ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে চাপ সৃষ্টিতে মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমার যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে চাপ সৃষ্টিতে মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমার যাচ্ছেন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর প্রবল চাপ তৈরি করতে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই কয়েক দফায় রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে চলতি সপ্তাহে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি প্যাট্রিক মার্ফি মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন। সূত্র জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য সফরে থাকা টিলারসন বৃহস্পতিবার লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরিস জনসনের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমি মনে করি, এই জনগোষ্ঠীর পাশে এখন বিশ্ববাসীকে দাঁড়াতে হবে। একটি জাতিগোষ্ঠী হিসেবে তাদের সঙ্গে কী আচরণ করা উচিত, সে কথা বলতে হবে। এই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, এই নির্মমতা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরলেও সুচিকে এখনও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে রফা করে সরকার চালাতে হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সুচিকে জটিল একটি পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলেও মনে করেন টিলারসন। এদিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়ায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহযোগিতা করেছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নোয়ার্ট জানিয়েছেন, এত বেশি রোহিঙ্গাকে গ্রহণ ও নিরাপদে থাকার স্থান দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে আসা বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ৬৩ মিলিয়ন ডলার সহযোগিতা দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি, সংবাদের মাধ্যমে আপনারা যে পরিস্থিতির কথা জানছেন তা সত্ত্বেও এখনও এ নিয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা আমাদের লোকেদের কাছ থেকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করছি। নোয়ার্ট জানান, ডেপুটি এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি প্যাট্রিক মার্ফি আগামী সপ্তাহে মিয়ানমার যাবেন। তিনি (মার্ফি) আরও মানবিক সহযোগিতা, সাংবাদিকদের প্রবেশের বিষয়ে চাপ দেবেন। রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করবেন। গত বুধবার মার্ফি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জানিয়ে নোয়ার্ট বলেন, রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছিলেন এবং তিনি আলোচনায় পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। অবশ্যই কঠিন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাটিও কঠিন ছিল। এদিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে সংস্থাটির মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক জানান, ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন লাখ ৮৯ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ এসেছে। তিনি বলেন, শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। গত বছরের অক্টোবরের সহিংসতায় পালানো মানুষদের মিলিয়ে হিসেব করলে রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের প্রায় ৪০ শতাংশ বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। দুজারিক জানান, কক্সবাজারে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের কয়েকটি ট্রাক রয়েছে। যেগুলোতে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য জরুরী পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রয়েছে। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৬০ শতাংশই শিশু। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র দুজারিক বলেন, আগের শিবিরগুলো এমনিতেই শরণার্থীদের সংখ্যার আধিক্য ছিল। নতুন শরণার্থীরা যেখানেই সুযোগ পাচ্ছে সেখানেই থাকছে। ইউনিসেফের মতে, রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় সবকিছুরই ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে আশ্রয়, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট আছে। দুজারিক আরও বলেন, আগামী চার মাসে জরুরী সেবার জন্য ৭০ লাখ ডলার সহযোগিতার জন্য ইউনিসেফ আহ্বান জানিয়ছে। একদিন আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সেখানে একটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত, তিনি (মহাসচিব) যেমন বলেছেন সামরিক ও নিরাপত্তা অভিযান থামাতে হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শরণার্থী পুরুষ, নারী ও শিশুদের সহযোগিতা এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শরণার্থীদের মধ্যে শিশুদের হার উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বেশি। এসব মানুষের এখনই সহযোগিতা প্রয়োজন।
×