ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুষ না দেয়ায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ঘুষ না দেয়ায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরায় পুলিশের বিরুদ্ধে মাওলানা সাইদুর রহমান নামে এক মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার ভোরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ওই মাদ্রাসা সুপারের। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের নির্মম নির্যাতনে সাতক্ষীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবার। নিহত মাওলানা সাইদুর রহমান (৪৮) কলারোয়ার হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার। তিনি সদর উপজেলার কাথ-া গ্রামের দিলদার সরদারের ছেলে। বৃহস্পতিবার রাত ১টায় সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাকে দুটি নাশকতার মামলায় বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। তবে সংশ্লিষ্ট দারোগা আসাদুজ্জামানের দাবি ওই শিক্ষক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় মারা গেছেন। তাকে নির্যাতন করা হয়নি। সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি মারুফ আহমেদ নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে শনিবার বিকেলে বলেন, তার স্ট্রোকজনিত স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। নির্যাতন করা হলে আদালত তাকে গ্রহণ করত না দাবি করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে পরে প্রেস রিলিজ দেয়া হবে। সাংবাদিকদের কাছে নিহতের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, গ্রেফতারের পর মাওলানা সাইদুর রহমানকে কাথ-া বাজারে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তাকে নির্মমভাবে মারধর করে পুলিশ। তার অবস্থা খারাপ হতে থাকায় তাকে সেখানকার পল্লীচিকিৎসক আবদুল্লাহর চেম্বারে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ায় পুলিশ। এ সময় তার ভাতিজা মুত্তাসিমবিল্লাহ ৫ হাজার টাকা এনে চাচাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু পুলিশ তার কাছে দাবি করে এক লাখ টাকা। এ টাকা দিতে না পারায় মাদ্রাসা শিক্ষককে নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরা থানায়। সেখানেও তাকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করতে থাকে পুলিশ। নিহতের ভাই রফিকুল ইসলাম ও ভাতিজা মুত্তাসিমবিল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার দিনভর পুলিশ হেফাজতে রেখে তার ওপর দফায় দফায় নির্যাতন করা হলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাকে আদালতে নেয়া হলে কর্তৃপক্ষ তার অসুস্থতা দেখে সাইদুর রহমানকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে পুলিশ তাকে ফের নিয়ে যায় সাতক্ষীরা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করার পর বিকেল ৫টায় মাওলানা সাইদুরকে পুলিশ ফের আদালতে নিয়ে যায়। বিকেলে মাওলানা সাইদুরকে আদালত সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠায়। সাতক্ষীরা কারাগারের জেল সুপার হাফিজুর রহমান জানান, কারাগারের মধ্যে শুক্রবার রাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় কারা হাসপাতালে। মধ্য রাতে তাকে স্থানান্তর করা হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা চলছিল। সাতক্ষীরা হাসপাতালের আরএমও ডাঃ ফরহাদ জামিল বলেন, হাসপাতালে আনার পর তার চিকিৎসা চলাকালে ভোরে মারা যান তিনি। নিহত মাদ্রাসা শিক্ষক সাইদুরের দেহে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর থানার এসআই মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আমি তাকে গ্রেফতার করলেও নির্যাতন করিনি। তার কাছে ঘুষও চাইনি। আগে থেকেই তিনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। গ্রেফতারের পর তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এরপর তার মৃত্যু সম্পর্কে আর কোন তথ্য তার কাছে নেই বলে তিনি জানান।
×