ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩শ’ শিক্ষার্থীর চীন যাত্রাপূর্ব ওরিয়েন্টেশনেি শক্ষামন্ত্রী

সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায় কারিগরি শাখা সংযোজন করা হবে

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায় কারিগরি শাখা সংযোজন করা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথমবারের মতো সরকারী উদ্যোগে এক সঙ্গে দেশের প্রায় সাড়ে তিনশ’ শিক্ষার্থী চীন সরকারের স্কলারশীপ পেল। এরা চীনের সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে। ডিগ্রী শেষে চীনে উচ্চ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগও পাচ্ছেন। স্কলারশীপপ্রাপ্ত কারিগরি শিক্ষাস্তরের ৩৪৯ জন শিক্ষার্থীর যাত্রাপূর্ব ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচীতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সহযোগিতার জন্য চীন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে ঘোষণা করেছেন, ঢেলে সাজানো হচ্ছে দেশের কারিগরি শিক্ষার কারিকুলাম-সিলেবাস। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায়ও কারিগরি শাখা সংযোজন করা হবে। শনিবার আইডিইবি মিলনায়তনে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর আয়োজিত ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রী এসব কথা বলেন। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব ও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, আইডিইবির সভাপতি এ কে এম এ হামিদ প্রমুখ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীন সরকারের ৩০ জন বিশেষজ্ঞ তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে বাছাই করে মোট ৩৪৯ শিক্ষার্থীকে স্কলারশীপ প্রদান করেছে। এর মধ্যে ৩১৮ ছাত্র এবং ৩১ ছাত্রী। এরা চীনের ১০টি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পাবে। পরবর্তীতে সেখানে তারা উচ্চতর ডিগ্রীতে পড়ালেখা ছাড়াও কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে পারে। শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই দেশের সরকারী-বেসরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিয়াংসু এগ্রি-এ্যানিম্যাল হাজব্যান্ড্রি ভোকেশনাল কলেজে ৮৭, হেইবেই কলেজ অব ইন্ডাস্ট্রি এ্যান্ড টেকনোলজিতে ১৮, ইয়াংঝউ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ৬৬, সিচুয়ান ভোকেশনাল কলেজ অব ইনফরমেশন টেকনোলজিতে ১২, নানজিং ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রি টেকনোলজিতে ১৭, নানজিং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ৭১, চ্যাংঝউ ইনস্টিটিউট অব মেকাট্রনিক্স টেকনোলজিতে ২৬, চ্যাংঝউ ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১৮, জিয়াংসু মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে ২২, চ্যাংদে ভোকেশনাল টেকনিক্যাল কলেজে ১২ জন পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চীন, জাপান, জার্মানি অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ প্রতিটি উন্নত দেশের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে তাদের প্রত্যেকের কারিগরি শিক্ষার্থীর এনরোলমেন্ট হার ৬০ শতাংশের অধিক। আমাদের দেশের কারিগরি শিক্ষা অনেক পিছিয়ে ছিল। ২০০৯ সালের আগে কারিগরি শিক্ষার এনরোলমেন্ট ছিল ১ শতাংশের নিচে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও কার্যক্রমের ফলে বর্তমানে তা ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সরকার আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এ হার ২০ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, তোমরা যদি সফলতার সঙ্গে পড়াশুনা শেষ করতে পার, তাহলেই আমরা খুশি হব। মনে রাখবে, তোমরা সবাই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। তোমরা তোমাদের চরিত্র, সততা দিয়ে দেশের মানসম্মান রক্ষা করবে। মনে রাখবে তোমাদের ভুলের কারণে যেন আমরা বঞ্চিত না হই। কারণ তোমরা প্রথম দেশের বাইরে শিক্ষা অর্জন করতে যাচ্ছ। তোমরা ভাল করলে পরবর্তীতে আরও বেশি শিক্ষার্থী সেই দেশে যাবে। তোমরা ভাল করলে দেশের সম্মান বাড়বে। দেশের কারিগরি শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে। কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নতুন ২৩টি জেলায় একটি করে সরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ স্থাপন করা হবে। ঢেলে সাজানো হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার কারিকুলাম-সিলেবাস, নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এধারা আরও সম্প্রসারিত করা হবে। এই শিক্ষার্থীরা এক একজন দক্ষ জনবল হিসেবে জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি। কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে ৪২০ জন এবং পরে আরও এক হাজার ১৫০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে । চীনের গুয়াংজুতে ৫৮১ জন শিক্ষকের পর্যায়ক্রমিক প্রশিক্ষণ চলছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এর আগে কখনই এত সংখ্যক শিক্ষার্থী স্কলারশীপের সুযোগ পাননি। শিক্ষকদের দক্ষতা ও নৈতিকতা নিয়েও কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, শিক্ষকরা হচ্ছে জাতি গড়ার কারিগর। কিন্তু কিছু শিক্ষক বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে পাঠদান না করে কোচিং বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার প্রশ্ন দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। এটা হতে দেয়া হবে না। তারা যাতে এসব করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নতুন নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। কোচিং বাণিজ্য চলবে না। বেসরকারী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, আপনারা নিজেদের মালিক পরিচয় না দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে ভাবুন। কারণ মালিক শব্দটি থাকলেই মনে হয়, ব্যবসা করতে হবে, মালিক মানেই মুনাফা, শিক্ষাটাকে ব্যবসার খাতায় নেবেন না। আপনাদের টাকার অভাব নেই। তাই আশা করছি, আপনারা সবাই কারিগরি শিক্ষায় অবদান রাখবেন। কারিগরি শিক্ষার প্রতি দৃষ্টি রাখবেন। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা একসময় নিজেদের মালিক হিসেবে চিহ্নিত করত। এখন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে ট্রাস্টি বোর্ড। আর মালিকরা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রকাশ করে। এখন সব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মকানুনের মধ্যে চলছে।
×