ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দৌরাত্ম্য

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দৌরাত্ম্য

অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ঈদ-উল-আযহার পর সঙ্গত কারণেই আশা করা গিয়েছিল যে, দ্রব্যমূল্য কমে না আসুক অন্তত স্থিতিশীল থাকবে। বাস্তবে বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এর সপক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে দিন দিন চালের বাজার খুবই অস্থির। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম। বর্তমানে মোটা চাল ৪৮-৫০ টাকা কেজি এবং সরু ও মাঝারি মানের চাল ৬০-৭০ টাকা, পেঁয়াজের দামও না কমার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে এই দুটো পণ্য নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই কারসাজি করছেন আমদানিকারক, ব্যবসায়ী-মজুদদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। চালের বাজারে প্রথমে অজুহাত দেয়া হয়েছে অতিবর্ষণ ও বন্যাজনিত কারণে ফসলহানিসহ খাদ্যমজুদ কমে যাওয়া। জরুরী পরিস্থিতি সামাল দিতে সরবরাহ চাল আমদানির ওপর সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানিও শুরু হয়। সরকারও ভারত, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, কম্পোডিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানি শুরু করে। ইত্যবসরে চালের দাম বেড়ে যায় আন্তর্জাতিক বাজারে। সুযোগ নিয়ে চাল রফতানিকারক দেশগুলো দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না কিছুতেই। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে, হয়ত চালের দাম আরও বাড়তে পারে। কেননা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের দলে দলে আগমন। মানবিক কারণে কয়েক লাখ উদ্বাস্তুকে আশ্রয়ের ব্যবস্থাসহ খাওয়া-পরাতে হবে বাংলাদেশকেই। এমতাবস্থায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। জরুরী পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্যমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মজুদদার ও চাল ব্যবসায়ীদের প্রতি। অবৈধভাবে চাল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। ইতোমধ্যে চালের গুদাম পরিদর্শনসহ জরিমানার খবরও মিলেছে। অনুরূপ ব্যবস্থা নিতে হবে পেঁয়াজ, গুঁড়াদুধ, ভোজ্যতেল, গম, আটা, চিনি, ডালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও। সাধারণ মানুষ ও রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারক সিন্ডিকেট যেন আদৌ কোন সুযোগ নিতে না পারে সেদিকে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, টিসিবি, ট্যারিফ কমিশন, সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান কর্তৃপক্ষকে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি, সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতাস্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার, মেট্রো চেম্বারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো খুবই শক্তিশীল এবং সরকারের ওপর তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও অস্বীকার করা যায় না। তারপরও ভোক্তা ও ক্রেতাস্বার্থ একরকম উপেক্ষিত এবং অনালোচিত থাকছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি-মুনাফা ইত্যাদি থাকবেই। তবে এসবই হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যেক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে।
×