ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেনজির আবরার

এক অগ্রগামী নারী

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

এক অগ্রগামী নারী

ছোটবেলা থেকেই উদ্যমী। তবে মাকে খুব ভয় পেতাম। কিছু করার আগে হাজার বার ভাবতাম মা যদি বকা দেয়! তাইতো উচ্চমাধ্যমিকের পর লুকিয়ে আইইএলটিএস দিলাম। ছোট খালাকে সঙ্গে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করলাম কাউকে না জানিয়ে। ভিসা হওয়ার পর কারও আর কিছু বলার থাকল না। চলে গেলাম বাবা মা ছেড়ে হাজার হাজার মাইল দূরে। শুরু হয় আমার অল্প অল্প করে বড় হওয়া, নিজের কাজ নিজের করা আর একটু একটু করে পৃথিবীকে জানতে শেখা। এক এক করে অনার্স করলাম আইটি তে, পোস্টগ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ও মাস্টার্স করলাম ম্যানেজমেন্টে। সবশেষে এমবিএ করি বিজনেস ম্যানেজার হিসেবে প্রোমোশন পাওয়ার পর। এমনটাই বলছিলেন প্রবাস জীবনে বাড়ি ভাড়া, থাকা-খাওয়াসহ নিজের যাবতীয় খরচ যোগানোর তাগিদে এইসব পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকেই গড়ে ওঠা সুদীর্ঘ ১২ বছরের সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার রেজওয়ানার। তিনি জানালেন, তার কর্মজীবন শুরু হয় কাস্টমার সার্ভিস অপারেটর হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় রিটেইলার ‘টার্গেট অস্ট্রেলিয়া’ তে আর ধীরে ধীরে সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি বিজনেস ম্যানেজার হিসেবে। তৃতীয় বিশ্বের এক অনুন্নত দেশ থেকে আসা ভিন্ন বর্ণের একজন নারী হয়ে এত দূর পথ পারি দিতে মুখোমুখি হয়েছি অনেক প্রতিকূলতার, কিন্তু কখনও দমে যাইনি একটুও। এর মাঝে আরও বর্ণিল হয়ে বেড়ে ওঠে তার অভিজ্ঞতার ঝুড়ি। রেজওয়ানা বললেন ‘ফুল টাইম কাজ আর ফুল টাইম স্টূডেন্ট হিসেবে পড়াশোনা কোন কিছুতেই হার মানিনি। তবে জীবনের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় আঘাতে আমি ভেঙ্গে পড়ি যখন আমি আমার মাকে হারাই। তখন সবেমাত্র বিজনেস ম্যানেজার হিসেবে অনেক বড় দায়িত্ব নিয়েছি, আর সাহস করে এমবিএ তে ভর্তি হয়েছি। মাকে হারানোর এক অপার্থিব কষ্টে আমার পৃথিবীটাই এলোমেলো হয়ে যায়। অবর্ণনীয় এক কষ্ট বুকে নিয়ে আমি আমার এমবিএ শেষ করে দেশে ফিরে আসি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করতে যাব, ঠিক তখনই অদ্ভুত এক প্রশ্ন জাগে আমার মনে, আমি কেন আমার সব শিক্ষা, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা অন্যকে দিতে যাব? একটা বিজনেস কিভাবে মার্কেট এ উপস্থাপন করতে হয়, কিভাবে বিজনেস পজিশন তৈরি করতে হয়, বিজনেস এর স্ট্র্যাটেজিক এ্যানালাইসিস, এ্যাকাউন্টিং, স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্সিং সবই আমার জানা, তাহলে নিজেই একটা শুরু করি না কেন?’ এখন কেবল পালা এই ভাবনাকে বাস্তবে নিয়ে আসা। বড় খালার প্রবল উৎসাহ আর বাবার টাকা এই দুটোকে পুঁজি করে নেমে পড়ি অনলাইন অর্নামেন্টসের বিজনেস এ। সবচেয়ে আধুনিক আর যুগোপযোগী চাহিদা অনুযায়ী নিজের তৈরি ডিজাইন, আমার নিজের হাতে বাছাই করা উপকরণ আর দক্ষ কারিগর এর সমন্বয়ে গড়ে তুলি আমার ‘রেজ জুয়েলারি’। আজকে আমার রেজ জুয়েলারিতে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে তিন জন দক্ষ কারিগর আর চার জন ডেলিভারি এ্যাসিস্ট্যান্ট। কেবল দুটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে আজ আমার রেজ জুয়েলারি সফলতার শিখরে দাঁড়িয়ে– অনন্য ডিজাইন আর কাস্টমার সার্ভিস। আমি কখনোই একই ডিজাইনে দুটির বেশি গয়না বানাই না এবং বাইরের কোন দোকানে আমার ডিজাইন পাওয়া যবে না। সর্বোপরি, আমি কখনোই আমার কাস্টমারদের কোন অভিযোগ করার কোনরকম সুযোগই দেই না। তাই আজ আমার রেজ জুয়েলারির পণ্য আমি পৌঁছে দিতে পেরেছি আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিশ্বের অনেক দেশে। আশা করছি এভাবেই আমার ক্রেতাদের ভালবাসা আর আস্থা নিয়ে রেজ জুয়েলারিকে ছড়িয়ে দিতে পারব আরও বড় পরিসরে- নিজের স্বপ্ন নিয়ে এমনটাই জানাচ্ছিলেন রেজওয়ানা।
×