ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর বিশাল জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী ;###;উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে আবারও নৌকায় ভোট দিন;###;আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয় আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে জঙ্গীবাদ বাংলা ভাইদের উত্থান ঘটে, লুটপাট হয়

আওয়ামী লীগ যখন আছে ইনশাল্লাহ ॥ দারিদ্র্য থাকবে না

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আওয়ামী লীগ যখন আছে ইনশাল্লাহ ॥ দারিদ্র্য থাকবে না

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ পদ্মা বিধৌত বিভাগীয় শহর রাজশাহী নগরীর অদূরে জেলার পবার উপজেলার হরিয়ান চিনিকল মাঠের বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে হবে। তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার তার সব করা হবে। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে জনসভায় যোগ দেয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাজশাহীতে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক, পদ্মার ভাঙ্গন রোধে বাঁধ নির্মাণ করাসহ গত ৯ বছরে রাজশাহীর উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, আমার কাছে দাবি করার প্রয়োজন নেই। আমি জাতির জনকের কন্যা। আমি জানি কিভাবে উন্নয়ন করতে হয়। সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ থাকবেÑতা হলো আওয়ামী লীগ আপনাদের সংগঠন। এই আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সংগ্রাম করে আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, যখন নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের উন্নয়ন হয়। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে কি হয়? সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, বাংলা ভাইদের উত্থান ঘটে, মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায়। এমন কি জনগণের টাকা, এতিমখানার টাকাও তারা চুরি করে খায়, বিদেশে তারা বিত্ত বৈভব বাড়ায়। এটাই তাদের চরিত্র। জনগণের সম্পদ লুট করে নিজেরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে। রাজশাহীর পবা উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। এ আওয়ামী লীগ যখন আছে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশে কোন দারিদ্র্য থাকবে না। আজকে বাংলাদেশে ৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে বাস করছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার দোয়া করবেন। আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীকে জয়যুক্ত করে সেবা করার সুযোগ দেবেন। তাহলেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, লুটেরা বিএনপি-জামায়াত যারা সন্ত্রাসের সৃষ্টি করেছে, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করেছে, তারা ক্ষমতায় এলে এ দেশ জঙ্গীবাদের দেশ হবে, সন্ত্রাসের দেশ হবে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি রাজশাহীর সারদা থেকে সড়কপথে জনসভাস্থলে প্রবেশ করেন। এ সময় জনসভার বিশাল মাঠ ছাড়াও রাস্তার দুই পাশের বিপুল সংখ্যক মানুষ করতালির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে উপস্থিত হলে হাজারো মানুষের করতালি ও ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’Ñ স্লোগানে সেøাগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো জনসভাস্থল। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভাস্থল থেকেই একযোগে রাজশাহীর ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন ও ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। বক্তব্যে এসব উন্নয়ন প্রকল্পকে রাজশাহীর জন্য বিশেষ উপহার হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে তিনি বক্তব্য শুরু করে টানা ২৮ মিনিট বক্তব্য রাখেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই। কেউ মানুষ হত্যা করে বেহেস্তে যাবে না। তারা দোজখে যাবেÑএটাই ইসলামের শিক্ষা উল্লেখ করে তিনি অভিভাবকদের লক্ষ্য করে বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামে সন্ত্রাসের কোন সুযোগ নেই। আপনারা নিজেদের সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলুন। তাদের দিকে সজাগ দৃষ্টি দেন। সন্তানরা কি করছে তার খোঁজখবর নেন। মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, দেশে ৮০ ভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে। যেসব এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই সেসব এলাকায় সোলার বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের কোন জায়গা নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে জঙ্গীমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত করার আন্দোলন শুরু করেছিলেন। একটাই স্বপ্ন ছিল মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমারো একটাই লক্ষ্যÑ সে লক্ষ্য পূরণ করব। বিএনপি- জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা হত্যা, খুন, লুটপাট ছাড়া দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। শুধু লুটপাট করেছে। সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আর আওয়ামী লীগ মানে উন্নয়ন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে উন্নয়ন করে। দেশে এখন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। দেশ এগিয়ে চলেছে। বর্তমান সরকার শিল্পায়নের দিকে নজর দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাজশাহীতেও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। রাজশাহীর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় করেছি, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নির্মাণকাজ চলছে। জনসভা থেকে তিনি এ অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকা-েরও বর্ণনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন সবার হাতে মোবাইল। সর্বত্র ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বিএনপির আমলে মোবাইলে এক মিনিট কথা বলতে ১০ টাকা লাগত। এখন নামমাত্র টাকায় কথা বলা যায়। মাত্র ১ হাজার টাকার মধ্যে মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার উন্নয়নে বিনামূল্যে বই দিয়েছি। প্রি-প্রাইমারি শিক্ষা চালু করেছি। শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পাচ্ছ। দরিদ্র মায়েরাও উপবৃত্তি পাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য একটাই দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সকলের বাড়ি করে দেয়া হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরে এক সময় মঙ্গা ছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে উত্তরের মানুষের মঙ্গা চিরতরে দূর করেছি। কৃষির উৎপাদন বেড়েছে। কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নতুন নতুন উন্নয়ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারী কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এগুলোতে ৩০ ধরনের ওষুধ ফ্রি বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে ল্যাপটপ দিয়েছি। সর্বাত্মক উন্নয়ন কাজ করে চলেছি। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। দেশে কোন দারিদ্র্য থাকবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ভোট দিলে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কথা তুলে ধরে বলেন, আমার সব ছিল। বাবা-মা-ভাই ছিল। এখন কেউ নেই। বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়স্বজন এমনকি ১০ বছরের শিশু রাসেলকেও তারা বাঁচতে দেয়নি। তারা আমার বাবাসহ সপরিবারে হত্যা করেছে। আমি আর আমার বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই। কিন্ত আমাদের দেশে আসতে দেয়া হয়নি। ৬ বছর আমাদের দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে। বাবা চেয়েছিলেন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। আমারো লক্ষ্য তাই। বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত করব। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তার সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করছে। বিনা পয়সায় দেয়া হচ্ছে বই। দেশের এক কোটি ৭৩ লাখ শিক্ষার্থী এখন সরকারের বৃত্তি পাচ্ছে। এক কোটি ৩০ লাখ মায়ের মোবাইলে চলে যাচ্ছে বৃত্তির টাকা। ২৮ মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের কথা তুলে ধরেন। ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই মেয়াদে রাজশাহীর কি কি উন্নয়ন হয়েছে, তাও তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আগামীতেও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদেরই ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে। সভায় অন্যদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি ও আয়েন উদ্দিন এমপি। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল হক, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন আসনের এমপি এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর অগে প্রধানমন্ত্রী মোট ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছেÑ বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক। রাজশাহী মহানগরীর নবীনগর এলাকায় ৩১ দশমিক ৬৩ একর জমিতে ২৩৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কটির নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এছাড়া ‘তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারী কলেজ (আইসিটি) সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গুলগোফুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের চারতলা এ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। একই প্রকল্পের আওতায় মোহনপুর উপজেলার পাকুড়িয়া কলেজ, বাগমারার মাড়িয়া কলেজের চতুর্থতলা এ্যাকাডেমিক ভবন, চারঘাট টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, তানোরের চান্দুড়িয়া এলাকার ডাঃ আবু বকর হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজের এ্যাকাডেমিক ভবন, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের ভবন নির্মাণ, রাজশাহী মহানগরীর সোনাইকান্দি থেকে বুলনপুর পর্যন্ত শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প, গোদাগাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, রাজশাহী নগরীর তালাইমারী চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কয়ার নির্মাণ, নগরীর কোর্ট স্টেশন থেকে বাইপাস এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটোর বাইপাস পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্তকরণ, রাজশাহী সরকারী শিশু হাসপাতাল, বারনই আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প, প্রান্তিক আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প, রাজশাহী মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানকে দুর্যোগ ঝুঁকি সংবেদনশীলকরণ প্রকল্প, পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারের ছয়তলা ভবন ও বাগমারা উপজেলা পরিষদের হলরুম। পুলিশকে সততার সঙ্গে আইনরক্ষকের ভূমিকা পালনের তাগিদ এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে রাজশাহীর সরদায় পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছেন। সেখানে শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি সেখানে ভাষণ দেন। এখানে পুলিশ বাহিনীকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আইনের রক্ষকের ভূমিকায় থাকতে হবে উল্লেখ করে পুলিশকে আরও পেশাদার ও জনবান্ধব হয়ে কাজ করার তাগিদ দেন। নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি জোর দিতে হবে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। ৩৪তম বিসিএসের ১৪১ কর্মকর্তা পুলিশ অফিসার হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করছেন। এর মধ্যে ২৬ জন নারী রয়েছেন। নতুন এ পুলিশ কর্মকর্তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই মুহূর্তে দেশমাতৃকাকে ভালবেসে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর বিশেষ অবদানের কথা উল্লেখ করে পূর্বসূরিদের অনুসরণ করতে নতুন পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে রাজারবাগ থেকে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে পুলিশ বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে সারদা পুলিশ একাডেমিরও বিশেষ ভূমিকা আছে। এখানে ২৪ জন কর্মকর্তা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে জীবন দেয়া সব পুলিশের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের মাগফেরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার পর পুলিশ বাহিনীকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম দক্ষ করে গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেছিলেন। আর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য প্রথম দরকার আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা। এ জন্য আমরা সর্বোতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পুলিশ বাহিনীকে দক্ষ ও আধুনিক করে গড়ে তুলতে। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে সে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। এ সময় তিনি পুলিশের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের বিবরণ তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা জানান, পুলিশ যেন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে পারে এ জন্য তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তাদের পদ-পদবিও উন্নীত করা হয়েছে। পুলিশের কল্যাণে সরকারের আরও অনেক কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় পুলিশকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশকে আরও উন্নত, পেশাদার ও জনবান্ধব করার প্রক্রিয়া চলছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক কে এম শহীদুল হক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলের সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহ আগে থেকেই রাজশাহীর চারদিকে সাজ সাজ রব পড়ে। ব্যানার ফেস্টুনে ভরে যায় সর্বত্র। উন্নয়নের প্রতীক নৌকা সম্বলিত হাজারো তোরণ। স্লোগানে স্লোগানে ভরা পোস্টার। মাইকিংয়ে মুখরিত জনপদÑ এ যেন ভোটের আমেজ সর্বত্র লক্ষ করা যায়। সকাল থেকে মানুষের স্রোত নামে রাজশাহী চিনিকলের (হরিয়ান) বিশাল মাঠে।
×