তাদের ভাষায় ‘বাঙালীমুক্ত’ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় পুরো রাখাইন রাজ্যকে তারা রোহিঙ্গামুক্ত করার নীলনক্সা বাস্তবায়ন করে চলেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং লাইং ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তিনি আবারও বলেছেন, ‘চরমপন্থী বাঙালী’রা মিয়ানমারে সন্ত্রাসে লিপ্ত। আর রোহিঙ্গা জাতিসত্তা মিয়ানমারে কখনও ছিল না। তিনি এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সে দেশের সকল নাগরিক এবং সংবাদমাধ্যমগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন। এদিকে, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে সাগরপথে টেকনাফ উপকূল দিয়েই বিভিন্ন নৌযানযোগে রোহিঙ্গা আগমন বেড়েই চলেছে। স্থলসীমান্ত এলাকাজুড়ে মাইন পুঁতে রাখার ঘটনা ভীতসন্তস্ত্র রোহিঙ্গারা সাগর পথকেই বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। রবিবারও দলে দলে এ পথে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। জ্বালাও-পোড়াও ও গণহত্যা অব্যাহত ॥ রাখাইন রাজ্যের চার জেলাসহ বুচিদং, রাচিদং, মংডু ও সিটওয়েতে ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ চালানোর পর এখন চলছে আনাচে কানাচে। মিয়ানমারের লোকজন রোহিঙ্গাসহ রাখাইন অঞ্চলের অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠী সদস্যদের ‘কালার’ বলে অভিহিত করে থাকে। এদের সমূলে উচ্ছেদ করে ভূমি দখলনীতি গ্রহণ করেছে আউং সান সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকার সামরিক অভিযানের মাধ্যমে। শরণার্থীর সংখ্যা ॥ গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যজুড়ে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বাংলাদেশে। তবে এ সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে জাতিসংঘ ইতোমধ্যে তাদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। আইওএম, ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকেও অনুরূপ তথ্য দেয়া হচ্ছে। রাখাইন রাজ্যজুড়ে সর্বোচ্চ ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসতি ছিল। বর্তমানে তা এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। অবশিষ্ট রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে পালিয়ে আসার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। মৃতের সংখ্যা ॥ রাখাইন রাজ্যে সেনা বর্বরতায় মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তবে জাতিসংঘ এ সংখ্যা রবিবার পর্যন্ত ৫ হাজার বলে উল্লেখ করেছে। বীভৎস কায়দায় রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুদের হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া নাফ নদী ও নদীর মোহনায় সাগর দিয়ে রোহিঙ্গার লাশ ভেসে আসার সংখ্যা ১২০ জনে উন্নীত হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের হত্যা করে তাদের নৌকাবোঝাই করে এ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি সাগরে উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে ছোট ছোট নৌকাযোগে আসার পথে কত রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাব ॥ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যের ৮০টি পয়েন্টে সেনা ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়েছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার ঘরবাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল এবং ব্রিটেনের হাউস অব লর্ডসের সদস্য নাজির আহমেদ পৃথক পৃথকভাবে বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে কমপক্ষে ১০ হাজার রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। তারা স্পষ্টভাবে এ ঘটনাকে জেনোসাইড হিসেবে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার আবেদন জানিয়েছেন। সহিংসতা ময়্যু পর্বত নিয়েও ॥ রাখাইন রাজ্যে সবচেয়ে বড় পর্বতের নাম ময়্যু। এ ময়্যু পর্বতকে ঘিরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীদের যত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। মংডু ও রাচিদং উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ময়্যুর অবস্থান। ময়্যুর পশ্চিম ও দক্ষিণে মংডু ও বুচিদং উপজেলা। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু, বুচিদং ও রাচিদংÑএ তিন জেলায় রোহিঙ্গারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের স্বাভাবিক কর্মকা-ে লিপ্ত। এদের মধ্যে অনেকে ধনিক শ্রেণীরও রয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী বহু আগে থেকেই রোহিঙ্গা নিধনে নেমেছে। সেনাবাহিনীর কাউন্টার টেররিজম অপারেশনের নামে ময়্যুর পর্বতটিকে ঘিরে রোহিঙ্গাদের ওপর একতরফা বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিদিন দলে দলে রোহিঙ্গারা প্রাণ হারাচ্ছে। সীমান্ত এলাকাজুড়ে মাইন স্থাপন ॥ মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রকাশ্যে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার অপর পাশে স্থলমাইন পোঁতার কাজে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা রয়েছে ২৭১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৩ কিলোমিটার জলসীমা। অবশিষ্ট ২০৮ কিলোমিটার এলাকা হচ্ছে দুর্গম পাহাড়ী অরণ্য ও বিচ্ছিন্ন জনপথ। সীমান্তের এপারে রয়েছে বান্দরবান জেলার নিয়ন্ত্রণাধীন চারটি উপজেলা যথাক্রমে নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, থানছি ও রুমা। সীমান্তের জিরো পয়েন্টসংলগ্ন এলাকায় হাজারে হাজারে স্থলমাইন পোঁতার ঘটনায় এপারের স্থায়ী বাসিন্দারা আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছে। আর জিরো পয়েন্টে অবস্থানকারী অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় থাকা রোহিঙ্গারা রয়েছে মৃত্যুফাঁদে। এইচআইভি পজেটিভে আক্রান্ত বহু রোহিঙ্গা নারী ॥ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের একটি অংশ এইচআইভি পজেটিভে আক্রান্ত বলে চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনা এ অঞ্চলের জন্য বড় ধরনের একটি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরুষদেরও অনেকে এ রোগে আক্রান্ত। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে এ ধরনের এক রোহিঙ্গা নারীকে এ রোগে শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ আবদুস সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে অনেকে হাম ও পোলিওতে আক্রান্ত। সিভিল সার্জন আরও জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের জন্য ৩২টি মেডিক্যাল টিম সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ২০ হাজার হামের টিকা ও ৪০ হাজার পোলিও ভ্যাকসিন এবং ৩৮ হাজার ভিটামিন-এ ক্যাপসুল বিতরণের কর্মসূচী শুরু হয়েছে। টেকনাফে এ পর্যন্ত ১২০ রোহিঙ্গার লাশ ॥ নাফ নদী ও মোহনায় প্রতিদিন রোহিঙ্গা লাশ ভেসে আসছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পথে এ পর্যন্ত ২৩টি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। নৌকাডুবিতে প্রাণ হারানো ১২০ রোহিঙ্গা শিশু নারী ও পুরুষের লাশ উদ্ধার হয়েছে। টেকনাফ থানার ওসি মোঃ মাঈনউদ্দিন জানিয়েছেন, বর্তমানে অধিকাংশ লাশ ভেসে আসছে টেকনাফ উপকূলে। টেকনাফ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সীমান্তের উভয় এলাকার অসাধু কিছু মাঝি রোহিঙ্গাদের এ দেশে অনুপ্রবেশ করতে তৎপর রয়েছে। নদী ও সাগরপথে যারা ঢুকছে তাদের টেকনাফের হোয়াইক্যং, পুটিবনিয়া অস্থায়ী ক্যাম্পে বিজিবির তত্ত্বাবধানে রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জমির মালিকানা চলে যাচ্ছে ॥ সীমান্তের ওপার থেকে রবিবার প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যজুড়ে রোহিঙ্গাদের জমিজমা ও বসতবাড়ির মালিকানার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে সরকার। রোহিঙ্গাদের মালিকানা এসব জমিজমা, পাহাড় ও বাড়িঘর সেখানকার কিন্স, বামস সম্প্রদায়ের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আগামীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যদি ফিরিয়ে নিতে হয়, তা প্রত্যাবাসনের পূর্বেই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ নিজ জমিজমায় ও বসতঘরে থাকার আর সুযোগ দেয়া হবে না। ইতোমধ্যেই রাচিদং ও জিডিপিইন এলাকায় লাল পতাকা ও রাখাইন রাজ্যের পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রাখাইনরা সেখানে রীতিমতো উল্লাসে মেতে উঠেছে। এ প্রক্রিয়ায় তারা রাখাইনের অন্যান্য রোহিঙ্গা বসতিগুলোতেও অনুরূপ প্রক্রিয়ার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। পাহাড়ী ঢলে ৩ শিশুর মৃত্যু ॥ মিয়ানমারের তমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। রবিবার সকাল থেকে ব্যাপক বর্ষণের ফলে নেমেছে ঢল। ঢলের তোড়ে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে ২ রোহিঙ্গা শিশু। এদের পরিচয় জানা গেছে। এরা আবদুল জব্বার নামের এক রোহিঙ্গার তিন শিশু সন্তান। ছদ্মবেশী দুই মিয়ানমার সাংবাদিক জেলে ॥ উখিয়া সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছে ছদ্মবেশী দুই মিয়ানমার সাংবাদিক। এরা জার্মানির সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ছবি তোলা ও ছবি সংগ্রহে লিপ্ত ছিল। মিনজাইয়ার উ এবং হকুনলাট নামে এই দুই গণমাধ্যমকর্মী জার্মানির হামবুর্গভিত্তিক জিও সাময়িকীতে কাজ করেন বলে দাবি করেছেন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজুল হক টুটুল জানিয়েছেন, অবৈধপথে এরা বাংলাদেশে এসেছে। তাদের গ্রেফতার করে রবিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। তারা নিজেদের পরিচয় গোপন করে ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসেছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ-আরাকান সংহতি পরিষদ ॥ বাংলাদেশ-আরাকান সংহতি পরিষদ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে রবিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের প্রতিবাদে সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। এ মানববন্ধন ও সমাবেশে রোহিঙ্গা নিধনের নায়ক আউং সান সুচির ফাঁসি দাবি করা হয়েছে। বিভিন্ন বক্তা সমাবেশে বলেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনী আরাকান রাজ্য থেকে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে চায়। তারা এ পর্যন্ত ৫০ হাজার রোহিঙ্গা যুবককে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে করেছে শরণার্থী। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- আবদুর রহমান চৌধুরী, মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরী, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক কেএম আলী হাসান, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, মোঃ হারুনুর রশীদ, মাওলানা নুর মোহাম্মদ প্রমুখ।
×