ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তৎপর আইএসআই ॥ দেশ অস্থিতিশীল করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তৎপর আইএসআই ॥ দেশ অস্থিতিশীল করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের আত্মস্বীকৃত মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনী, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী গোষ্ঠীর জঙ্গীরা আশ্রয় নিয়েছে পাকিস্তানে। তাদের আশ্রয়দানে সাহায্য করে যাচ্ছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। মিয়ানমারে হত্যা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে কাবু করতেও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে এই ধরনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থান করছে আত্মস্বীকৃত মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল (অব) আবদুর রশীদ ও তার দোসররা। মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারও আছে পাকিস্তানেই। পাকিস্তানে অবস্থান করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠ হরকাতুল জিহাদের (হুজি) কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন। তারা পাকিস্তানে অবস্থান করে বর্তমানে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসিত বিএনপির এক তরুণ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনী, যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীদের সহায়তায় বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে যে পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে তাতে সামনে চলে এসেছে রোহিঙ্গা ইস্যু। গোয়েন্দা সূত্র মতে, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও মিয়ানমার ত্যাগে বাধ্য করার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে উস্কানি দিয়ে চলেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। আইএসআই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে অর্থনৈতিকভাবে কাবু ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার এই চেষ্টার সঙ্গে যোগসাজশ আছে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনী, যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গী গোষ্ঠীর। বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির এক তরুণ নেতা যার সঙ্গে বরাবরই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কানেকশন রয়েছে বলে অভিযোগ আছে; তিনিও বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে বিশৃঙ্খল পরিস্থতি তৈরির ছক কষছেন বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি। সূত্র জানায়, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুুকু ও বিএনপি নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই হচ্ছেন মাওলানা তাজউদ্দিন, যে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের সদস্য এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার চার্জশীটভুক্ত পলাতক আসামি। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি হুজি নেতা আইডিপি প্রধান আবদুস সালামের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উল্লেখ করা হয়েছে, জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সহায়তায় তার ভাই হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন দেশ থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে। বর্তমানে জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের নামে যে জঙ্গী তৎপরতা ও আত্মঘাতী ঘটনা ঘটানো হচ্ছে তার সঙ্গে মাওলানা তাজউদ্দিনের মাধ্যমে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের যোগসাজশ থাকার বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তনাধীন বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা নথিতে যে প্রতিবেদন রয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানের আইএসআইয়ের মদদে অতীতে চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান করে আনা হয়েছে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসমকে (উলফা) বাংলাদেশের মাটিতে ঘাঁটি স্থাপনেও সহায়তা করেছে আইএসআই। উলফার সামরিক শাখাপ্রধান পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কানেকশন থাকার বিষয়টি ঢাকার গোয়েন্দাদের তথ্য রয়েছে। চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের তথ্য পেয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার ঘটনায় আরেক গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক(ডিজি) আবদুর রহিমকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, দুবাইয়ে বৈঠক করে চট্টগ্রামে ১০ট্রাক অস্ত্র চালান আনার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন বর্তমানে লন্ডনে স্বেচ্ছানির্বাসিত বিএনপির ওই তরুণ নেতা। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান পৌঁছানোর উদ্দেশে দুবাইয়ে বৈঠকের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা আবদুর রহিমকে বিপুল নগদ টাকা দেয়ার পাশাপাশি নামী-দামী উপঢৌকন দেয় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের দেয়া নগদ টাকার মধ্যে আবদুর রহিমকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়েছিল বলে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে উল্লেখ আছে। এই টাকা আবদুর রহিম এফডিআর করেন বলে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে দেয়া জবানবন্দীতে উল্লেখ আছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই আগে থেকেই বিএনপি-জামায়াতের উগ্রপন্থী নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষার ধারাবাহিকতায় এখন আবার নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে চলেছে। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতাকারী মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর বিচার ও বিচারের রায় বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করতে প্রকাশ্যেই জামায়াত-শিবিরের পক্ষাবলম্বন করে অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে খোদ পাকিস্তান সরকার, যার নেপথ্যে ভূমিকা পালন করছে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির ঘটনা নিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি, জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাসসহ ব্যাপক অপতৎপরতার বিষয়টি প্রকাশ্যেই ঘটেছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সহায়তায় পলাতক বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত সাজাপ্রাপ্ত খুনীদের আশ্রয়দান, বাংলাদেশের জঙ্গীদের মদদদানের বিষয়গুলোর মাধ্যমে নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা তৈরি করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির নীলনক্সা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন আবার রোহিঙ্গা ইস্যুতেও পাকিস্তার সরকার ও তার গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনকে বিভ্রান্ত করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ’৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি।
×