ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নুরুল করিম নাসিম

র্জানাল॥ চেন্নাই আখ্যান

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

র্জানাল॥ চেন্নাই আখ্যান

মাদ্রাজ তখনও চেন্নাই নাম গ্রহণ করেনি। সময়টা ১৯৮৬ সাল। আমার অনুজ কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে মাদ্রাজের ভেলোর ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। দীর্ঘ দেড় বছর ডাক্তারের নির্দেশে বাড়ি ভাড়া করে ভেলোরের সাতওয়াচারি অঞ্চলে থাকতে হলো। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছিল ভেলোর হাসপাতালে, অন্য এক ভাই কিডনি দিয়েছিল। প্রতি মাসে আমাকে ঢাকা-মাদ্রাজ আসা-যাওয়া করতে হতো। বেশ কঠিন সময় ছিল আমাদের পরিবারের জন্য। আমার অনুজ ব্যাংকে চাকরি করতেন বলে বেশ ভাল আর্থিক সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল। আমি তখন লায়ন্স ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট। চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট লায়ন জাকির এগিয়ে এলেন। তিনি ছিলেন সহৃদয় ব্যক্তি, বন্ধুবৎসল। তিনিও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমাদের সঞ্চয়ে যে কয়েক লাখ টাকা ছিল, সেটাও এই দুঃসময়ে কাজে লাগল। লোকে বলে ক্যান্সার এবং কিডনি রোগ আসলে রাজরোগ। কথাটা যে কত ধ্রুব সত্য তা কাজে নেমে বুঝতে পারলাম আমরা। সবচেয়ে যা প্রয়োজন, তা হলো লোকবল। সেটাও আমাদের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। আমার এক বিধবা মামাত বোন এগিয়ে এলেন। তিনি আমার মায়ের সঙ্গে দীর্ঘ দেড় বছর ভেলোর ছিলেন। তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ার ছেলেমেয়েদের সংসারে আছেন। শেষ পর্যন্ত কিডনি টান্সপ্ল্যান্ট হলো সফলভাবে। একদিন সবাই আমরা ঢাকায় ফিরে এলাম। আমার ভাই কিছুদিন বিশ্রাম নেয়ার পর ব্যাংকের কাজে পুনরায় যোগ দিল। ১৪ বছর বেঁচে ছিল আমার ভাইটি। সেই সময়টা, মাদ্রাজের সেই সব দিন এত ঘটনাবহুল ছিল যে, আজও মনে পড়লে স্মৃতিভারাক্রান্ত হয়ে পড়ি। কত বিচিত্র সব নারী-পুরুষ দেখেছি সেই সময়। দীর্ঘ ৩০ বছর পর এক টুকরো পৃথিবী নামে একটি উপন্যাস লিখলাম। ছাপা হলো জনকণ্ঠ পত্রিকায় ২০১৬ সালের ঈদ সংখ্যায়। আমার এক অগ্রজ কথাসাহিত্যিক বন্ধু বললেন, এটার দ্বিতীয় পর্ব লিখে ফেল। এখনও কাহিনী দানা বাঁধেনি। হয়ত এক দিন লিখব। চেন্নাই ভ্রমণ সম্পর্কে এক প্রতিষ্ঠিত বাংলা দৈনিক ২০১৭ সালের ঈদ সংখ্যায় ভ্রমণ কাহিনী চেয়েছিল। দিতে পারিনি, পরিবর্তে উপন্যাস দিয়েছি। ভিন্ন বিষয়ের ওপর। চেন্নাইয়ের স্মৃতি আমার মনের গভীরে দাগ কেটে রেখেছে। কন্যা কুমারী, ম্যারিন ড্রাইভ আরও কত ঐতিহাসিক জায়গায় পা রেখেছি। সে সব লিখতে বললে অনেক কথা, অনেক স্মৃতি। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নারী-পুরুষ। সব একাকার হয়ে গিয়েছিল। ছোট ছোট ঘটনা, কিন্তু হৃদয় ছুঁয়ে যায়। মানুষ কত অসহায় তার প্রত্যক্ষ পরিচয় পেয়েছি ভোলার ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতালে। এক তামিল, পেশায় চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট তার বাসা ভাড়া নিয়েছিলাম। অবসর সময়ের তার সঙ্গে গল্প হতো। এক ধরনের পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার ও তার পরিবারের সঙ্গে। ‘এক টুকরো পৃথিবী’ উপন্যাসে সে সব ঘটনা আঁকতে চেষ্টা করেছি। এখনও সেই ফেলে আসা জায়গাগুলো, মানুষগুলো দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সময় ও সুযোগ হয়ে ওঠে না। ত্রিশ বছর আগের মানুষগুলো কি এখনও ঠিকঠাক বেঁচে আছে। ওরা কী রকম বেঁচে আছে, কে জানে?
×