ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতু দৃশ্যমান চলতি মাসেই

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পদ্মা সেতু দৃশ্যমান  চলতি মাসেই

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ চলতি সেপ্টেম্বরেই পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে। বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর এই মাহেন্দ্রক্ষণকে ঘিরে প্রকল্প এলাকায় বিশেষ পরিবেশ বিরাজ করছে। এদিকে পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের তিন দিনব্যাপী সরেজমিন সভা চলছে জাজিরার সার্ভিস এরিয়ায়। এতে অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ দেশী-বিদেশী ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পুরো টিম অংশ নিচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আব্দুল আউয়াল, জাপানের ইসিহারা ও ফুজিনো, কানাডার অস্টেন ফিল্ট ও নেদারল্যান্ডসের কারবাজাল। শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ এই সভার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়। এতে বেশিরভাগ সময়ই বাকি ১৪টি পিয়ারের ডিজাইন চূড়ান্তকরণ বিশেষ বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘কাউই’ ও ‘রেন্ডেল’ বিস্তারিত রিপোর্ট উপস্থাপন করে। সভায় বিষয়টি নিয়েই বেশি আলোচনা চলছে। জাজিরার সার্ভিস এরিয়া-২ সভাকক্ষে দু’দিন ধরে চলা সভা থেকে ধারণা দিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতুর গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জটি সফল হতে যাচ্ছে। যা আজ শনিবার স্পষ্ট হবে বলে সভায় উপস্থিত প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। এই সভা থেকেই এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হবে। বৃহস্পতিবার থেকে সার্ভিস এরিয়া-২ এ এই সভা চলছে। তবে আজ শনিবার পুরো টিম নির্মাণাধীন সেতুটি ঘুরে দেখবে এবং চূড়ান্ত অবজারবেশন জানাবে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর জন্য চলতি সভাটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে সব প্রতিকূতা ছাপিয়ে সেতুর কাজ তর তর করে এগিয়ে চলেছে। শুক্রবার রাতে এই রিপোর্ট লেখার সময় ৩৮ নম্বর পিয়ারে (খুঁটি) পিয়ার ক্যাপ কংক্রিটিং (ঢালাই) চলছিল। এটিই এই খুঁটিটির শেষ কংক্রিটিং। পাশের ৩৭ নম্বর পিয়ারের ক্যাপের খাঁচা বসে ১২ সেপ্টেম্বর। কাল রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ৩৭ নম্বর পিলারের এই ফিনিশিং ক্যাপের কংক্রিটিং হবে। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর মাওয়ার পার্শ্ববর্তী কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ১ম স্প্যানটি (যার নং ৭এ) নেয়া হবে জাজিরা প্রান্তের এই ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের কাছে। আর এটি স্থাপন করা হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। এ বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, নির্ধারিত তারিখ বলা না গেলেও এটি নিশ্চিত করা যাচ্ছে স্প্যান বসছে চলতি মাসের (সেপ্টেম্বর) শেষের দিকে। তিনি বিশেষজ্ঞ প্যানের সভা এবং সেতেুর অন্যান্য কর্মকা- নিয়েও আলোচনা করেন। তবে চলতি মাসে যে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে এটা সবার কাছে বিশেষ আনন্দের খবর। তাই এখানে এ বিষয়ে চলছে হরদম ব্যস্ততা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অবিরাম বিশেষ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। সকলের মধ্যেই বিশেষ এক উদ্যম লক্ষ্য করা গেছে। এই স্প্যানটি টেনে আনার জন্য অপেক্ষমাণ ৩৬ শ’ টন ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেনসহ সংশ্লিষ্ট সব সেক্টরেই তৎপরতা। এদিকে ‘৭এ’ নম্বর স্প্যানটির চূড়ান্ত রঙের কাজ চলছে। স্প্যানটির (সুপার স্ট্রাকচার) চূড়ান্ত রং হচ্ছে ধূসর। এদিকে ‘৭বি’ নম্বর স্প্যানটির ফিটিং সম্পন্ন রয়েছে। এটিও শীঘ্রই রং করা শুরু হবে। কারণ অক্টোবরের শেষের দিকে স্প্যানটি বসবে ৩৮ ও ৩৯ পিয়ারের। ইতোমধ্যেই ৩৯ নম্বর পিয়ারের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, দুটি হ্যামার এখন হরদম পাইল বাসাচ্ছে। তাই এখন নদীতে ৭১টি পাইল বসেছে। এরমধ্যে টপ পাইল ৫২টি। এছাড়া তীরের ৪২ নম্বর পিয়ারের ১৬টি পাইল বসে গেছে। এখন চলছে ক্যাপের কাজ। এছাড়া জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সেতুর ১৭০টি পাইল স্থাপন হয়েছে। আর মাওয়া প্রান্তে পাইল বসেছে ৩টি। এদিকে ৩ হাজার কিলোজুল এবং ২ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার দুটি হ্যামার বিকল পড়ে থাকায় এবং এই দুটি হ্যামার মেরামত সম্ভব না হওয়ায় পাইল স্থাপন ধীরগতির কারণে নতুন আরেকটি হ্যামার আনা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর জন্য বিশেষভাবে তৈরি সাড়ে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি জার্মানিতে তৈরি সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন এ্যাসেম্বলিংয়ের কাজ চলছে। আগামী নবেম্বর মাসের শেষের দিকে এটি মাওয়ায় পৌঁছার কথা রয়েছে।
×