ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পোল্ট্রি ফার্মের বিষ্ঠায় ছড়াচ্ছে রোগব্যাধি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পোল্ট্রি ফার্মের বিষ্ঠায় ছড়াচ্ছে রোগব্যাধি

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ কিশোরীগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের দুটি গ্রাম দক্ষিণ সিঙ্গেরগাড়ি বালাপাড়া ও সুরঙ্গের বাজার। গ্রাম দুটির আবাসিক এলাকায় মধ্যখানে গড়ে তোলা হয়েছে কাজী পোল্ট্রি ফার্মের কম্পোস্ট প্ল্যান। এ ফার্মের ব্রয়লার মুরগির বিষ্ঠার (মল) দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে গ্রামবাসী। ফার্মের ময়লা-আবর্জনায় গ্রামের পুকুরের পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। কালো রং ধারণ করায় ওই পুকুরের পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা-মাছি। বিষ্ঠার কারণে মশা-মাছির উপদ্রবসহ মারাত্মকভাবে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে তারা। বৃহস্পতিবার এলাকাবাসীর অভিযোগে সরেজমিন দেখা যায়, ওই দুই গ্রামের মাঝে দেড় বছর হয় কাজী ফার্ম কম্পোস্ট প্ল্যান গড়ে তুলেছে। এ ফার্ম থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বিষ্ঠা বের করা হয়। এসব বিষ্ঠা ফার্মের নির্দিষ্ট স্থানে রাখার ব্যবস্থা না থাকায় রাতের আঁধারে খোলা জায়গায় যত্রতত্র ফেলে রাখছে কর্তৃপক্ষ। এসব বিষ্ঠা উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখার ফলে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে এর দুর্গন্ধ। বিষ্ঠার গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। বিষ্ঠার গন্ধে ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে অনেক নারী-পুরুষ-শিশু। দক্ষিণ সিঙ্গেরগাড়ি বালাপাড়া এলাকার মফিজুল ইসলামের স্ত্রী ছামিদা বেগম বলেন, বিষ্ঠার গন্ধে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়ে। এতে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বমি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বালাপাড়া এলাকার মজিদুল ইসলাম জানান, বিষ্ঠার গন্ধে এলাকার বাতাস দূষিত হয়ে পড়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। খেতে বসলে দুর্গন্ধে খাবার গলা দিয়ে নামে না। বেড়েছে মশা-মাছির উৎপাত। মাছি বিস্তার ঘটাচ্ছে জীবাণুর। জীবাণু ও দূষিত বাতাসে অনেক শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। ওই এলাকার পল্লী চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম জানান, দক্ষিণ সিঙ্গেরগাড়ির ফার্ম এলাকা থেকে প্রতিদিন চার-পাঁচজন করে শিশু পাতলা পায়খানা, বমি ও মাথাব্যথার চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছে। বিষ্ঠার দুর্গন্ধে ওই এলাকার খিলালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও দক্ষিণ সিঙ্গেরগাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোনিবেশ করতে পারছে না। মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান শিহাব বলেন, আমি কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার মুরগির বিষ্ঠা খোলা জায়গায় ফেলতে নিষেধ করেছি। কিন্তু আমার কথা তারা কানে নেয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। ওই ফার্মের কম্পোস্ট শাখার ইনচার্জ মঞ্জুর আলম বলেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ বিষ্ঠা বের হয় তা দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। তবে খোলা জায়গায় বিষ্ঠা ফেলার কারণে এলাকায় কিছুটা গন্ধ হচ্ছে। তবে দুর্গন্ধ নিরসনে প্রতি সপ্তাহে ফার্মের লোক দিয়ে স্প্রে করা হয়। মাছির উৎপাত কমাতে প্রতিটি বাড়িতে মাছি মারার ওষুধ দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের বিভিন্ন ব্রয়লারের ফার্ম থেকে প্রতিদিন ৪৫ টন মুরগির বিষ্ঠা বের হয়। আমাদের কম্পোস্ট প্ল্যানে ৪০ টন রেখে বাকি পাঁচ টন এলাকার কলম আলী নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়। কলম আলী ওই পাঁচ টন বিষ্ঠা বাইরে ফেলে রাখায় এ অবস্থা হয়েছে। কিশোরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মেহেদী হাসান বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা পাবলিক হেলথ কর্মকর্তা আব্দুল গফুর তালুকদারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
×