ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণতন্ত্রকে জয়ী করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

গণতন্ত্রকে জয়ী করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু করতে হলে এবং গণতন্ত্রকে জয়ী করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে আগে শক্তিশালী করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন নেতারা। তারা বলেন, ইসি শক্তিশালী না হলে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হবে না। দেশে সত্যিকারের একটি গণতান্ত্রিক নির্র্বাচন দরকার। যে নির্বাচনের আমরা সবাই জয়ী হবো উল্লেখ করেন। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে সুজন আয়োজিত ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুস্পষ্ট করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ মন্তব্য করেন। সভায় বক্তারা বলেন, রাজনীতি এখন সুবিধাভোগী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আমলাদের রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। নির্বাচনের নিরাপত্তা ইস্যুতে অস্বাভাবিক অর্থ খরচ করা হচ্ছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বর্তমান পদ্ধতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সম্ভব নয় উল্লেখ করেন। সভায় আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী এবং দক্ষ নির্বাচন কমিশন। ইসির রুটিন কাজ আছে। তাদের কাজ সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে তারাই ভাল জানেন। কিন্তু সেই কাজ কি তারা করছেন? দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের কাজ এবং তাদের কি চ্যালেঞ্জ রয়েছে সে সম্পর্কে চিন্তার দরকার ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেনি। সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন। রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন সুবিধাভোগী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আমলাদের রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ছয় লাখ লোক লাগে একটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে। যাদের সবাই আমলা এবং সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। ইসির প্রথম বিষয় হচ্ছে নিরাপত্তা। নির্বাচনের বাজেটের ৭৫ শতাংশ খরচ হয় নিরাপত্তায়। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৪ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ ওই নির্বাচনে নিরাপত্তা বাবদই খরচ হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। কিন্তু ইসির কাছে নিরাপত্তায় এত ব্যয়ের পরও নির্বাচনী সহিংসতার কোন তথ্য নেই। কাজেই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, যেখানে গণতন্ত্রের চর্চা হয় সেখানে বাধা আসবে। এর শক্তি বিশাল। এজন্য আমাদের সত্যিকার গণতান্ত্রিক একটি নির্বাচন দরকার। গণতন্ত্রকে জয়ী করতে হলে ইসিকে শক্তিশালী করতে হবে। কেননা নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ভোটার তালিকায় ২০১৫-১৬ সালে ২৬ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ভোটার তালিকা সুষ্ঠুভাবে না হওয়ায় ২০০৭ সালের নির্বাচন প- হয়ে যায়। এখন ভোটার তালিকার হালনাগাদে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, ভারতের নির্বাচন কমিশনের মাত্র ৩শ’ জনের মতো কর্মকর্তা রয়েছেন। সেখানে আমাদের দেশে ৩ হাজারের বেশি জনবল দিয়েও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হচ্ছে না। যা নিতান্তই দুঃখজনক। তাই ইসিকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা ক্রমাগত বাড়ছেই। বিগত কমিশনের সময় একজন প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ১৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা করেছে। ফলে সাধারণ নাগরিকদের ভোটাধিকার থাকলেও প্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর জাতীয় সংসদ পরিণত হয়েছে কোটিপতিদের ক্লাবে। তিনি বলেন, আইনে ইসি অনেক শক্তিশালী। তবে বাস্তবে নয়। আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে সবকিছু ভেস্তে যাবে। ইসিকে আরও শক্তিশালী হয়ে কাজ করতে হবে। তবেই সকল রাজনৈতিক দলের কাছে ইসির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। নয়তো ইসি তার সুনাম হারাবে। সুজন সভাপতি হাফিজউদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। তার জন্য যা কিছু করার দরকার। যদি আইনের কোন ঘাটতি থাকে তাহলে সরকারকে বলতে হবে এটি করে দাও। এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশন থেকেই এই উদ্যোগ নিতে হবে উল্লেখ করেন।
×