ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুচির কুশপুতুল মিয়ানমারেরপতাকা দাহ

রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকায় হেফাজতের বিক্ষোভ, সমাবেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকায় হেফাজতের বিক্ষোভ, সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে হেফাজতসহ উগ্র ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে কর্মসূচীতে আউং সান সুচির কুশপুতুল দাহ করা হয়। পতাকা পোড়ানো হয়েছে মিয়ানমারের। হেফাজত নেতাদের দাবি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ আরাকান স্বাধীন করা। এ জন্য হেফাজত নেতারা যুদ্ধ করতে সরকারের কাছে অস্ত্র দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সোমবার মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও করা হবে। যদি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ না হয় তাহলে ৫ মের মতো সোমবার আরেকটি শাপলা চত্বর সৃষ্টি করা হবে। কর্মসূচীতে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ বিতরণ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মতোই সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন হেফাজত নেতারা। তারা বলেছেন, সরকারের মাধ্যমে ত্রাণ দিয়ে তা রোহিঙ্গাদের কাছে পৌঁছবে কিনা সন্দেহ আছে। হেফাজতের পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচীকে ঘিরে জুমার নামাজের আগ থেকেই দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও এ আশপাশের এলাকায়। নামাজ শেষে বিক্ষোভ মিছিলে সেøাগান তোলা হয়, ‘বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়ো, রাখাইন স্বাধীন করো, বিশ্ব মুসলিম লড়াই করো মিয়ানমারকে ধ্বংস করো।’ আউং সান সুচিকে হত্যাকারী উল্লেখ করে নেতারা বলেন, রাখাইনের মুসলমানদের নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর জিহাদ ফরজ হয়ে গেছে। অবিলম্বে এ নির্যাতন বন্ধ না হলে সশস্ত্র জিহাদের ঘোষণা করা হবে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন বন্ধ না হলে মিয়ানমারের পণ্য বর্জন করতে হবে। রাখাইনে সুচিকে ডুবিয়ে মারা হবে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ করে তারা বলেন, বার্মার বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে যুদ্ধ হবে। কর্মসূচী চলাকালে উত্তর গেটের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পল্টন মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেডে রাস্তা বন্ধ থাকায় বিক্ষোভ মিছিল ঘুরে রাস্তার উত্তর অংশে অবস্থান নেয়। পরে রাস্তায় ওপর নেতাকর্মীরা মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির ছবিতে জুতা পেটা করে এবং তার ছবি পুড়িয়ে দেয়। সমাবেশে হেফাজতের ঢাকা মহানগর আমির নূর হোছাইন কাসেম বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ আরাকান স্বাধীন করা। স্বাধীন আরাকান ছাড়া রোহিঙ্গাদের শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। বার্মা সরকার গণহত্যা করছে। রাখাইন এলাকায় ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে আহ্বান জানাবো রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ান। তাদের খাদ্য, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। রোহিঙ্গাদের আবাস ভূমিতে ফিরিয়ে দিতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, যুদ্ধের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিন। এখনই মোক্ষম সময়। বাংলার মুসলমান মিয়ানমারকে জিহাদের মাধ্যমে উপযুক্ত প্রমাণ দেবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ করতে দিন। ৫ মের মতো ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা অবরোধ করে দিতে হবে। একাত্তরের মুুক্তিযুদ্ধ করেছেন হেফাজত নেতারা এমন দাবি করে সমাবেশে বলেছেন, ১৯৭১ সালের মতো আমরা আবার অস্ত্র হাতে নিতে প্রস্তুত রয়েছি। নুর হোসের কাসেমী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে জোরালো ভূমিকা রাখুন। হেফাজতের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, সরকার নেতৃত্ব দিলে জনগণ যুদ্ধে অংশ নিতে প্রস্তুত আছে। কূটনৈতিক মিশনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান না হলে প্রধানমন্ত্রীকে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়ার আহ্বানও জানান তিনি। যদি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ না হয় তাহলে ৫ মের মতো ১৮ সেপ্টেম্বর আরেকটি শাপলা চত্বর সৃষ্টি করা হবে বলেও হুমকি দেন এ নেতা। এদিকে সমাবেশে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ বিতরণ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মতোই সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন হেফাজত নেতারা। মহাসচিব জুনাইদ আল হাবীব বলেন, যারা বিনা ভোটে নির্বাচিত তাদের কিভাবে বিশ্বাস করব। সরকারের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করলে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা মুসলানমানরা ত্রাণ পাবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাই সবাইকে ত্রাণ বিতরণের সুযোগ দিতে হবে। ত্রাণ বিতরণে বাধা না দিয়ে যারা ত্রাণ দিতে চায় তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। অন্যথায় অনেকেই ত্রাণ পাবে না। রোহিঙ্গা সঙ্কটের জন্য দায়ী করে মিয়ানমারের পতাকা ও দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী আউং সান সুচির প্রতীকী কফিনে আগুন দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। মিছিলে অংশ নেন দলটির মহাসচিব হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামীদি, যুব বিষয়ক সম্পাদক মুফতি ফখরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন প্রমুখ। ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের বিক্ষোভ করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানায়। ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য হতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জাতিগত নিধনযজ্ঞের কারণে মিয়ানমার সরকারের নিন্দা করায় আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্যের প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তবে মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের এত বড় জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোই যথেষ্ট হবে না। বরং তার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব ধরনের কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের তাদের পূর্বপুরুষের ভিটে-মাটিতে ফিরিয়ে নেয়া এবং নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করতে হবে।
×