ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার ফুটপাথের বিন সমাচার

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ঢাকার ফুটপাথের বিন সমাচার

স্টাফ রিপোর্টার॥ ‘আম্মু এটা ফেলি? না বাবা এটা আমার কাছে দাও, আমি ফেলে দিব।’ তিন বছরের ছোট্ট আরিয়ান তার মায়ের সঙ্গে ফার্মগেট এলাকার ফুটপাথ ধরে হাঁটছিল। তার হাতে ছিল একটি কোমল পানীয়ের খালি বোতল। চলার পথে তার হাতে থাকা বোতলটা রাস্তা বা ফুটপাথে ফেলার জন্য তার মায়ের অনুমতি চাইল। কিন্তু আরিয়ানের মা, ছেলেকে বোতলটা রাস্তায় ফেলতে বারণ করে সেটি নিজের হাতে নিলেন ডাস্টবিনে ফেলবেন বলে। কথা হয় হুমায়রা বেগমের সঙ্গে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলেটা মাত্র শেখার বয়সে পা দিয়েছে। রাস্তার ওপর যেখানেসেখানে এগুলা (অব্যবহৃত জিনিস) না ফেলা, এখন থেকেই তাকে শেখাতে হবে। আমাদের থেকে দেখেই তো ওরা শিখবে। কিন্তু তিনি এই খালি বোতলটি তার চলার পথে ফেলবেনই বা কোথায়? এত বড় এলাকায় হাতেগোনা তিন-চারটি ছাড়া তো আর কোন বিন চোখে পড়ে না। তিনি তার গন্তব্যে যাবেন নাকি ময়লার বিন খুঁজবেন? ছেলের সঙ্গে মায়ের যখন কথোপকথন চলছিল তখন তারা একটি ছোট বিনের সামনেই ছিলেন। কিন্তু সেখানে বিনের খুঁটিটাই কেবল আছে, বিনটা নেই। ফুটপাথে স্থাপন করা বিন উধাও হওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবকে দায়ী করেন রামপুরা এলাকার সাবের মাহমুদ সজল। তিনি বলেন, বিন চুরি একসময় হাতিরঝিলেও হইত, এখন তো হয় না। হাতিরঝিলে একটু পর পরই ময়লার বিন আছে, আবার দেখেন ওগুলা ভালও কিন্তু। আসলে সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে বিন নষ্ট ও চুরি হয়। সজল আরও বলেন, রামপুরা, বাড্ডার মতো বাকি এলাকার দিকে তাকান। এমনকি গুলশানের দিকেও দেখেন। ফুটপাথ কত সুন্দর করেছে, কিন্তু ওই জায়গায় একটা চকোলেটের খোসা ফেলার জায়গা নেই। যেখানে কোন বিনই নেই, সেই এলাকার মানুষদের বিনে ময়লা ফেলার জ্ঞান দিয়া কোন লাভ আছে? মানুষ তো একদিনেই কিছু শিখব না, আগে তো বিন দিয়ে দেখেন। নজরদারির অভাব হোক কিংবা বিনের নক্সার ত্রুটি, তা থেকে উৎরাতে টেকসই বিন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। জনগণকে নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন, সবুজ, স্মার্ট, আলোকিত, জলজট ও যানজটমুক্ত ঢাকা গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল প্রথমবারের মতো বিভক্ত সিটি কর্পোরেশন ডিএনসিসির মেয়র পদে নির্বাচিত হন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনিসুল হক। ঢাকার উত্তর অংশকে সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ (গ্রীন, ক্লিন ও সিকিউরড) করার কার্যক্রম হাতে নিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পঞ্চাশের বেশি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ, অবৈধ দেয়াল লিখন ও পোস্টারিং বন্ধ, অবৈধ বাস-ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বেশ কিছু কাজ করে সুনাম কুড়ান তিনি। কিন্তু মেয়রের এই সাফল্যগাথার বিপরীতে উত্তর সিটির এলাকায় ছোট ছোট ময়লার বিনের অভাবও চোখে পড়ার মতো। দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই মেয়র রাজধানীর যেখানেসেখানে ফেলা আবর্জনা পরিষ্কার করতে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হিমশিম খেতে দেখছেন। সমস্যা সমাধানে রাজধানীতে বিভিন্ন রাস্তার পাশে ছোট ছোট বিন বসানো শুরু করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ৫ হাজার ৭০০টি ডাস্টবিন বসানো হয়। যেসব স্থানে জনগণের চাপ বেশি সেখানে ১৫০ মিটার পর পর বিন স্থাপন করা হয়। আর যেখানে জনসমাগম কম হয়, সেখানে স্থাপন করা হয় ৩০০ মিটার পর পর। আর ডিএনসিসির এলাকায় প্রায় এক হাজারের মতো বিন বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেসব বিনের বেশিরভাগেরই এখন আর অস্তিত্ব নেই। ডিএসসিসির এলাকার ভাল বিনগুলো পথচারীদের ব্যবহার করতে দেখা গেলেও ডিএনসিসির আওতাভুক্ত গুলশান, বনানী, কাকলী, মিরপুর, মোহাম্মাদপুর, ফার্মগেট, মহাখালী, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিন খুঁজে পেতে একরকম সংগ্রাম করতে হয় বলা চলে। গুলশানের মতো কূটনৈতিক এলাকায় পুরনো ফুটপাথের সৌন্দর্য বাড়ানো হলেও এলাকার কোথাও মিনি ডাস্টবিন দেখা যায়নি। ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা কমোডর আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রথম দিকে আমরা এক হাজারের মতো বিন বসিয়েছিলাম। কিন্তু সম্ভবত নেশাখোররা এগুলো চুরি করে নিয়ে যায়। সেদিকটা বিবেচনায় রেখে আমরা আর নতুন কোন বিন দেইনি। তবে নতুন নক্সার টেকসই বিন তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমরা স্পেশালিস্ট দিয়ে নতুন ভালমানের বিনের নক্সা করিয়েছি। প্রথমবারের বিনে কিছুটা ত্রুটি পেয়েছি। আবার কিছু সংশোধনের নক্সাও দিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বারও কিছ্টুা সংশোধনের জন্য দিয়েছি। আমরা এ রকম একটা বিন চাচ্ছি যেটা চুরির সম্ভাবন কম এবং টেকসই। বিনের পেছনে টাকা খরচ করব কিন্তু টেকসই না হলে তো হয় না। এগুলো হাতিরঝিলের থেকেও উন্নত হবে। বিনের কাজ শেষ হলে প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে বিনগুলো কোন জায়গায় বসানো হবে বলে জানান আবদুর রাজ্জাক। তারপর মানুষের চাপ বুঝে কোথাও পঞ্চাশ মিটার পর পর, আবার কোথাও ১০০ মিটার পর পর বিন বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কবে নতুন বিন বসানো হবে সেই সময়টা এখনও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না বলে জানান ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা। বিনগুলো ছোট হওয়ায় কম দূরত্বে এগুলো বসানো যায়। ফলে ময়লা ফেলতে পথচারীদের খুব একটা হাঁটতে হয় না।
×