ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে সাপ খেলা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হারিয়ে যাচ্ছে সাপ খেলা

নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেদে বহরে সাপ ছিল অবধারিত। বেদেনীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সাপ নাচিয়ে খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন আর সে দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় না। আবার শহর ও গ্রামগঞ্জের হাটে-ঘাটে সাপুড়েদেরও আর সাপ নাচিয়ে লোক জড়ো করে ওষুধ বিক্রি করতে দেখা যায় না। বেদেরা পূর্বে ভাসমান জীবনযাপন করলেও বর্তমানে নদ-নদী, খাল-বিল চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় নৌকায় অবস্থান না করে বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী ও অস্থায়ী আবাস গড়ে তুলছে। কমে আসছে তাদের সংখ্যাও। গ্রামে, গঞ্জে, শহরে বিভিন্ন অঞ্চলে বীণ বাজিয়ে নেচে, গেয়ে বিষধর সাপের খেলা দেখিয়ে দর্শকের মন মাতিয়ে সামান্য আয়েই চলে বেদেদের জীবন জীবিকা। দর্শকদের মন ভুলিয়ে মানুষ জমিয়ে তাবিজ বিক্রি করে প্রতিদিন আয় করে ২-৩ শত টাকা। নিজ পরিবারসহ আরও কয়েকটি পরিবার নিয়ে নিজের জেলা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দূর-দূরান্তে জীবিকা নির্বাহের জন্য ছুটতে হয় তাদের। একসঙ্গে প্রায় ১৫-২০টি পরিবার নৌকাযোগে নদী পথে বিভিন্ন এলাকায় নোঙ্গর করে খুপনি বানিয়ে তার ভেতর এক অঞ্চলে প্রায় মাসব্যাপী থেকে এভাবে সারা বছর ধরে তারা এ পেশার মাধ্যমে আয় করতে থাকে। এদের কাছে প্রায় ৮-১০টি প্রজাতির বিষধর সাপ থাকে তাদের কাছে। এ সাপ খেলা দেখিয়ে দর্শকদের কাছ থেকে আদায় করে টাকা এছাড়া তাবিজ বিক্রি করে ও আয় করে তারা। গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে একসময় গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাপ ধরা ও সাপের খেলা দেখিয়ে, তাবিজ বিক্রিসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসার কথা বলে ঘুরে বেড়াতো বেদেরা। এখন সেই সাপ খেলা সচরাচর দেখা যায় না। এ ব্যাপারে সাভার থেকে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বাজারে সাপ খেলা দেখাতে আসা বেদে কালাচাঁদ সর্দার জানায়, সাপের বিষ দিয়ে অনেক দুরারোগ্য রোগ সারার ওষুধ তৈরি হয়। এগুলো সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের অনেকে সাপের বিষাক্ত ছোবলে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি আরও জানান, সাপ ধরার কোন মন্ত্র নেই। আছে বুদ্ধি, সাহস আর কলাকৌশল। এর অন্যথা হলে তাকে প্রাণ হারাতে হয়। আর তাবিজে বিভিন্ন গাছ-গাছড়া থাকে। গাছ-গাছড়ার দ্রব্যগুণ আছে এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তাই আমরা এগুলো বিক্রি করে, বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিন বাজিয়ে সাপের নাচন দেখিয়ে দর্শক মাতায় এবং তাবিজ বিক্রি করে দিনে ২-৩ শত টাকা আয় করে চালাতে হয় নিজ সংসার। সংসার চললেও এ পেশায় জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। -সংবাদদাতা, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×