ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার থেকে আসা ২ লাখের বেশি শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমার থেকে আসা ২ লাখের বেশি শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ রোহিঙ্গা স্রোত যেন থামছেই না! নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সকলেই নির্যাতনের শিকার হয়ে পা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ প্রাঙ্গণে। এই দুর্দিনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে রোহিঙ্গা নারী ও শিশু। মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ২ লাখের বেশিই শিশু, যা এবার আসা মোট শরণার্থীর ৬০ শতাংশ। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এসব শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। জরুরী ভিত্তিতে এসব শিশুর সাহায্যের দরকার। বাংলাদেশে ২ লাখ রোহিঙ্গা শিশুর ঝুঁকিতে থাকার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। নির্যাতনে পিষ্ট হয়ে শিশুরা ঝুঁকি নিয়েই নৌপথে এগুচ্ছে বাংলাদেশে। ঢেউয়ে ভেসে আসছে রোহিঙ্গা শিশুর লাশ। নাফ নদীতে এ রকম কত রোহিঙ্গার লাশ ভেসে এসেছে, তা সকলের অজানা। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংগঠন রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রোহিঙ্গা শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ^বাসীর সাহায্য প্রয়োজন। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিশুর যে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি হয়েছে তা কিভাবে পূরণ করবে বিশ্ব? আমরা চাই না, বিশ্বের একটি শিশুরও ক্ষতি হোক। আমরা ত্রাণ দিতে পারব। কিন্তু শিশুর মানসিক বিকাশে যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে পারব না। ইউনিসেফের এডুকেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মহসীন বলেন, চলমান সহিংসতায় বাংলাদেশে যে রোহিঙ্গা এসেছে এর মধ্যে দুই লাখ শিশু। এসব শিশুর মধ্যে এক লাখ শিশু আট বছর বয়সী। যাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ প্রয়োজন। তারা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে আহত হয়েছে। তাদের শারীরিক বিকাশের জন্য খাদ্যপুষ্টি যেমন প্রয়োজন তেমনি মানসিক বিকাশও প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ ও মানবিক সহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের পক্ষে এর সদস্য সচিব ও বিলস’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ ও গ্রেফতারসহ চলমান নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসতে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম (এসএনএফ) বিশ্বের সকল আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রমিক অধিকার সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গা নারী ও শিশু সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবিলম্বে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া, যথাযথ পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মানবিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকার ও দেশের জনগণের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করছি। ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা নারী ও শিশুকে সহায়তা দেয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের টিকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য প্রায় দুই লাখ টিকার প্রয়োজন। এদিকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ কয়েকটি এনজিও সংস্থা এগিয়ে এসেছে। প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে জানান, রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে তাদের একটি নির্দিষ্টস্থানে রেখে অস্থায়ী বাসস্থান তৈরির কাজও চলছে। নারী, শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ভিজিএফের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া, প্রসূতির মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এদিকে, ৩ সপ্তাহে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৪ লাখ রোহিঙ্গার জন্য জরুরী ত্রাণ যোগাতে অবিলম্বে ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থা ‘দি ইউনাইটেড নেশন্স পপুলেশন ফান্ড’ (ইউএনএফপিএ)। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষা ও খাদ্য সহায়তা হিসেবে ১৩ মিলিয়ন ডলার জরুরূ সহায়তা চেয়েছে সংস্থাটি। এ পর্যন্ত সহায়তা পাওয়া গেছে সাড়ে ৫ মিলিয়ন ডলার। ইউএনএফপিএ’র বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ইয়োরি কাতো এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, যেভাবে রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাতে তাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরীভাবে ওই অর্থ পাওয়া না গেলে মানবিক বিপর্যয় ঠেকিয়ে রাখা কঠিন হবে। নির্বিচারে গণধর্ষণে অনেক রোহিঙ্গা নারীকে প্রজনন স্বাস্থ্য চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার ৬৭ ভাগই হচ্ছে নারী ও শিশু। এসব নারীর অনেকে গর্ভবতী ও অনেকে সন্তান প্রসব করছেন। নতুন করে গর্ভবতী হচ্ছেন অনেক নারী। নির্বিচারে গণধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের পর প্রজনন স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সহিংসতায় আহত রোহিঙ্গা নারীরও চিকিৎসায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এদের শিশুদের জীবন বাঁচাতে শিশুখাদ্য ও জীবন রক্ষাকারী উপকরণ জরুরীভিত্তিতে প্রয়োজন। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে রোহিঙ্গা নারী ও শিশু।
×