ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি নাসিম

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দিন

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আশাবাদ ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। তাদের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। রবিবার রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে দু’দিনব্যাপী নবম ওয়ান হেলথ সম্মেলনের উদ্ভাধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে যেতে সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে জাতিসংঘ, ইইউ, মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশ এগিয়ে এসেছে। ভারত এবং চীনও মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু শুধু সহায়তা নয়, বিশ্বের সব রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা সবাই মিয়ানমার সরকারের ওপর এমন চাপ সৃষ্টি করুন যাতে তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিরতণ কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চল পরিদর্শন করে মনে হয়েছে, একাত্তরে আমাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ যেভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল একইভাবে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারাও শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের মধ্যে কয়েক হাজার সন্তানসম্ভবা নারীও রয়েছেন। কিভাবে এ পরিস্থিতি সামাল দেব, কিভাবে তাদের নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করব জানি না। তবে সরকার তাদের সর্বাত্মক সহায়তা দেবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সরকার নিজ দেশের নাগরিকদের যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করছে, দেশ থেকে বিতাড়িত করছে। রোহিঙ্গাদের দেখলে আবেগতাড়িত হতে হয়। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ের মমতায় বোনের স্নেহ নিয়ে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও পক্ষে এটি সম্ভব হতো না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতরের মহাপরিচালক গোলাম মারুফ, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ আইনুল হক, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ, প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরী, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চীফ অব মিশন জোয়েল রিফম্যান, এফএও প্রতিনিধি সু লজ, ইউনিসেফ প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বিগবেডার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডাঃ. এন পারানিথারান, ওয়ান হেলথের সমন্বয়কারী অধ্যাপক নিতীশ চন্দ্র দেবনাথ, আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে জানানো হয়, মানব স্বাস্থ্য নির্ভর করে প্রাণির স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের ওপর। এ ধারণাটি এখন বিশ্বব্যাপী এক স্বাস্থ্য (ওয়ান হেলথ) নামে পরিচিত। ২০০৭ সাল থেকেই সারা পৃথিবীতে ওয়ান হেলথ কার্যক্রমে বাংলাদেশ সামনের কাতারে আছে। সরকারী ব্যবস্থার ভেতরে ও বাইরে ওয়ান হেলথকে প্রাতিষ্ঠানিক করার ব্যাপারে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। সাম্প্রতিককালে নতুন নতুন রোগের (এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, মার্স-কোভি, ইবোলা প্রভৃতি) প্রাদুর্ভাবের কারণে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। ওষুধ প্রতিরোধী সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে জনস্বাস্থ্য সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকার কারণে খাদ্য সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা তথা মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মানুষ-প্রাণি-পরিবেশের ওপর পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) মানব-প্রাণি-পরিবেশকে সমন্বিত করে ওয়ান হেলথ ধারণাকে এগিয়ে নিতে চমৎকার সুযোগ এনে দিয়েছে। তাই ওয়ান হেলথ’র মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। এ আহ্বান নিয়ে ওয়ান হেলথ’র নবম সম্মেলন বাংলাদেশ সময়ের চাহিদা পূরণ করেছে। ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ সংগঠনটি একটি বহুপাক্ষিক ও বহুক্ষেত্রীয় ফোরাম। সংগঠনটি মানব স্বাস্থ্য, প্রাণি স্বাস্থ্য ও বাস্তুতন্ত্র স্বাস্থ্যের (ইকো সিস্টেম) মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে কাজ করছে। মানবস্বাস্থ্য, প্রাণিস্বাস্থ্য, বন্যপ্রাণিস্বাস্থ্য ও পরিবেশ পেশাজীবীগণ, সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর শিক্ষক-বিজ্ঞানীবৃন্দ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সমন্বয়ে এ সংগঠনটি ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করেছে। ওয়ান হেলথ’র নবম সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ, প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা, সম্ভাব্য সমাধানগুলো খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে। আর এ সবই করা হবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য। এ বছরের সম্মেলনে তুলে ধরার জন্য পাঁচটি বিষয় নির্বাচিত করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- নব উদ্ভূত সংক্রামক ব্যাধিসমূহ ও প্রাণিবাহিত রোগ, খাদ্য সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা, অণুজীববিরোধী প্রতিরোধ ও একে বাড়তে না দেয়া, বাস্তুতন্ত্র স্বাস্থ্য (ইকো সিস্টেম)ও এর সংরক্ষণ এবং ওয়ান হেলথ পরিচালনা, প্রচার, গণসংযোগ ও কর্মপন্থা। সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতি ৮ মাসে পৃথিবীতে একটি করে নতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে আর গত ২৫ বছরে বিশ্বে যোগ হয়েছে ৩৫টি নতুন রোগ। আর এ সমস্ত রোগের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ রোগের জন্ম প্রাণি থেকে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন নতুন রোগ যেমন এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, মার্স-কোভি, চিকুনগুনিয়া, নিপাহ ভাইরাস, ইবোলার মতো রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, রোগ ছড়িয়ে পড়ছে দেশ থেকে দেশে। আর প্রাণি থেকে যেসব রোগ হচ্ছে সেগুলো কেবল গৃহপালিত প্রাণি থেকে নয়, বুনো পশু থেকেও মানুষের নানা রোগ হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৪ দলের ত্রাণ বিতরণ কক্সবাজার থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি। ও সময় বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ)-এর চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারি, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, চট্টগ্রামের সাংসদ মাঈনুদ্দীন খান বাদল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি, পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননসহ ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন। শনিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে তারা কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে তাদের অভ্যর্থনা জানান কক্সবাজার জেলা ১৪ দলীয় নেতৃবৃন্দ। এরপর নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান ১৪ দলের নেতারা। সেখানে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
×