ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাস্তায় রক্ত বইছে

এক রোহিঙ্গা গ্রামে বিভীষিকময় দিন

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

এক রোহিঙ্গা গ্রামে বিভীষিকময় দিন

গ্রামবাসীরা জানান, সৈন্যরা সেদিন ভোর ঠিক ৮টার পর মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে এ গ্রামে এসে উপস্থিত হয়। তারা অভিযান শুরুর জন্য প্রস্তুত। তারা প্রথমে ফাঁকাগুলি ছোড়ে এবং এরপর পলায়নরত বাসিন্দাদের দিকে অস্ত্র তাক করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। সবুজ ধানক্ষেতে তারা গুলি খেয়ে মারা পড়ল বা আহত হল। পুলিশের চৌকিতে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের হামলার প্রতিশোধ গ্রহণের পরদিন এভাবেই অভিযানে নামে সামরিক বাহিনী। কৃষক মোহাম্মদ রশিদ (৫৫) গুলিবর্ষণের শব্দ পেয়ে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পালায়। কিন্তু তার ৮০ বছর বয়সের বাবার পালিয়ে যাওয়ার শক্তি ছিল না। হাঁটতেন তিনি লাঠিতে ভর করে। রশিদ বলেছেন, এক সৈন্য তার বাবাকে ধরে ফেলে এবং এমন নৃশংসতার সঙ্গে তার গলা চিরে ফেলে যে বলা যায়, তাকে শিরñেদ করা হয়েছে। রশিদ বলেন, আমি বাবাকে বাঁচাতে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন আমাকে বাধা দেয়। কারণ সেখানে সৈন্য ছিল অনেক। এটা আমার জন্য সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা, আমার বাবাকে বাঁচাতে কিছুই করতে পারিনি আমি। জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মংডু ও অন্য কয়েক ডজন গ্রামে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ নির্মূল অভিযানে প্রায় ৪ লাখ লোক দেশ ছেড়ে পালিয়ে শরণার্থী হয়েছে বাংলাদেশে। জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান এ ঘটনাকে জাতিগত নির্মূলকরণ বলে উল্লেখ করেছেন। শরণার্থী সংখ্যা আগামী দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরা বিমূঢ় অবস্থায় তাদের যথাসাধ্য মালপত্র সঙ্গে নিয়ে খালি পায়ে, হাঁটু-কাদা ভেঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। তারা বর্তমান বিভিন্ন শিবির ও অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এসে উঠছে যদিও এখানে তাদের সঙ্কুলান হচ্ছে না। অনেকেই বসে আছেন রাস্তার ওপর। স্বেচ্ছাসেবকরা বিশাল বিশাল ত্রাণ ট্রাক থেকে চালের বস্তা ও পানির বোতল নিচে নিক্ষেপ করছে এবং ত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে শরণার্থীরা। মানবাধিকার গ্রুপগুলো বলেছে, মিয়ানমার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ পুরোপুরি নিরূপণ করতে কয়েক মাস বা বছর লেগে যাবে। উপগ্রহ চিত্রে ব্যাপক অগ্নিসংযোগের চিত্র উঠে এসেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, সেনাবাহিনী বেসামরিক লোকদের হত্যা করছে এবং মিয়ানমার সরকার বলেছে ১শ ৭৬টি রোহিঙ্গা গ্রাম জনশূন্য হয়েছে। মৃত্যুর পুরো সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। কারণ, সেনাবাহিনী এলাকাগুলো অবরুদ্ধ করে রেখেছে। নাজমা বেগম তার এক বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তাদের বাড়ি থেকে পালিয়েছেন। বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে মংডু গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১ ডজন বাসিন্দার দু’দিন ধরে সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে। তারা এখানে এসে পৌঁছেছে গত সপ্তাহে মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস বলেছে। মংডু ও পাশ্ববর্তী তিনটি গ্রামে মৃতের সংখ্য ১শ’ ৫০ জনে দাঁড়াবে। স্কুলশিক্ষক সোইউইন বলেছেন, সামরিক বাহিনী কী করছে। আমরা সবই দেখছি। তারা একজন করে রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে এবং রাস্তায় রক্ত বইছে। এ সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরু হয় ২৫ আগস্ট। রোহিঙ্গা জঙ্গী গ্রুপ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি রাখাইন রাজ্যে ৩০টি পুলিশ চৌকি ও সেনা ঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালালে ১২ জন নিহত হয়। এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযান শুরু করে। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির হিসেব মতে, শেষ পর্যন্ত ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যাবে। এ জনসংখ্যা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনসংখ্যার অর্ধেক যাদের অধিকাংশের বাস গোলযোগপূর্ণ রাখাইন রাজ্যে। -ওয়াশিংটন পোস্ট।
×