ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

উদ্যোক্তাবান্ধব ভেঞ্চার ক্যাপিটাল

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

উদ্যোক্তাবান্ধব ভেঞ্চার ক্যাপিটাল

জনবহুল এদেশে যখন কর্মসংস্থান অপ্রতুল তখন নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ধারার আমূল পরিবর্তন এসেছে। উন্নত দেশগুলোতে এখন ভেঞ্চার ক্যাপিটালের রমরমা অবস্থা। একজন উদ্যোক্তার মাথায় যখন ব্যবসায়িক বুদ্ধি আসে, তখন নিজের সাধ্যমতো অর্থ দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তার পর হাত পাতেন পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের কাছে। এর পর চড়াই-উতরাই পার করার পর ব্যবসায় সাফল্য এলে উদ্যোক্তা আগ্রহী হন ব্যবসাটাকে বাড়ানোর জন্য। কিন্তু এই অর্থের যোগান আসবে কোথা থেকে? অনেকের কাছেই যেতে হয় অর্থের যোগানের জন্য কিন্তু হতাশার বাণী ছাড়া আর কিছুই মেলে না। শেষ ভরসা ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংক যখন দেখে, এখনও ব্যবসা লাভের মুখ দেখিনি আবার ব্যবসার বয়স এখনও দুই বছর পার হয়নি, তখন উদ্যোক্তাকে কোন আশার বাণী শোনাতে পারে না। ব্যাংক এবং লিজিং কোম্পানির সঙ্গে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো; তারা ঋণ দেয় না। তারা কোম্পানির অংশীদার হিসেবে কাজ করে; এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তার কোম্পানি পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে যাতে কোম্পানি লোকসানের মুখে না পড়ে। যেহেতু কোম্পানির সাফল্য মানে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের সাফল্য সেহেতু কোম্পানিকে লাভজনক করার জন্য চেষ্টার কোন ত্রুটি থাকে না। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োজিত কোম্পানিতে চিরদিন অংশীদার হিসেবে থাকার জন্য আসেনা। ভেঞ্চারের বিনিয়োগের পদ্ধতিটা ব্যাংক বা অন্য কোন লিজিং কোম্পানি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যেহেতু ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম উদ্যোক্তার লস (লোকসান) এবং প্রফিট (লাভ) দুটোই সমানভাবে শেয়ার করে সেহেতু বিনিয়োগের ধরন কিছুটা ব্যবসার পরিধি বা আইডিয়ার উপর নির্ভর করে। যেমনÑ ক. একটি আইডিয়া উদ্যোক্তার মাথায় আছে কিন্তু বাস্তবায়ন করার জন্য কিছু ফাইন্যান্স দরকার। খ. ব্যবসার প্রাথমিক পর্যায় পার করে ফেলেছে কিন্তু বিপণন বা বিক্রি শুরু করতে পারেনি। গ. শুরু করেছে এবং বিক্রিও করছে কিন্তু লাভের মুখ এখনও দেখেনি। ঘ. সর্বশেষ ধাপে আপনার আইডিয়া পরীক্ষিত, ভাল আয় করছে, ব্রেক ইভেন হয়েছে বা কাছাকাছি তখনও আপনার ব্যবসাকে ফাইন্যান্স করা হয়। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল (ভিসি) এর মেয়াদ ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হয়। ভিসি ফান্ডে যারা বিনিয়োগ করে তাদের লিমিটেড পার্টনার বা এলপি বলে; আর যারা ফান্ড ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ করে, তাদের জেনারেল পার্টনার বা জিপি বলে। ভেঞ্চার ফার্ম বিনিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। এই বিনিয়োগ সাধারণত ৩ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিনিয়োগ পার্টনারশিপের মাধ্যমে হয় তাই মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সুবিধাজনক সময়ে ফার্ম সে শেয়ার বিক্রি করে বা সমঝোতার মাধ্যমে ভেঞ্চার ক্যাপিটালকে পে-করে একক মালিকানা বা অন্য কোন ব্যক্তি বা ফার্মের সঙ্গে আবার পার্টনারশিপ করতে পারে। শেয়ার সবসময় যে লাভজনক হবে তা কিন্তু নয়; অনেক সময় লসেও শেয়ার বিক্রি করতে হয়। ফেসবুক, গুগল ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মাধ্যমে ক্ষুদ্র আকারে যে যাত্রা শুরু হয়েছিলÑ এখন তা বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীর উদ্ভাবনী উদ্যোগকে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মাধ্যমে অর্থায়ন করা গেলে এখানেও বড় বড় কোম্পানি তৈরি হবে। ক্যাপিটাল এ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিইএবি) সভাপতি শামীম আহসান বলেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রতিবছর অসংখ্য তরুণ-তরুণী কর্মজীবনে প্রবেশ করছে। এদের অনেকেই উদ্যোক্তা হতে চায়, অনেকেরই রয়েছে সৃজনশীল আইডিয়া। কিন্তু অর্থায়ন সঙ্কটে এসব আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে পারেন না। কোন কোন উদ্যোগ ভালভাবে শুরু করেও অর্থাভাবে মাঝপথে থেমে যায়। ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মাধ্যমে এমন উদ্যোগে অর্থায়ন করা গেলে বেশিরভাগ উদ্যোগ সাফল্যের আলো দেখবে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিইএবি) সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন বলেছেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল মূলত প্রাইভেট ইক্যুইটি। বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ আইনের ভাষায় এটিকে অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট নামে অভিহিত করা হয়েছে। এ ধরনের বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে, ২০১৫ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট) রুলস, ২০১৫’ প্রণয়ন করেছে। ইতোমধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের ফান্ড পরিচালনার জন্যে অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিকাশ ঘটলে বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে যেতে পারে। শিল্প ও সেবা খাতে আসতে পারে অভাবনীয় পরিবর্তন। দেশে সৃষ্টি হবে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। তৈরি হবে বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ।
×