ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপের বিষয় বিবেচনার আহ্বান

রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রশংসা করে ইইউ পার্লামেন্টে প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রশংসা করে ইইউ পার্লামেন্টে প্রস্তাব

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিশাল রোহিঙ্গা জনস্রোত সামলানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানবিক পদক্ষপের প্রশংসা করে বৃহস্পতিবার একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং ইইউভুক্ত দেশগুলোর প্রতি মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপের বিষয় বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ পার্লামেন্ট অধিবেশনের প্রস্তাবে বলা হয়, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এই মানবিক বিপর্যয়ের মুখে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সুরক্ষা সুগমে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দিচ্ছে। খবর এনডিটিভি ও বিবিসির। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের প্রতি রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা সকল রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ঢুকতে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা এসব শরণার্থীর জন্য আর্থিক ও বস্তুগত সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে (ইউরোপীয়) কমিশন ও ইইউভুক্ত দেশগুলোর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে প্রস্তাবে এটাও বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে এটি পরিষ্কার করতে হবে যে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে তারা ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক অবরোধ আরোপের বিষয় বিবেচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে। এদিকে ব্রাসেলস থেকে এএফপি জানায়, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের এই মানবিক সঙ্কটকে ‘মর্মান্তিক বিপর্যয়’ অভিহিত করে এর কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। এছাড়া ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অবিলম্বে রোহিঙ্গা মুসলমানের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের দাবি জানিয়েছে। এই সঙ্কটের কারণে প্রায় চার লাখ লোক মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ সঙ্কটের কাছে বিশেষ করে মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও জোরদার হয়েছে। ইউটিউবে এক প্রশ্নোত্তর অধিবেশনে জাঙ্কার বলেন, ‘মিয়ানমারে যা ঘটছে তা প্রকৃতপক্ষেই এক মর্মান্তিক মানবিক বিপর্যয়। কারণ সেখানে আবারও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোকে নির্মূলের চেষ্টা চলছে। ফ্রান্সের স্ট্রসবার্গে ইউরো এমপিদের এক বৈঠকে মিয়ানমারে সকল সহিংসতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষের সরাসরি নিন্দা জানাতে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া দ্রুত বন্ধে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট কথিত রোহিঙ্গা জঙ্গীদের হামলার জবাবে শুরু করা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমনপীড়নের কারণে বহু সংখ্যক রোহিঙ্গা দেশ ছাড়া হয়ে পড়ে। এর ফলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় প্রায় চার লাখ লোক প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। এদিকে ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়, ২৫ আগস্ট থেকে সর্বশেষ রোহিঙ্গা জনস্রোত আসা শুরু হওয়ার আগেই বাংলাদেশের আশ্রয়ে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এ সহিংসতার কারণে উভয় সীমান্তে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। সামরিক বাহিনীর এমন দমনপীড়নের নিন্দায় সুচির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ ক্ষুধার্ত ও পরিশ্রান্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রাণ প্রদানে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মিয়ানমার থেকে স্রোতের মতো আসা এসব লোকের ৬০ শতাংশই শিশু। এদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রায় ৩০ হাজার রাখাইন বৌদ্ধের পাশাপাশি অনেক হিন্দু গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
×