ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অসাধু ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা চাল নিয়ে চালবাজি শুরু করেছে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অসাধু ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা চাল নিয়ে চালবাজি শুরু করেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চাল নিয়ে রাজনীতি ও ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বন্যা ও রোগবালাইয়ের কারণে ফসলহানির পরেও এক কোটি ৯২ লাখ টন ধান ঘরে উঠেছে। এরপরও চাল নিয়ে দেশকে একটা বিভ্রাটের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে চাল নিয়ে চালবাজি হচ্ছে, চাল নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় চালের দামের উর্ধগতির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন তিনি। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় ওঠানোর চেষ্টা হচ্ছে। এটি হতে পারে না। চালের মূল্য বৃদ্ধির পর আমরা ট্যাক্স তুলে দিলাম। এরপর ভারত থেকে ৬ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে, যা ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের কাছে আছে। তারপরও চাল নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সরকারকে বিব্রত করাই এর উদ্দেশ্য। এ সময় চালের দামের উর্ধগতির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন তিনি আরও বলেন, দেশের কিছু অসাধু চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিক চাল নিয়ে চালবাজি শুরু করেছে। প্রতিমণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। তিনি যদি প্রতিমণ ধান এক হাজার টাকায় বিক্রি করতে না পারেন তাহলে কীভাবে চলবে? কিন্তু তাই বলে চালের দাম কি ৭০-৮০ টাকায় উঠবে? তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা চালবাজি ও ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছি। কারণ বাংলাদেশেই এক কোটি টন চাল আছে, তারপরেও এই অবস্থা। আমি মজুদদার, আড়তদার, মিল মালিকসহ সবার প্রতি আমি আহ্বান জানাব- এখনই ভাল হয়ে যান, সময় আছে। এখনও সময় আছে ভাল হয়ে যান। আপনারা যেভাবে (চালের) দাম বাড়াচ্ছেন, যেভাবে সিন্ডিকেট করে দেশে চালবাজি শুরু করেছেন, চাল নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন, একটা বিভ্রাট সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তা কোন অবস্থাতেই বরদাস্ত করা হবে না। এখনই শেষ সুযোগ আপনারা ভাল হয়ে যান। প্রসঙ্গত, হাওরে আগাম বন্যায় ফসলহানির পর দুই দফা বন্যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফসল নষ্ট হয়েছে। বেশ কয়েক মাস আগে বেড়ে যাওয়া চালের দাম গত কয়েক দিনে আরও বেড়েছে। চাল আমদানি শুল্ক ২৬ শতাংশ কমিয়ে দুই শতাংশে নামানোর পরেও চালের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। এরপর থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমার থেকে চাল আমদানির চুক্তি করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ভারত ও ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানির চাল এলেও বাজারে দাম কমছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকির অভাবে চালের দাম বাড়ছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করে আসছেন। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বিগত কয়েক মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কোনও তৎপরতাও চোখে পড়েনি। এবার এক কোটি ৯১ লাখ টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল বলেন, বন্যা ও রোগবালাইয়ে দেশে ২০ লাখ টন ফসল নষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা চাল নিয়ে চালবাজি করছেন। এবার এক কোটি ৭০ লাখ টন বোরো ধান পাওয়ার কথা জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এসব ধান আমাদের ঘরেই আছে, আরও ২২ লাখ টন আউশ ধান পেয়েছি। ফসলহানির পরেও ১ কোটি ৯২ লাখ টন ধান আমাদের ঘরে এসেছে। কাজেই সব ধান তো চলে যায়নি, চাল তো আছে। দেশে দিনে ৮৫ হাজার টন চাল লাগে জানিয়ে কামরুল বলেন, গত চার মাসে আমরা ১ কোটি ২ লাখ টন চাল খেয়েছি। আরও এক কোটি টন চাল দেশে আছে। হয় মিল মালিক, আড়তদার, না হয় ছোট-বড় ব্যবসায়ী-কারও না কারও বাড়িতে এসব চাল আছে। এরপরেও চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়ে যাবে, এটা হওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না। বেসরকারীভাবে ১৭ লাখ টন চাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ৩৪ টাকা দরে সাড়ে ১২ লাখ টন বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও মাত্র আড়াই লাখ টন সংগ্রহ হওয়ায় চাল আমদানি করতে হচ্ছে। ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী কামরুল বলেন, ইতোমধ্যে ভিয়েতনামের এক লাখ ৫৪ হাজার টন চাল গোডাউনে ঢুকেছে। বাকি চাল খালাসের অপেক্ষায় সমুদ্রে আছে। কম্বোডিয়া থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি চুক্তি হয়েছে। এলসি হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে এসব চাল দেশে আসবে। মিয়ানমানের একটি প্রতিনিধি দল রবিবার বাংলাদেশে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি, তাদের সঙ্গে দুই লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হবে। ভারত বাংলাদেশে চাল রফতানি তিন মাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ছড়িয়ে পড়া খবরের সত্যতা এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী। সরকারী বিতরণ ব্যবস্থায় চালের কোন সঙ্কট নেই দাবি করে কামরুল বলেন, আমদানির চাল এক ছটাকও বাইরে (বাজারে) যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমার কাছে চালের যে মজুদ আছে তাতে (সরকারী বিতরণ ব্যবস্থায়) কোন সমস্যা হবে না। গোডাউনে চাল থাকা না থাকার সঙ্গে মার্কেটের কোন সম্পর্ক নেই। আগামী রবিবার থেকে সব বিভাগীয় ও জেলা শহরে ওএমএস (খোলা বাজারে বিক্রি) চালু হবে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কতদিন পর্যন্ত চলবে তা বলতে পারছি না, যতদিন পর্যন্ত প্রয়োজন ততদিন বহাল থাকবে। আগের মতই ওএমএসে ১৫ টাকা কেজিতে চাল এবং ১৭ টাকা কেজিতে আটা বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ী সমিতির নেতা এবং চাল আমদানিকারকদের ডেকেছেন জানিয়ে কামরুল বলেন, এই সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী এবং কৃষিমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, র‌্যাব রশিদের মিলে হানা দিয়ে ৫০ হাজার টন চাল জব্দ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আছে।
×