ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইলেক্ট্রনিক হেলথ কার্ড

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ইলেক্ট্রনিক হেলথ কার্ড

মানুষ আজ বিভিন্ন কুসংস্কারমুক্ত হয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। সঠিক প্রচারণা, নীতি নির্ধারণ এবং জনগণের দোরগোড়ায় আধুনিক চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেয়ার ব্রতে বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য খাতে নতুন সম্ভাবনার সূচনা করতে সক্ষম হয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি, বাংলাদেশ জনসংখ্যা নীতি, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, রক্ত পরিসঞ্চালন আইন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ইত্যাদি প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী এবং জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিফতর সব দফতর নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দফতরের যাবতীয় কার্যক্রম ও তথ্য জনগণকে পৌঁছে দিচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একটি সমন্বিত ও কার্যকর সেবায় রূপান্তরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস বিভাগ দক্ষতা দেখাচ্ছে। প্রতিটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে এই নেটওয়ার্কের আওতায় এনে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে আজকের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী ‘ল্যানসেট’ পত্রিকা। বিশ্বের ১৯৮টি দেশের মধ্যে ৫২তম অবস্থানে বাংলাদেশকে আসীন করে ‘ল্যানসেট’ বলেছে, স্বাস্থ্যমান উন্নয়নের সূচকে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতের চাইতেও অগ্রগামী বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য খাতের এই সুঠাম, সবল এবং দ্যুতিময় চেহারার দিকে একবার ভাল করে তাকালে অনেকেই খুঁজে পাবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে তারই উত্তরসূরিদের সংগ্রামী অগ্রযাত্রার সম্ভাবনাময় প্রতিচ্ছবি। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনকণ্ঠে প্রকাশিত তার একটি লেখায় সুস্পষ্টভাবে বলেছেন ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গত সাত/আট বছরে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে যা এখন দৃশ্যমান। এ কথা অনস্বীকার্য, বিশেষায়িত হাসপাতাল, সরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলো, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলো বর্তমানে সাধারণ ও গরিব মানুষের প্রধান আশ্রয়স্থল। চিকিৎসকরা পাচ্ছেন কর্মোপযোগী পরিবেশ, আধুনিক প্রশিক্ষণ, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির সন্নিবেশ।’ এটা অনস্বীকার্য যে, আমাদের সম্পদ খুবই সীমিত, কিন্তু জনসংখ্যার চাপ বিশাল। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য সেবা চালিয়ে যাওয়া রীতিমতো দুঃসাধ্য একটি কাজ। সরকারী হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা জানেন কী এক পর্বতসম সমস্যা অতিক্রম করে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ, তিনগুণ, কোথাও কোথাও চারগুণ রোগীকে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন যথাসাধ্য। এমন একটি বাস্তবতায় বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে লিখিত জবাবে নতুন সুসংবাদ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী বলেছেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্য উপাত্তভিত্তিক একটি ইলেক্ট্রনিক তথ্য ভা-ার গড়ে তোলার জন্য গ্রাম পর্যায়ে বসবাসকারী সব নাগরিকের তথ্যসংবলিত ডাটাবেজ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন এই ডাটাবেজভিত্তিক লাইফ টাইম শেয়ার পোর্টেবল সিটিজেনস ইলেক্ট্রনিক হেলথ কার্ড তৈরির কাজ চলছে। সিভিল রেজিস্ট্রেশন এ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিকস নামে একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগের আওতায় বর্তমানে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ইলেকশন কমিশন ভোটার ডাটাবেজ, স্বাস্থ্য ডাটাবেজ এবং নির্মীয়মাণ দারিদ্র্য ডাটাবেজসমূহ সংবলিত করে আঙ্গুলের ছাপ ও রেটিনার ছবিযুক্ত ন্যাশনাল ইলেক্ট্রনিক পপুলেশন রেজিস্ট্রার তৈরির কাজ চলছে। ইলেক্ট্রনিক হেলথ কার্ড পদ্ধতি চালু হলে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া যে সহজতর হবে, সে কথা বলাইবাহুল্য। তবে এ কাজে আন্তরিকতা, সততা ও দক্ষতার কোন বিকল্প নেই।
×