ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের ওপর অবরোধ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের ওপর অবরোধ

সামরিক জান্তা নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যেভাবে চলছে গণহত্যা এবং নিজ দেশ থেকে করা হচ্ছে উচ্ছেদ, তা বিশ্ববাসীর বোধকে নাড়া দিয়েছে এবং বাড়িয়েছে উদ্বেগ। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার যে পথ ও পন্থা গত চার দশক ধরে দেশটি চালিয়ে যাচ্ছে, তার ভয়াবহতার চূড়ান্ত রূপ আবারও পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্বরতা, নৃশংসতা ও নির্মমতার যে আবহ তৈরি করেছে মিয়ানমার তা সারাবিশ্বের মানুষকে হতবাক করছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি করে মিয়ানমার দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তাকে আশঙ্কাজনক করে তুলেছে। যার আঁচ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোর কেউ রক্ষা পাবে না। জাতিসংঘ মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধের জন্য বার বার চাপ দিয়ে এলেও মিয়ানমার তা গ্রাহ্য না করে উপেক্ষা করেই যাচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে আগুন জ্বালিয়ে। ঘরবাড়িতে দগ্ধ হয়েও মারা যাচ্ছে মানুষ। ঘর থেকে কেউ বেরিয়ে এলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সদস্য দেশগুলো একমত হয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে গণহত্যা বন্ধ ও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে, তাতে মিয়ানমারের জান্তা শাসকরা কর্ণপাত করছে না। তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, যা মারাত্মক অপরাধ। দুনিয়া থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা, এক অদ্ভুত ব্যারাকীয় গণতান্ত্রিক আবহ তৈরি করা মিয়ানমার এখন যে কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে, তাতে সেই কৌশলের নিরাপদ খুঁটি হয়ে উঠতে যাচ্ছে। এটা তো বাস্তব যে, বড় শক্তির কৌশলগত কর্তৃত্বের আগে সেই অঞ্চলে তৈরি হয় অস্থিরতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা। আর সে কারণেই বাংলাদেশকে ঘিরে যখন অস্থিরতা তৈরি হতে লাগল, তখন এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হলো। তবে শেষ অবধি বাংলাদেশের অস্থিরতাকে পুঁজি করে আপাতত নেপো যে দই মারতে পারছে না, তা বছর দুয়েক আগে স্পষ্ট হয়ে যায়। যদিও নেপো তাতে ক্ষান্ত হয়নি। তবে এবার কেবলই কৌশলটা বদলানো হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে ভারত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে বিশ্ব শক্তিগুলোর যে প্রস্তুতি তার কৌশলগত কেন্দ্র বাংলাদেশ ও মিয়ানমার লাগোয়া বঙ্গোপসাগর। আর একে কেন্দ্র করে বৃহৎ শক্তির কৌশলগত কর্তৃত্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল যদি বাংলাদেশের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তার কবল থেকে প্রতিবেশী ভারত কি নিরাপদে থাকবে কি-না, সে প্রশ্ন জাগে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা সব মিলে ৯ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপের বিষয়টি বিবেচনার জন্য ইইউভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এই মানবিক বিপর্যয়ের মুখে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সুরক্ষা সুগমে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দিয়েছে। অন্যান্য দেশের প্রতিও রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ঢুকতে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এই মানবিক সঙ্কটকে মর্মান্তিক বিপর্যয় অভিহিত করে কঠোর নিন্দা জানানো হয়েছে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ পার্লামেন্টের বৈঠকে। প্রস্তাবে মিয়ানমারের সকল সহিংসতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষের সরাসরি নিন্দা জানাতে প্রস্তাব পাস করা হয়। যাতে গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া দ্রুত বন্ধে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানো শুধু নয়, তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবার জন্যও পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী বলে মনে করে। কারণ, সার্বিক অবরোধ গ্রহণের পরও যদি মিয়ানমার তাদের অবস্থানে অটল থাকে, তবে তা বিপর্যয়কে আরও ঘনীভূত করবে। বাংলাদেশের পক্ষে তার সর্বস্ব সামর্থ্য সত্ত্বেও আগে ও বর্তমানে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিলেও দীর্ঘদিন এদের ভরণপোষণ ও আবাসনের ভার বইতে পারা কঠিন। ইইউ দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বিশ্ববাসী তাই আশা করে।
×