ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন

নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও ঘুষ দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও ঘুষ দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ১৬ এর দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন বিষয়ক লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো যথেষ্ট পরিপুষ্ট হলেও পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে বিভিন্ন বাধা রয়েছে বলে মত দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে, বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশে দুর্নীতি ও ঘুষ, অর্থপাচার, মৌলিক স্বাধীনতার ব্যত্যয় ও মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট আইন এবং আইন প্রয়োগ ও চর্চায় দুর্বলতা, ঘাটতি, আইনের অপব্যবহার একই সঙ্গে রাজনৈতিক বিবেচনায় আইনের প্রয়োগ প্রভৃতি কারণে লক্ষ্যগুলো অর্জনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। টিআইবি পরিচালিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৬: দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যের ওপর বাংলাদেশের প্রস্তুতি, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এই পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। রবিবার টিআইবির ধানম-ির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাটির প্রতিবেদন প্রকাশকালে এসব তথ্য জানা যায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা ও নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। গবেষণাটি এপ্রিল-আগস্ট ২০১৭ সময়ের মধ্যে পরিচালিত হয়। সম্মেলনে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি, গবেষণা প্রতিবেদন, আন্তর্জাতিক সূচক, দেশভিত্তিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন, জাতীয় তথ্যভান্ডার ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ব্যবহৃত হয়েছে। মুখ্য তথ্যদাতা হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, সরকারী কর্মকর্তা, পেশাজীবী ও সাংবাদিকদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়। গবেষণায় সমস্যা হিসেবে বলা হয়েছে, জাতীয় শুদ্ধাচার কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর নয় এবং এজন্য দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা, নির্বাহী বিভাগ ও প্রশাসনের আধিপত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কোন কাঠামো নেই এবং এসব প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা ব্যবস্থাও দুর্বল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশও পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থপাচার এবং সম্পদ পুনরুদ্ধারসহ কয়েকটি বিষয়ে সরকারের কাছে আংশিক তথ্য থাকলেও দুর্নীতি ও ঘুষ, সরকারী সেবা ও প্রতিষ্ঠানের ওপর জনগণের সন্তুষ্টি এবং বিচার-বহির্ভূত হত্যাকা- বিষয়ে কোন তথ্য নেই। সার্বিকভাবে এসডিজি বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য ২শ’ ৪১টি সূচকের মধ্যে সরকারের কাছে ৭০টি সূচকের ওপর সম্পূর্ণ এবং ১শ’ ৮টি সূচকের ওপর আংশিক তথ্য রয়েছে। ৬৩টি সূচকের ওপর সরকারী কোন তথ্যই নেই। গবেষণায় এসডিজি বাস্তবায়নে বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। এতে বলা হয়, আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে এবং অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অর্থপাচারের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া অর্থপাচার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে চিহ্নিত প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে জাতীয় ও খাতভিত্তিক ঝুঁকি পর্যালোচনায় ঘাটতি যেমন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর রাজনীতিকরণ, দুর্নীতিতে রাজনৈতিক-প্রশাসনিক আঁতাত, সিকিউরিটিজ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের রাজনীতির সঙ্গে ত্রিমুখী সম্পৃক্ততা প্রভৃতি চিহ্নিত না করা, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি বা বোর্ডে রাজনৈতিক নিয়োগ চিহ্নিত না করা এবং অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলার তদন্ত ও নিষ্পত্তিতে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর মামলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা, তদন্তের শুরুতে কার্যকরভাবে অর্থপাচার সংক্রান্ত অপরাধের তথ্য যাচাই না করা, অবৈধ অর্থের উৎস সন্ধান ও ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি, দুদক ও এনবিআর এর মতো নিয়ন্ত্রক ও তদারকি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার ঘাটতি ও নিজস্ব মামলা পরিচালনা ইউনিট না থাকা। এছাড়া এসডিজিতে সকল প্রকার দুর্নীতি ও ঘুষ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস করার কথা বলা হলেও গবেষণায় দেখা যায়, ঘুষ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে যথেষ্ট আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, কৌশল এবং অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। সরকারী-বেসরকারী খাত ও প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিতে গিয়ে সেবা গ্রহীতারা খানা পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়াও দুর্নীতির ওপর একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত গবেষণায়ও বাংলাদেশকে উচ্চ-দুর্নীতিপ্রবণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম প্রত্যাশিত পর্যায়ের নয়। গবেষণায় সম্প্রতি দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম বৃদ্ধি হিসেবে তথ্য পাওয়া গেছে। দুর্নীতি ও ঘুষ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য না হওয়া; বিদ্যমান আইনে কয়েকটি বিভাগের কর্মচারীদের আওতামুক্ত রাখা, নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ সদস্যদের আর্থিক তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা না থাকা। সরকার প্রধান এবং মন্ত্রিসভার সদস্যগণ নিজেদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ না করা, মামলা জটের কারণে বিচার বিভাগের কার্যকরতা প্রত্যাশিত পর্যায় না থাকা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা প্রদান, সম্পদ বরাদ্দ, ক্রয় ও বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীলতা, সরকারী কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকরতাও প্রত্যাশিত না হওয়া, দেশে অপরাধ সংঘটনের হার প্রায় অপরিবর্তিত থাকা, বিচার-বহির্ভূত হত্যা, বিনা বিচারে আটকে রাখা ও গুমের অভিযোগ থাকলেও এ সম্পর্কে পরিসংখ্যান প্রকাশ না করা। এএবিএল এওয়ার্ডপেলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান মিস জেনিফার হোসেন, কমিউনিকেশন ম্যানেজার, অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব বিজনেস লিডারশিপ (এএবিএল), বাংলাদেশ প্রফেসর আবদুল মান্নান, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে রবিবার ইউজিসিতে এক অনুষ্ঠানে সার্টিফিকেট এবং ক্রেস্ট হস্তান্তর করেন। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব বিজনেস লিডারশিপ প্রফেসর আবদুল মান্নানকে এ এওয়ার্ড প্রদান করে। -বিজ্ঞপ্তি
×