ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সহিংসতা বন্ধের আহ্বান মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সহিংসতা বন্ধের আহ্বান মিয়ানমারের ওপর  আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে

বিডিনিউজ ॥ রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গার পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রামে গ্রামে যা ঘটছে তাকে জাতিগত নির্মূল অভিযানের একটি ‘ধ্রুপদী উদাহরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি। এদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিক হিসেবে তাদের নিরাপদে বসবাস করার সুযোগ করে দিতে মিয়ানমারের ওপর আরও কূটনৈতিক চাপ দেয়ার জন্য বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলার ঘটার পর থেকে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে এই দমন নির্যাতনমূলক সেনা অভিযান চালাচ্ছে। সেনাবাহিনী কীভাবে গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে, ঘরের ভেতরে আটকে রেখে কীভাবে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, লুটপাট চালিয়ে কীভাবে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, সেই বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কথায়। জাতিসংঘের হিসাবে গত দুই সপ্তাহে ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে, যাদের অনেকেই সীমান্ত পার হয়েছেন গুলির বা পোড়া জখম নিয়ে। মিয়ানমার তাদের সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে বর্ণনা করেছে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসেবে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামে হামলা ও হত্যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদেরই। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার যাইদ বিন রাআদ আল হুসাইন সম্প্রতি জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলে দেয়া বক্তব্যে মিয়ানমারে নৃশংস সেনা অভিযানের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় আধা-সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে, সেখানে নিয়মিতভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটছে। এমনকি পলাতক বেসামরিক মানুষদের গুলি করা হচ্ছেÑ এরকম অনেক তথ্য ও স্যাটেলাইটের ছবি আমাদের কাছে রয়েছে। মিয়ানমারের সরকারকে এই অভিযান বন্ধের পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর জন্য জবাবদিহি করার আহ্বান জানান হাইকমিশনার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মারাত্মক এই সুদূরপ্রসারী বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রোহিঙ্গা মুসলমানরা যেভাবে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, তাতে স্পষ্ট যে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের নাগরিকদের রক্ষা করছে না। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী আউং সান সুচির নেতৃত্বে মিয়ানমারে সেনা শাসন থেকে গণতন্ত্রে ফেরার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সহযোগিতা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের পদক্ষেপ না নেয়ায় সুচি এখন বিশ্বব্যাপী সমালোচনায় পড়েছেন। শান্তির জন্য পাওয়া তার নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেয়ারও দাবি তুলেছেন কেউ কেউ। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বার্মিজ নিরাপত্তা বাহিনীকে আইনের শাসন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। আমরা বলছি, এই সহিংসতা বন্ধ করুন। কোন জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে যাতে আর ঘর হারাতে না হয় তা নিশ্চিত করুন।’ এদেিক রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি আসার আগে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকেও এ পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিবৃতি দেয়া হয়। সুচির মুখপাত্র জ থাই ওই বিবৃতিতে বলেন, সন্ত্রাসীদের হামলার জবাবে ওই অঞ্চলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে সৃষ্ট সাম্প্রতিক সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হয়ে দুর্দশায় পড়া সম্প্রদায়কে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে উদ্বেগ, সে বিষয়ে মিয়ানমার সরকার অবগত।
×