ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লন্ডনবাসী আতঙ্কে ॥ ট্রাম্পের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যেক্ষুব্ধ টেরেসা মে

আরও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আরও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা

ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের দক্ষিণ-পশ্চিমে এক পাতাল ট্রেনে শুক্রবার বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জনমনে আরও সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং পুলিশ ঘটনায় জড়িতদের খোঁজে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। খবর বিবিসির। উইম্বলডন থেকে পূর্বাঞ্চলগামী এই ট্রেনে পারসন্স গ্রীন রেলস্টেশনে বোমা হামলা করা হয়। এতে ২৯ জন আহত হয়েছে, যাদের অনেককে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এদের সেন্ট জর্জ ও ইম্পেরিয়াল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু পারসন্স গ্রীন পাতাল রেলস্টেশনের এই বোমা হামলার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি বলে জনমনে আতঙ্ক দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে। অনেকে মনে করেন আরও হামলার ঘটনা আসন্ন। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বলেছেন, অবস্থা সঙ্কটজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে আরও হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট জঙ্গীদের পক্ষ থেকে এই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এর আগে ব্রিটেনসহ ইউরোপের অপরাপর স্থানে যে কোন ধরনের হামলার ঘটনা ঘটলেই আইএস জঙ্গীরা তাদের কৃতিত্ব দাবি করেছে এবং পরবর্তীতে তা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও লন্ডনের পুলিশ বিষয়টিকে হাল্কাভাবে নিচ্ছে না। পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনীর সহায়তার পাশাপাশি এক হাজারের মতো পুলিশ কর্মকর্তা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে সারাদেশে সন্ত্রাস নির্মূল কাজে অংশ নেবে। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা বলেছেন, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিভিন্ন সরকারী স্থাপনা রক্ষার দায়িত্ব দিয়ে সশস্ত্র পুলিশ সদস্যদের জনগণের নিরাপত্তা বিধানে নিয়োজিত করা হবে। তারা প্রধানত পরিবহন নেটওয়ার্ক, জনবহুল স্থান ও সড়ক পথের নিরাপত্তার কাজে অংশ নেবে। পাশাপাশি স্কটল্যান্ড পুলিশ জানিয়েছে, তারা টহলদারির সময় সশস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। এরা প্রধান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি ব্যস্ত ও জনবহুল স্থানে টহল দেবে। লন্ডনে পুলিশের সহকারী কমিশনার মার্ক রাউলি বলেন, পুলিশ সন্দেহভাজনদের ধরার জন্য সর্বাত্মক তৎপরতা চালাচ্ছে। এ ছাড়া শত শত পুলিশ কর্মকর্তা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করেছে। মার্ক রাউলি জনগণকে সতর্ক থাকতে কিন্তু আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। অভিযানের গুরুত্ব বিবেচনায় তিনি এ বিষযে বিস্তারিত আর কিছু বলতে রাজি হননি। তবে বিবিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পারসন্স গ্রীনের বোমাটি একটি টাইম বোমা ছিল। বাজারের ব্যাগের মধ্যে রক্ষিত এক সাদা ঝুড়িতে বোমাটি তারে পেঁচানো অবস্থায় ছিল এবং তারের কিছু অংশ বাইরে থেকে দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। বিবিসির নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল, বোমাটি পূর্ণ ধ্বংস ক্ষমতা নিয়ে বিস্ফোরিত হয়নি। যদি তা হতো তবে এর আশপাশের সবাই নিহত বা আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেত। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আতঙ্কের মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। প্রথমত, সন্দেহভাজন হামলাকারী স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে, দ্বিতীয়ত, সন্ত্রাসীদের কাছে আর কয়টি বোমা আছে তা কেউ জানে না। তাই প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে যখন তার সতর্কবার্তায় ‘ইমিনেন্টলি’ বা ‘আসন্নপ্রায়’ বলে উল্লেখ করেন তখন তার গূঢ় তাৎপর্য জনগণের মধ্যে আতঙ্কের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। টেরেসার কণ্ঠে ম্যানচেস্টারে এরিয়ানা গ্র্যান্ডির এক অনুষ্ঠানে আত্মঘাতী হামলার পর এই ‘ইমিনেন্স’ শব্দটিই ধ্বনিত হয়েছিল। এদিকে, লন্ডনের এই বোমা হামলাকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি সারা বিশ্বে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্প বলেন, যেসব লোক এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পুলিশের নজরদারির ভেতরেই ছিল। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মেকে ফোন করে বিশ্বব্যাপী নিরীহ মানুষের ওপর কাপুরুষোচিত হামলায় পরস্পরকে সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু টুইটে ব্রিটেনের পুলিশ হামলাকারীর পরিচয় জানত বলে মন্তব্য করায় টেরেসা মে দারুণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তদন্ত চলাকালে এ ধরনের অনুমাননির্ভর কথা কারও কোন কাজে আসবে না। লন্ডন পুলিশের পক্ষ থেকেও ট্রাম্পের মন্তব্যকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে।
×