ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পৃথিবীর বাইরে লেক!

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পৃথিবীর বাইরে লেক!

পৃথিবীতে শুধু প্রাকৃতিক লেকই (হ্রদ) দেখতে পাওয়া যায় না, শিল্পশক্তি উৎপাদন, অভ্যন্তরীণ জল সরবরাহ, কৃষি কার্যক্রম প্রভৃতির সুবিধার্থে নির্মিত কৃত্রিম লেকের দেখাও পাওয়া যায়। কিন্তু নাসার বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাইরেও কিছু লেকের সন্ধান পেয়েছেন। পৃথিবীতে রয়েছে হাজারো বড়-ছোট লেক । মূলত লেক হলো ভূবেষ্টিত লবণাক্ত বা মিষ্টি স্থির পানির বড় আকারের জলাশয়। লেক উপসাগর বা ছোট সাগরের মতো কোন মহাসমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না, তাই এতে জোয়ার-ভাটা হয় না। সরাসরি বৃষ্টিপাত ও হ্রদে পতিত হওয়া নদী বা অন্য জলধারা লেকের পানি সরবরাহ করে। পৃথিবীর বাইরে খোঁজ পাওয়া কিছু লেক সম্বন্ধে এবার আমরা জানব। ক্রাকেন মারে ॥ ক্রাকেন মারে হলো শনির সবচেয়ে বড় চাঁদ টাইটানের বৃহত্তম জলাময় স্থান। এমনকি এটাকে পৃথিবীর কাসপিয়ান সাগর থেকেও বড় মনে করা হয়। এই লেকের নামকরণ করা হয়েছে নরওয়েজিয়ান উপকূলের সমুদ্র দেবতা ক্রাকেনের নামে। ২০০৮ সালে ক্যাসিনি মহাকাশযান সর্বপ্রথম টাইটানের গায়ে এই বিশাল লেক আবিষ্কার করে। এর আয়তন প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪শ’ ৪১ বর্গকিলোমিটার। লেকটির গভীরতা ১শ’ ৭৫ গজ। এছাড়া এতে যে তরল পদার্থ রয়েছে তার ধীর ঢেউয়ের সন্ধানও পাওয়া গেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই লেকে যে তরল পদার্থ রয়েছে তার মূল উপাদান হলো হাইড্রোকার্বন। নাসা জানায়, লেকটি সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে তারা একটি তদন্ত মিশন পরিচালনা করার পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই করেছে। লিজিয়া মারে ॥ গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীর একটি চরিত্র লিজিয়ার নামে নামকরণ করা লেক লিজিয়া হলো শনির উপগ্রহ টাইটানের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক। এটি টাইটানের উত্তর মেরুতে অবস্থিত। এই লেকে হাইড্রোকার্বন, মিথেন, নাইট্রোজেন এবং ইথেন রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। লিজিয়া মারে দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে যথাক্রমে ২৬০ এবং ২১৭ মাইল। এছাড়া লেকটির চারদিকজুড়ে রয়েছে ১২শ’ ৪০ মাইল উপকূল। আয়তনে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় লেক ‘লেক সুপিরিওরের’ থেকেও বড় লিজিয়া মারে। এর সর্বাধিক গভীরতা ২শ’ ১৯ গজ এবং গড় গভীরতা ৫৪ দশমিক ৬ গজ। লেকটির মোট তরলের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৬শ’ ৭৯ ঘনমাইল। লোকি প্যাটেরা ॥ বৃহস্পতির চাঁদ আইওতে অবস্থিত লেক লোকি প্যাটেরার নামকরণ করা হয়েছে নরওয়েজিয়ানদের ঈশ্বর লোকির নামে। লোকি প্যাটেরাকে বলা হয় আইওয়ের একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির বিষণ্ণতা। অর্থাৎ, একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি থেকেই এই লেকের উৎপত্তি। যে কারণে এই লেককে লাভার লেকও বলা হয়। সৌরজগতের মধ্যে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি লাভা রয়েছে এই লেকে। নাসা জানায়, ভূগর্ভের ম্যাগমাও এই লেকের লাভার সঙ্গে যুক্ত। যে কারণে প্রতিনিয়ত এ থেকে উচ্চতাপ নির্গত হয়। লোকি প্যাটেরা, লিজিয়া মারে বা ক্রাকেন মারের মতো সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ, চন্দ্র এবং গ্রহাণুতে লেকের সন্ধান পেয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ এবং গ্রহাণুর বিভিন্ন গঠন ও বৈশিষ্ট্যের কারণে এসব লেকের জন্ম হয়। তবে সব লেকেই পৃথিবীর মতো সমান পানি নেই। যেসব পদার্থ রয়েছে তাদের অনুপাতও সবখানে সমান নয়। শুধু পৃষ্ঠদেশীয় লেক নয় পৃথিবীর বাইরে ভূগর্ভের লেকেরও সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কিছুদিন আগে মঙ্গলে এমন লেকের সন্ধান পাওয়া গেছে। যদিও সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি কিছু জানতে পারেননি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন সৌরজগতের অন্য গ্রহ এবং চাঁদে ভূগর্ভে লেক রয়েছে। আর সেগুলোতে যদি পানির সন্ধান পাওয়া যায় তাহলে সেখানে জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তবে এর জন্য দরকার আরও নতুন আবিষ্কার, নতুন অভিযান এবং প্রচুর সময়।-ইয়াহু নিউজ
×