ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সিঙ্গাপুর ও বেলজিয়ামের দুই কোম্পানিকে কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে

ছোট জাহাজ ব্যবহার করে ৬ মাসের মধ্যে এলএনজি আনা হবে

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ছোট জাহাজ ব্যবহার করে ৬ মাসের মধ্যে এলএনজি আনা হবে

রশিদ মামুন ॥ ছয় মাসের মধ্যে স্মল স্কেল ক্যারিয়ার (ছোট আকারের জাহাজ) ব্যবহার করে এলএনজি আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশের তৈরি অবকাঠামো ব্যবহার করে এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করা হবে। এজন্য সিঙ্গাপুর ও বেলজিয়ামের যৌথ মূলধনী কোম্পানি গুনভোর ও এক্সমার মেরিন এবং সিঙ্গাপুরের ট্রাফিগুরা পিটিই লিমিটেড নামের দুটি কোম্পানিকে কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বলা হচ্ছে- চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে সিএফইউএল এবং কাফকো সার কারখানার জেটি ব্যবহার করে এই এলএনজি সরবরাহ করা হবে। এতে প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। দ্রুত গ্যাস আনা সম্ভব হলে সঙ্কট সামাল দেয়া সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এলএনজি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস। এই গ্যাস খনি থেকে জাহাজে তরল অবস্থায় আনা হয়। এরপর পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। জানতে চাইলে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, স্মল স্কেল এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে দুটি ক্যারিয়ার ব্যবহার করা হয়। একটি বড় ক্যারিয়ার সাগরের অভ্যন্তরে থাকে। সেখান থেকে অন্য একটি ছোট ক্যারিয়ারে করে এলএনজি আনা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী সমুদ্রগামী বিদেশী জাহাজ একবার বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর আবার কোন বিদেশী জাহাজে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি ক্যারিয়ারই বিদেশী হলে কোন সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে কামরুজ্জামান বলেন, আইন মেনেই কাজ করা হবে। দেশে এলএনজি পরিবহনের কোন ক্যারিয়ারও নেই। সঙ্গত কারণে বিষয়টি নিশ্চয়ই বিবেচনা করা হবে বলে মনে করেন তিনি। জানা যায়, বড় এলএনজি ক্যারিয়ারের জন্য ১৬ থেকে ২০ মিটার ড্রাফট থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে ড্রেজিং ছাড়া খুব কম স্থানে এমন ড্রাফট রয়েছে। কেবলমাত্র মহেশখালী এবং কুতুবদিয়া এলাকা থেকে বঙ্গোপসাগরের ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে এই ড্রাফট রয়েছে। সরকার এজন্য মহেশখালী এবং কুতুবদিয়া এলাকায় কয়েকটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। মহেশখালীতে এখনও পর্যন্ত মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট, দেশীয় সামিট গ্রুপ এবং ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্স গ্রুপ ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এর বাইরে কুতুবদিয়াতে স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীতে সাড়ে আট মিটার ড্রাফটে যে জাহাজ উপযুক্ত সেই জাহাজই কোম্পানি দুটি এলএনজি পরিবহন করবে। এসব কোম্পানির এফএসআরইউ থাকবে সাগরের মধ্যে। পেট্রোবাংলা স্মল স্কেল এলএনজি আমদানির জন্য আগ্রহপত্র চাইলে ১৩টি কোম্পানি সাড়া দেয়। এর মধ্যে চারটি কোম্পানি প্রস্তাব জমা দেয়। শেষ পর্যন্ত বাছাই প্রক্রিয়া শেষে এই দুটি কোম্পানিকে মনোনীত করা হয়। বলা হচ্ছেÑ সাঙ্গুর পরিত্যক্ত গ্যাস ক্ষেত্রের অবকাঠামো ব্যবহার করেও এলএনজি সরবরাহ করা যায়। এজন্য আগ্রহপত্র চাওয়া হবে বলে জানা গেছে। দরপত্র ছাড়াই বিদ্যুত-জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ বিধান-২০১০ অনুসরণ করে সরাসারি দর কষাকষির মাধ্যমে কোম্পানি দুটির সঙ্গে এলএনজি ক্রয় চুক্তি করা হবে। চট্টগ্রাম এলাকায় বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো গ্যাসের অভাবে কয়েক বছর ধরেই পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন করতে পারছে না। দৈনিক ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ পেলে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র চালানো সম্ভব। এছাড়া গ্রীষ্মে বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে সার কারখানা বন্ধ রাখতে হয়। ছয় মাসের মধ্যে এই গ্যাস পাওয়া গেলে বিদ্যুত এবং সার উৎপাদনে গ্যাসের সঙ্কট অনেকটা কমে যাবে। এর আগে দুটি কোম্পানির সঙ্গে এফএসআরইউ নির্মাণ চুক্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে এক্সিলারেট এবং সামিট পাওয়ারের এলএনজি টার্মিনাল প্রস্তুত হবে ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ। এই দুটি কোম্পানিই মহেশখালীতে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে এর আগেই গ্যাস আনার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম খুলনা এবং বরিশাল এলাকায় স্মল স্কেল এলএনজি ক্যারিয়ার আনা সম্ভব নয়। পায়রা এবং মংলাতেও ড্রাফটের সমস্যা রয়েছে। এছাড়া এই দুই জায়গাতে সরাসরি গ্রিডের সঙ্গে সংযোগের ব্যবস্থাও নেই। ড্রেজিং করে এলএনজি আনার ব্যবস্থা করা হলেও এসব জায়গায় ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করতে হবে। যেখানে কয়েকটি বড় নদী রয়েছে। নদীপার করে পাইপলাইন নির্মাণ ব্যয়বহুল বিবেচনা করে এখনই এ এলাকা নিয়ে ভাবা হচ্ছে না। তবে পায়রা বন্দরের ড্রেজিং শেষ হলে সেখানে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ সম্ভব। পেট্রোবাংলার পরিকল্পনায় পায়রাতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উল্লেখ রয়েছে। বন্দর নির্মাণের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ায় এখনও পর্যন্ত আগ্রহী কোন কোম্পানি পায়রাতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে রাজি হয়নি।
×