ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নীলফামারী পৌরসভা

একটি প্রকল্পের উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

একটি প্রকল্পের উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী ॥ ইউজিআইআইপি-থ্রি প্রকল্পের কার্যক্রমের ছোঁয়ায় ব্যাপক উন্নয়নে বদলে যেতে শুরু করেছে নীলফামারী পৌরসভার চিত্র। নীলফামারী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে ‘গ’ শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে। ১৯৯৬ সালে ‘গ’ শ্রেণীর পৌরসভা থেকে ‘খ’ শ্রেণীর মর্যাদা পায়। এরপর ২০০৮ সালের ২৩ মার্চ প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার মর্যাদা লাভ করে। দিন দিন পৌর এলাকার পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ১৫০, যার জনসংখ্যা ৮৫ হাজার ৫৯৪। পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পৌর মার্কেট, খয়রাত হোসেন মার্কেট ও শাখামাছা বাজারের অল্পসংখ্যক দোকানঘর ভাড়া, হাট-বাজার ও গবাদিপশুর হাট ইজারা, অফিস-আদালতের পৌরকর এবং যৎসামান্য পাবলিক হোল্ডিং কর দিয়ে কোন রকমে পরিচালিত হলেও ২০১২ সালের শেষদিকে ‘দ্বিতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ’ (সেক্টর) প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলে পৌরসভাটির চিত্র চারদিকে বিকশিত হতে থাকে। আগে পৌরসভার উন্নয়ন কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল না। বর্তমানে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯-এর ১৪ ধারা মোতাবেক পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকা-ে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মতামত প্রদানের অধিকতর সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে ওয়ার্ড সমন্বয় কমিটি ডধৎফ খবাবষ ঈড়ড়ৎফরহধঃরড়হ ঈড়সসরঃঃবব (ডখঈঈ) এবং ৫০ সদস্যবিশিষ্ট শহর সমন্বয় কমিটি (ঞখঈঈ) গঠন করা হয়েছে। ফলে পৌরসভার উন্নয়ন কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা বেড়েছে। আগে পৌরবাসী হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল, দোকানঘরের ভাড়া দিতে আগ্রহী ছিল না। ‘দ্বিতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ’ (সেক্টর) প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর পর পৌরবাসীকে হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল, দোকানঘরের ভাড়া প্রদানে উদ্বুদ্ধ করায় পৌরবাসী এখন হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল, দোকান ঘরের ভাড়া দিতে শুরু করেছে। সর্বোপরি এরই মধ্যে ইউজিআইআইপি-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণের ফলে পৌরসভার আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসে মাসে বেতন-ভাতা প্রদান করা সম্ভব হতো না। এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসে মাসে বেতন-ভাতা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। অপরদিকে ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পের কারণে এরই মধ্যে পৌর সুপার মার্কেট থেকে উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পাড়া-মহল্লার অলিগলির সব সড়কে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। এছাড়া বেশ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণ, সড়কবাতি , স্টিলের ডাস্টবিন স্থাপন, বস্তি উন্নয়নসহ আধুনিক পৌরসভায় রূপান্তর করতে যা যা করা দরকার সবই করা হচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প ছাড়াও ছোটখাটো অসংখ্য প্রকল্পের কাজ একসঙ্গে শুরু হওয়ায় এবং শহরের সড়কগুলোর ফুটপাথে টাইলস বসানো দেখে পৌরবাসী বেশ খুশি। ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পের শর্তানুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ পৌরসভা তার নিজস্ব রাজস্ব আয়ের শতকরা ৩% হারে অর্থাৎ ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা জেন্ডার এ্যাকশন প্ল্যানের (এঅচ) মাধ্যমে পৌর এলাকার ৭২৫ জন অসহায় নারীর শীতবস্ত্র, ১৫ জন হতদরিদ্র মহিলাকে সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন প্রদান এবং অসহায় গরিব মেধাবী ছাত্রীদের ফর্ম ফিলআপ, বই ক্রয়, বিবাহ ও চিকিৎসা খাতে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়। এছাড়া ৫% হারে ২১ লাখ ৮ হাজার টাকা দারিদ্র্য নিরসন কর্মপরিকল্পনার (চজঅচ) মাধ্যমে পৌর এলাকার অসহায় দরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ১০ জনকে পাইপ তৈরিকরণ ও ১০ জনকে অটোমেকানিক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ২০ জনকে রিক্সা/ভ্যানগাড়ি এবং এক হাজার জনকে চিকিৎসা, বিবাহসহ অন্যান্য খাতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আগামীতে এ খাতে আরও ব্যয় বৃদ্ধি পাবে বলে মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ জানান। এদিকে ইউজিআইআইপি-২ প্রকল্পে ১৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকার কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পে ৩২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। নীলফামারী পৌরসভার এসব কাজের উন্নয়ন দেখতে এলাকা পরিদর্শন করে গেছে এডিপির একটি প্রতিনিধি দল। দলটি গত ২১ আগস্ট হতে দুদিন ধরে নীলফামারী সফর করে। নীলফামারী পৌরসভার মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদের আমন্ত্রণে তারা নীলফামারী পৌরসভা এলাকার উন্নয়নে বদলে যাওয়া সমাপ্ত ও চলমান কাজ পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া পৌরসভা এলাকায় সাম্প্রতিককালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও হঠাৎপাড়া বস্তি ঘুরে লোকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন এডিবির মিশন প্রধান আলেকজান্ডার ভোগল, এলজিইডির আরবান ম্যানেজমেন্টের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম আকন্দ, ইউজিআইআইপি-থ্রি প্রকল্পের পরিচালক একেএম রেজাউল ইসলাম, সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা সহিদুল আলম, প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ স্বাসওয়াতী বেলীআপ্পা, এডিবির বিশেষজ্ঞ সুসান ফ্রান্সিসকো, নিনেত্তে পাজারিল্লেইজা, স্যোশাল উন্নয়ন অফিসার (জেন্ডার) নাসিবা সেলিম, এডিবি বিশেষজ্ঞ এ্যানিক আজমেরা, মিগুয়েল দিয়েঞ্জন, আরবান উন্নয়ন প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ মোঃ রফিকুল ইসলাম, প্রকল্পের টিম লিডার মোঃ রোকনউদ্দিন আহম্মেদ, জেন্ডার স্পেশালিস্ট সুরাইয়া জেবীন। এ সফরে প্রতিনিধি দল নীলফামারী পৌরসভার নগর সমন্বয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। মতবিনিময়কালে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডের সদস্যরা নীলফামারী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন ও বস্তি উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি পৌর এলাকায় চিত্তবিনোদনের জন্য দ্রুত একটি শিশুপার্ক স্থাপনের দাবি জানান। জানা যায়, শিশুপার্ক স্থাপনে ১০ একর জমির প্রয়োজন। কিন্তু জমির ব্যবস্থা না থাকায় শিশুপার্কটি স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। সদস্যরা অচিরেই ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে শিশুপার্ক স্থাপনের বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নীলফামারী পৌরসভার বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ। তিনি একটানা তিনবারের চেয়ারম্যান ও তিন মেয়াদের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। মেয়র বলেন, নীলফামারী পৌরসভায় সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যায় ৩০ হাজার ৬০০ মিটার সড়ক ও কালভার্টের ১২ কোটি ৭ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুনভাবে সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। তিনি শহরে শিশুপার্ক স্থাপনের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় শিশুপার্ক নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারীভাবে জমি অধিগ্রহণে সহয়তা পেলে শিশুপার্কটি স্থাপনে বড় সহায়ক হবে।
×