ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আফসারা তাসনিম

নীল বর্ণের চোখের কারণ পূর্বপুরুষ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নীল বর্ণের চোখের কারণ পূর্বপুরুষ

বাদামি থেকে সবুজ, চোখের বিভিন্ন রং আইরিসে মেলানিনের পরিমাণের তারতম্য দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। কিন্তু নীল চোখের স্বাতন্ত্রতার অধিকারীদের চোখে মেলানিনের পরিমাণ ভিন্নতার মাত্রা খুব কমই হয়ে থাকে। নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, নীল চোখ বিশিষ্ট সকল মানুষের একজন সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিল। ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহেগেন এর একটি দল এমন একটি জেনেটিক মিউটেশনের সন্ধান পেয়েছে যা আজ থেকে ৬-১০ হাজার বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল এবং বর্তমানে এই গ্রহে বসবাসরত প্রতিটি নীল চোখের মানুষের চোখের বর্ণের কারণ। জেনেটিক মিউটেশন কোষীয় এবং আণবিক বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হান্স আইবার্গের মতে, ‘শুরুতে আমরা প্রতেক্যেই বাদামি চোখের অধিকারী ছিলাম। কিন্তু একটি জেনেটিক মিউটেশন আমাদের ক্রোমসোমের ওসিএ২ জিনকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যার ফলস্বরূপ এক ধরনের ‘সুইচ’ সৃষ্টি হয়, যা বাদামি রঙের চোখ সৃষ্টির সক্ষমতাকে আক্ষরিকভাবে বন্ধ করে দেয়।’ ওসিএ২ জিন তথাকথিত পি প্রোটিনের কোডিং করে থাকে, যা মেলানিন উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এই মেলানিন এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ যা মানুষের চুল, চোখ ও ত্বকের রঙের জন্য দায়ী। তবে ওসিএ২ সংলগ্ন জিনে অবস্থিত এই ‘সুইচ’ সম্পূর্ণভাবে জিনটাকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় না, বরং এর ক্রিয়াকর্মকে সীমাবদ্ধ করে দেয়। যার ফলে আইরিসে মেলানিন উৎপাদন হ্রাস পায়Ñ যা কার্যকরীভাবে বাদামি চোখকে ‘তরলিত করে’ নীল করে তোলে। অতএব ওসিএ২ জিনের উপর ‘সুইচ’-এর প্রভাব খুবই নির্দিষ্ট। যদি ওসিএ২ জিন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস বা এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হতো, তবে মানবজাতির চুল, চোখ এবং ত্বকের রং মেলানিনহীন হতো। এ অবস্থাকে ‘এলবিনিজম’ বলা হয়। সীমিত জেনেটিক পরিবর্তন সকল নীল চোখ বিশিষ্টরা একই পূর্বপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কিত বলেছেন অধ্যাপক আইবার্গ। তিনি বলেন, ‘বংশানুক্রমে তাদের প্রত্যেকেরই ডিএনএ এর ঠিক একই জায়গায় একই সুইচ রয়েছে।’ অন্যদিকে, বাদামি চোখধারীদের ডিএনএ এর যে অংশ মেলানিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে সে অংশে উল্লেখযোগ্য বিশেষ ভিন্নতা পাওয়া যায়। অধ্যাপক আইবার্গ এবং তার দল মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ পরীক্ষা করেন এবং জর্ডান, ডেনমার্ক, তুরস্কের মতো বৈচিত্র্যময় দেশগুলোর নীল চোখধারীদের মধ্যে তুলনা করে দেখেন। জেনেটিক গবেষণার এক দশকে তার আবিষ্কার সর্বশেষ বলে বিবেচিত, যা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে যখন আইবার্গ প্রথম অনুমান করেন চোখের বর্ণের জন্য ওসিএ২ জিন দায়ী। প্রকৃতি জিন অদলবদল করে বাদামি চোখ থেকে নীল চোখের পরিব্যক্তি ইতিবাচক বা নেতিবাচক-কোন পরিবর্তনেরই প্রতিনিধিত্ব করে না। এটি স্বাভাবিক এক ধরনের মিউটেশন, যা মানুষের টিকে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি বা হ্রাস কোনটাই করে না। এ সম্পর্কে অধ্যাপক আইবার্গ বলেন, ‘এটা কেবল দেখায় যে প্রকৃতি মানব জিনোমে ক্রমাগত অদলবদল আনতে থাকে, যার ফলে মানুষের ক্রোমসোমে এক জেনেটিক মিশ্রণের সৃষ্টি হয়। এমনটি করার মাধ্যমে প্রকৃতি বিভিন্ন পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে। সূত্র : সায়েন্স ডেইলি
×