ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ

জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রসঙ্গ তুলবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রসঙ্গ তুলবেন প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে যোগ দিতে ১৩ দিনের সরকারী সফরে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো তুলে ধরে তা নিরসনে বাংলাদেশের প্রস্তাব বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নিতে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগের জন্যও বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানাবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দুপুর সোয়া দুইটায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা) আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের সময় বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান- সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মুহাম্মদ শফিউল আলম, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনৈতিক কোরের ডিন এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ। আবুধাবিতে যাত্রাবিরতির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী রবিবার সকাল সোয়া ১০টায় ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেবেন। একই দিন নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে অবস্থান করবেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ১২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। আগামী ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে সাধারণ বিতর্ক, যেখানে এ বিশ্ব সংস্থার ১৯৩টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এবার এমন এক সময়ে বিশ্বনেতারা জাতিসংঘ অধিবেশনে মিলিত হচ্ছেন, যখন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। সফরসূচী অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী আগামী ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। একই দিন তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত জাতিসংঘের সংস্কার বিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের এবং জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘প্রিভেনশন অব সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন এ্যান্ড এ্যাবিউজ’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী অপরাহ্নে কনবেনি কনফারেন্স সেন্টারে ‘গ্লোবাল ডিল ফর ডিসেন্ট ওয়ার্ক এ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের এক ফলোআপ বৈঠকে যোগ দেবেন। এর আগে শেখ হাসিনা ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টবগের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ‘উইমেন্স ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট ফর লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড’-এর ওপর জাতিসংঘ মহাসচিবের উচ্চপর্যায়ের প্যানেলের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন। অপরাহ্নে তিনি জাতিসংঘ সদর দফতরে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ওআইসি কনট্যাক্ট গ্রুপের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবেন। পরে মরিসাসের প্রধানমন্ত্রী প্রভিন্দ কুমার জুগনাউথের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ও কমনওয়েলথের বর্তমান চেয়ার-ইন-অফিস মাল্টার প্রধানমন্ত্রী ড. জোসেফ মাসকেট আয়োজিত কমনওয়েলথ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এরপর সন্ধ্যায় ম্যাডিসন এভিনিউয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত শুভেচ্ছা সংবর্ধনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট স্কয়ারে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইউএনএইচকিউ-তে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণের ওপর চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। পরে ইউএনএইচকিউ-তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট মিজ কেরস্তি কালজুলাইদ-এর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘এসডিজি ইমপ্লিমেন্টেশন, ফাইন্যান্সিং এ্যান্ড মনিটরিং : শেয়ারিং ইনোভেশনস থ্রু সাউথ সাউথ এবং ট্রাইয়াঙ্গুলার কো-অপারেশন’ শীষর্ক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ইউএনএইচকিউ-তে সাউথ সাউথ কো-অপারেশনের ওপর ইউএনডিপি এবং ইউএন অফিসের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে। পরে প্রধানমন্ত্রী ‘ক্রিয়েটিং এ পলিসি ভিশন ফর এসডিজি ফাইন্যান্স : ফ্যাসিলিট্যাটিং প্রাইভেট সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট ইন দ্য এসডিজিস’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ইউএনএইচকিউ-তে ইউএনডিপির সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ ও কানাডা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ) আয়োজিত একটি গোলটেবিল মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। পরে উন্নয়নের জন্য সার্বিক অর্থায়ন বিষয়ক জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমার সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন তিনি। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী ইস্যুতে ইথিওপিয়া প্রতিনিধি দল আয়োজিত একটি উচ্চপর্যায়ের উন্মুক্ত আলোচনায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর ক্লাউস স্কোওয়াব এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সদানন্দ ধুমির সাক্ষাতের কথা রয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হোটেলে ভার্জিনিয়ার আইবিএম-এর প্রেসিডেন্ট মেরি রোমেটি সাক্ষাত করবেন। এরপর কসোবোর প্রেসিডেন্ট হাসগিম থাচির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী ইউএনএইচকিউ-এ পানি বিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেলের চতুর্থ বৈঠকেও যোগ দেবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে তার এ জাতিসংঘ সফরের ওপর সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন। প্রধানমন্ত্রী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে সড়কপথে ভার্জিনিয়ার উদ্দেশে রওনা হবেন। ভার্জিনিয়ায় এক সপ্তাহ অবস্থানের পর তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন। আগামী ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। আবুধাবি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক যাওয়ার পথে শনিবার বিকেলে আবুধাবী পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্্সানুল করিম জানান, বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে আবুধাবী বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। -খবর বাসস’র।
×