ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কবিতা

**আর কোনো সত্য নেই মতিন বৈরাগী মনে হয় অনন্ত সময় ধরে এইখানে বসে আছি আমি আমার শরীর ছুঁয়ে বেড়ে ওঠা অরণ্য বৃক্ষরাজির অখ নীরবতা নুন হয়ে ঝরে গেছে, মুনি ঋষি ধ্যানী দস্যুর তা ব আমার অস্তিত্বে বিলীন মনে হয় আমিই বাল্মিকী বসে বসে লিখেছি অমর পঙক্তিমালা কিংবা কালিদাসের বিরহ যন্ত্রণা আদি-অন্ত চলমান শক্তির অনন্ত সময় আমি দেখেছি এক হরিণী মাতার চঞ্চল পদসঞ্চালন তৃষিত হৃদয় দেখেছি মানুষ হয়েছে রাক্ষস আবার তারাই দেবতা পলায়নপর রাজা-মহারাজা, নিশুতি বিলাপ- মনে হয় এইখানে বসে আছি আমি শরীরের শিকড়বাঁকড় গেঁথে গেছে ভূমিতে দারুণ স্থান-কালের অখ নিয়ম আমি সকল সত্যের সত্য; রজঃতমঃগুণ আমি তন্ত্র-মন্ত্র প্রেম-প্রীতি ছল না, যমের আগুন আমিই ব্রহ্মাে র সকল স্বরূপ অস্তিত্বের আর কোনো সত্য নেই- ** দিয়ে দিই জীবনের সুনীল আকাশ চঞ্চল শাহরিয়ার কাজ নেই। বারান্দায় বসে তোমাকে দেখছি। দেখছি তোমার কার্ডিগানে বসা নীল প্রজাপতি। টেবিলে চায়ের কাপ। রঙিন ম্যাগাজিন। প্লেনের টিকেট। মোবাইল ফোনে রিংটোন বাজছেই। রিসিভ করার প্রয়োজন মনে করছো না। গ্রিলে হাত রেখে খুব মনোযোগ দিয়ে কার কথা ভাবছো এমন? বৈশাখের সকাল আজ অনেক সুন্দর। তবু তোমার মন খারাপ? কাছে আসো দুঃখী মেয়ে। মন ভালো করে দিই দিয়ে দিই জীবনের সুনীল আকাশ। ** মধুমতির মাঝি রহমান মুজিব সোনার বাটিতে তুলে রাখো মাঝির মৃত্যু শীতলতা না হয় বেদনার অলৌকিক স্পর্শে স্পষ্ট হোক তার জলছাপ একটি রেডকালার আগস্ট ধানমন্ডির সিঁড়ি হতে চারদিকে ছড়িয়ে দেয় অশ্রুমশাল, বেদনার পাড়ায় তৈরি হয় রোদনের গ্যালাক্সি সেই থেকে এখানে বারো মাসই আগস্ট সেই থেকে এখানে বারো মাসই রক্ত প্লাবিত মধুমতি মাঝি, তোমার না থাকা নিয়ে চোখের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে শ্রাবণ তাই বারো মাসই এখানে বৃষ্টিরা অশ্রুর নামে ঝরে। ** শ্রদ্ধা (মহান নেতা লেনিনের প্রতি) শ্যামসুন্দর সিকদার হে মহান নেতা লেনিন ! তোমাকে হাজারো সালাম! এটা কোনো রাজ দরবার নয়, কিংবা নয় কোনো সিনেট অধিবেশন, এ তো মৃত্যুর আসন! তবু মনে হয় শাসনে তোমার বিস্তৃত পৃথিবী, এখনও তোমার তরতাজা মুখ, সজ্জিত শরীর, অদ্ভুত সুন্দর সেই খোঁচা খোঁচা দাড়ি, স্থির মুখ! এখনও উজ্জ্বল রঙের ভেতর নীল মৃত্যু শুয়ে আছে, আলো ঝলমল ছোট্ট পৃথিবীর ছায়াপথ ওই মুখে! মানুষের সমঅধিকার দিতে তীব্র উচ্চারণে সদা যে সম্ভ্রান্ত, সেই তো করেছে পরাজিত পরাশক্তি! তোমার এমন শান্ত সুনিবিড় দুটি চোখ দেখে, দুর্দান্ত প্রতাপে প্রতিক্ষণ কেঁপেছিল ইতিহাস, অথচ এখন নিষ্পলক বন্ধ চোখের জ্যোতি যেন আরো বেশি প্রখরতায় কঠিন! যে সমাজতন্ত্র আলোকিত, কত মুগ্ধ উদ্ভাসিত! শোষিত শ্রেণির মানুষেরা এসে জানায় প্রণতি তোমার মমিতে, ‘আবছে’ দু’হাত উঠে আসে বুকে; কপালে কপালে বিষণœœ বিলাপ যেন ফুটে ওঠে? এখানে পলিট ব্যুরোর কোনই দরকার নেই তবু মূর্তিমান দাঁড়িয়ে প্রহরী তোমার সম্মানে, মৃত্যুও করেছে আরো মহীয়ান, তোমাকে সালাম! মাথা নত করে আছে সব বৃক্ষ, ফুল পাখি মাটি! অবনত সব মানুষের অহঙ্কার! পরাজিত শত্রু সব স্বৈরাচার, মুক্তির পায়রা আকাশে বেড়ায়, শাসনের যত বেড়াজাল ছিন্ন করে পরাজিত হয়েছে শৃঙ্খল! এই মৃত্যু তাই অমরত্ব দেয় অনাদিকাল পর্যন্ত। হে মহান নেতা! পৃথিবী দেখল, সততা জাগ্রত প্রহরীর মতো তোমার মৃত্যুর পাশে, উদারতা দৃশ্যমান মানব-মনুষ্য সেবা-শাসনের দোর গোড়ায় নিঃস্বার্থ ত্যাগের এক মহিমায়। তাই মনে মনে বার বার যেন ফিরে আসি এই তীর্থস্থানে, রেড স্কয়ারের এই ছোট্ট পূণ্য ভূমিতে তোমাকে সালাম জানাই, সযতেœ রক্ষিত তোমার মমিতে অর্পণ করেছি হৃদয়ের ফুল! ওই রাজপ্রাসাদ থাকুক বিদগ্ধ কলেবরে, এখানে কেবলই অভিজাতহীন ভালবাসায় শ্রদ্ধায় ঋদ্ধ তুমি! হে শ্রদ্ধেয়! তুমি এভাবেই থেকে যাবে মানুষের মনে হাজার বছর। (লেনিনের মমি দেখার পর, তাঁর প্রতি নিবেদিত।) ** ১৪ ফেব্রুয়ারি (১৯৮৩’র মধ্য ফেব্রুয়ারির শহীদের প্রতি) গোলাম কিবরিয়া এক বীভৎস অপূর্ব সকাল, পঞ্জিকায় শীত শেষ হয়েছে গতকাল, শেষ হয়নি ভোরের শীতল আমেজ, তনু-মনে রেগেছে বসন্তের হাওয়া। শীতের জড়তা ঝেড়ে ফেলেছে রমনা, শিমুল-টগরের ডালে ছুটছে বিহগ- বসন্ত এলো বলে। এমন এক ভালবাসার সকাল, তবু চারদিকে চাপাগুঞ্জন- কখন কি জানি কি হয়। চলাফেরা কথা বলা নিয়ন্ত্রণ হয় সামরিক ফরমানে এখানে ভালবাসা কিভাবে হয়? ফিলিস্তিনের মতো সেজেছে রমনা এবারও ফাগুন বুঝিবা যায় বৃথা, জলপাই রঙের দাঁতালো কনভয় দাঁড়িয়ে, উদ্যাত রাইফেল তাক করে আছে ক্যাম্পাসের দিকে। এখনই রক্ত চাই মুমূর্ষু শাসকের, যেন প্রাণ তার ওষ্ঠাগত যেমন হয়েছিল ’৫২-এর ফাগুনে। সেদিনও ভালবাসার শব্দমালা উচ্চকিত হয়েছিল স্লোগানে স্লোগানে, আজও সেই একই সুর ’৮৩-এর আরেক ফাগুনে জাফর জয়নাল দীপালি কাঞ্চনের কণ্ঠে। বুলেট ছড়ালো বাতাসে বারুদের গন্ধ, কাঁদুনে গ্যাসের তীব্র ঝাঁজে রমনা হারালো ফুলের সুবাস ত্রিশ বছর পর আবার সেই ফাগুনের আকাশ। আগুনঝরা প্রাতে রমনার সবুজ ঘাস এঁকে নিল বুকে ছোপছোপ রক্তের আল্পনা। ভালবাসার সেই একই সুর ত্রিশ বছর পর বরকত থেকে কাঞ্চন শুধু সময়ের এক ব্যবধান। ** কবিতা বাসুদেব হালদার আমার কবিতায় কোন আগাছা নেই। কোন ভালবাসাও নেই। নীরস পঙ্ক্তিমালা আর এলোমেলো ছন্দের খেলা। আবেগী চরণ নেই, বিষাদের ভাবনা নেই শুষ্ক মরুর বুকে এক ফোঁটা জলও নেই। তবু আমার কবিতাখানি জীবন্ত এক বৃক্ষ। শুধু চলার ক্ষমতা নেই তার। সেই এই পৃথিবীর বুক থেকে টেনে নেয় শব্দ; সাজায় আপন ছন্দে, আপন ফুলে আর ফলে, এই কবিতায় কোন ঘ্রাণ নেই সুর মিশ্রিত কোন ধ্বনিও নেই। তাই হয়তো এই কবিতাখানি কবিতা হবে না কোনকালে রয়ে যাবে পদ্মের খাতায় গদ্য হয়ে ॥
×