ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রায়ান ফাং

হ্যাকিং ঠেকাতে আইবিএম ক্রয় করছে নতুন প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হ্যাকিং ঠেকাতে আইবিএম ক্রয় করছে নতুন প্রযুক্তি

প্রচলিত একটা কথা আছে যে, কোম্পানি কেবলমাত্র দু’ধরনের হয় : এক. যেগুলো হ্যাক করা হয়েছে এবং দুই. যেগুলো হ্যাকিং হয়েছে কিনা এখনও পর্যন্ত জানে না। কম্পিউটার জগতের মহারথী আইবিএম এই দুই ধরনের অবস্থা থেকে রেহাই পেতে চায়। কোম্পানিটি সম্প্রতি জানিয়েছে যে, তারা নিরাপত্তা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে যার বদৌলতে ব্যাংক থেকে শুরু করে খুচরো ব্যবসা ও ট্রাভেন-বুকিং কোম্পানিসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের তথ্য বা ড্যাটা ব্যাপক পরিসরে সাঙ্কেতিক লিপিতে রাখতে পারবে। এতে করে তাদের সব না হলেও বেশিরভাগ ডিজিটাল তথ্য হ্যাকার বা চোরদের কাছে অবোধগম্য হবে যার পাঠোদ্ধার করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। আইবিএমের মেইন ফ্রেম ব্যবসার জেনারেল ম্যানেজার রস মাউরি এক সাক্ষাতকারে জানান যে, যে ব্যবস্থায় এমনি ব্যাপক পরিসরে এনক্রিপশন করা সম্ভব হয়েছে সেটি হলো তাদের নতুন মেইনফ্রেম। গত প্রজন্মের মেইন ফ্রেমগুলো বেশ ভালভাবে ও অতি দ্রুততার সঙ্গে সাঙ্কেতিক লিপির কাজ করত। তবে সেটা বিশাল পরিসরে নয়। রসের হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে তাদের চুরি যাওয়ার ড্যাটার মাত্র ৪ শতাংশ সাঙ্কেতিক ভাষায় লিপিবদ্ধ থাকত। কিন্তু ড্যাটার হ্যাকিং ক্রমাগত বাড়ছে। কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আইবিএম মনে করে যে, হ্যাকিং মহামারী রূপ ধারণ করায় এর উপযুক্ত জবাব হতে পারে, সর্বজনীন সাঙ্কেতিকরণ। আইবিএম কর্মকর্তারা বলেন এই সর্বজনীন সাঙ্কেতিকরণের মূল সূত্রটা হলো, শক্তিশালী মেইন ফ্রেম সার্ভারগুলো সেখানে কর্পোরেট ও প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য সংরক্ষিত থাকে এবং সেখানে এটিএম উইথড্রয়াল থেকে ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট এমনকি ফ্লাইট রিজার্ভেশন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন কোটি কোটি লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে সেই মেইনফ্রেম সার্ভার পরিচালনাকারী কম্পিউটার চিপগুলো আপডেট করা। মেইনফ্রেম প্রসেসর’এ কোটি কোটি ট্রানজিস্টর থাকে। এগুলো ডিজিটাল সুইচ বিশেষ যার মাধ্যমে কম্পিউটারগুলো ক্যালকুলেশনের কাজ করতে পারে। আইবিএমের সর্বশেষ মেইনফ্রেম প্রসেসর ৬০০ কোটি ট্রানজিস্টরকে শুধুমাত্র সাঙ্কেতিকরণের কাজে নিয়োগ করেছে। এটা হলো প্রচলিত ক্ষমতার ৪ গুণ বৃদ্ধি। ক্রিপটোগ্রাফি অর্থাৎ সহজপাঠ্য কোন তথ্যকে সাঙ্কেতিক ভাষায় দুষ্পাঠ্য তথ্যে পরিণত করার যে বিজ্ঞান সেটি কিছু ই-মেইল প্রভাইডার ও স্টোরেজ সার্ভিসগুলোর মধ্যে আগে থেকেই বেশ প্রচলন আছে। কিন্তু এক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্যাবলী আরেক প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় সেগুলো দ্রুত সাঙ্কেতিক ভাষায় রূপান্তর এবং তারপর সেই সাঙ্কেতিক ভাষা আবার পাঠোদ্ধার করার বিপুল কম্পিউটার শক্তির প্রয়োজন হয় বিধায় অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আদৌ এনক্রিপশন ব্যবহার করে থাকলে শুধুমাত্র বেছে বেছে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবহার করে থাকে। সোফোস নামের এক সিকিউরিটি ফার্মের গত ডিসেম্বর মাসের রিপোর্টে বলা হয় যে, ৪টির মধ্যে ৩টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের তথ্য উপাত্ত বা বিলিং তথ্য নিয়মিত এনক্রিপ্ট করলেও অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি কিংবা মানবসম্পদের তথ্যাবলী এনক্রিপ্ট করে না। ৬০ শতাংশ সংগঠন তাদের কর্মচারীদের সৃষ্ট কাজের ফাইলপত্র বিনা এনক্রিপশনে রাখে। প্রযুক্তিবিষয়ক থিঙ্কট্যাঙ্ক টেক ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক অস্টিন কার্সন বলেন, এসবই ডিজিটাল অপরাধীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। তাঁর মতে, একটা বড় সমস্যা হচ্ছেÑ ফাইলপত্রে অনেক বেশি তথ্য সংরক্ষিত থাকে। তবে সর্বজনীন ও সর্বব্যাপী এনক্রিপশন বা সাঙ্কেতিক ভাষার ব্যবহার হলে একটা বিষয় সুনিশ্চিত হবে সে হ্যাকাররা কোন কোম্পানির নেটওয়ার্কের ভেতর সাফল্যের সঙ্গে ঢুকে পড়তে পারলেও সেখানে কোন তথ্য পেলে সাঙ্কেতিক ভাষার পাঠোদ্ধার করা অসম্ভব হবে। এভাবে হ্যাকারদের হাত থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য রক্ষা করার পথে এ হবে এক বিশাল অগ্রগতি। তবে একই প্রযুক্তি আইন প্রয়োগের ব্যাপারটিকে হতাশ করতে পারে। এনক্রিপশন প্রযুক্তি এবং কত ব্যাপকভাবে এর প্রয়োগ হওয়া উচিত তা নিয়ে সম্প্রতি সিলিকন ভ্যালির সঙ্গে মার্কিন সরকারের দারুণ লড়াই হয়েছে। গত বছর এ্যাপলের সঙ্গে বেশ বড় ধরনের এক বিরোধে বিচার বিভাগ যুক্তি প্রদর্শন করে যে এ্যাপলের উচিত সান বার্নারভিলের শুটারদের একজনের ব্যবহৃত আইফোনের সাঙ্কেতিক ভাষা পাঠোদ্ধারে সরকারী কর্মকর্তাদের সাহায্য করা। এ্যাপল রাজি হয়নি এই যুক্তিতে সে সাঙ্কেতিক ভাষা পাঠোদ্ধারের যন্ত্র উদ্ভাবন করা হলে গ্রাহকদের নিরাপত্তা ক্ষুণœ হবে। বিশেষ করে সেই যন্ত্র যদি অপরাধীদের হাতে গিয়ে পড়ে তাহলে তো কথাই নেই। এ্যাপলের এই উদ্বেগটা নেহায়েত তত্ত্বগত নয়, বাস্তব। এ বছর ওয়ান্নাক্রাই সাইনার হামলায় অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে হাজার হাজার পিসি জিম্মি করা হয়। উইন্ডোজের একটা দুর্বল দিকের সঙ্গে এই হামলার যোগসূত্র ছিল। বাইরে প্রকাশ হয়ে পড়ার অনেক আগে ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সিও উইন্ডোজের দুর্বলতা গোপনে আবিষ্কার করে কাজে লাগায়। সর্বজনীন সাঙ্কেতিকরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করতে গিয়ে আইবিএম এই বিতর্কে এ্যাপলের পক্ষ নিয়েছে। এই বিষয়টির উপর এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি বলেছে ‘উদ্ভবরত হুমকির হাত থেকে নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য সরকারগুলোর যা করা প্রয়োজন তার প্রতি আইবিএমের পূর্ণ সমর্থন আছে। তবে সাঙ্কেতিকরণ প্রযুক্তি দুর্বল করে দেয়া সে সমস্যার সমাধান নয়।’ আইবিএম সাঙ্কেতিকরণ ব্যবস্থাকে এক বিশাল ব্যবসার সুযোগ হিসেবে দেখছে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরকারী মানসম্মত করার জন্য বছরে ১ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। আইবিএম বছরে ব্যয়িত এই অর্থের একটা অংশ নিজের আয় হিসেবে তুলে নিতে চায়। আইবিএম তার নতুনতম মেইনফ্রেম প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটামুটি ৫ লাখ ডলার পাবে বলে আশা করে। সূত্র ॥ ওয়াশিংটন পোস্ট
×